সৌদি আরবের শ্রমআইনে এক বছরে ৬ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে নতুন যেসব কর্মী যাবেন, তাদের সবশেষ পরিবর্তিত শ্রম আইনের আওতায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকরা যেমন কিছু সুবিধা পাবে ঠিক তেমন কিছু সমস্যায়ও পড়বে।
সৌদি আরবের নতুন শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিকের কর্মঘণ্টা হবে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৪০ ঘণ্টা। কর্মীদের সঠিক তথ্য ও যথাযথ কাগজপত্র দেয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে সবশেষ সংশোধিত আইনে। প্রত্যেকেরই আঙুলের ছাপ লাগবে। এছাড়া কোনো অপরাধী যেন শ্রমিক হিসেবে যেতে না পারে সে বিষয়েও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর কোনো এজেন্সি কর্মী পাঠালে কর্মী প্রতি দৈনিক ১০০ রিয়েল জরিমানা করা হবে ঐ এজেন্সিকে। এছাড়া এজেন্সির সঙ্গে দেশটির সরকারের চুক্তিতেও কিছু রদবদল আসছে। পাশাপাশি রি-এন্ট্রি ভিসার নিয়মেও পরিবর্তন এসেছে। দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে আরব নিউজ এসব খবর জানিয়েছে।
সৌদির শ্রমবাজার কমিটির প্রধান মুনসুর বিন আবদুল্লাহ আল শাতরির বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শ্রমঘণ্টা কমলেও সাপ্তাহিক বেতন আগের মতোই থাকবে বলে প্রবাসীদের প্রকৃত বেতন বাড়বে। অভিবাসন বিশ্লেকরা বলছেন, বাজার ধরে রাখতে হলে নিয়োগকারী দেশের আইন মেনেই কর্মী পাঠাতে হবে। সৌদি সরকার জানিয়েছে, দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি করতে চাইলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঠিক তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সৌদি গেজেট বিভিন্ন নিয়মের কথা জানায়।
আরবের শ্রম দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল সাদ জানান, রি-এন্ট্রি ভিসায় সৌদি ছাড়ার অর্থ হচ্ছে নিয়োগকর্তার ইচ্ছায় তারা আবার কাজে যোগ দেবেন; কিন্তু এই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অনেকেই ফিরে আসেন না। সৌদি সরকারের বরাত দিয়ে আরব নিউজ জানায়, শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে এই রি-এন্ট্রি ভিসার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এটি আবাসন আইনেরও একটি অংশ ছিল। এর মাধ্যমে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী। দেশে এ নিয়ে নিবন্ধন চলছে, যদিও নারী কর্মীদের সাড়া মিলছে না। তবে নির্ধারিত সময় পার করে কোনো এজেন্সি কর্মী পাঠালে কর্মী প্রতি দৈনিক ১০০ রিয়েল জরিমানা গুনতে হবে, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার টাকা। এই কর্মী নিয়োগের জন্য একশ‘ এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এক বার্তায় সৌদির শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মনোনীত এজেন্সিগুলো গৃহকর্মী সরবরাহে বেশি দেরি করলে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার রিয়েল বা ৬০ হাজার টাকাও হতে পারে। সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানানো হয়েছে, গৃহকর্মী নিয়োগে চুক্তিপত্রে সই করার সময় নিয়োগকারী এজেন্সিকে মোট খরচের ২৫ শতাংশ অগ্রিম দিতে হবে। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে হবে পূর্ণ নিয়োগের সময়। আর শেষ পর্যন্ত যদি এজেন্সি কর্মী দিতে ব্যর্থ হয়, তবে ওই এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিপত্রও বাতিল হয়ে যাবে।
জানা গেছে, নিয়োগকর্তার কাছে গৃহকর্মী বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময়সীমাও বেধে দিয়েছে সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, এজেন্সিকে নিয়োগকর্তার কাছে চুক্তির ৬০ দিনের মধ্যে গৃহকর্মী সরবরাহ করতে হবে। আর সেটি করতে ব্যর্থ হলে এজেন্সিকে দৈনিক ১০০ রিয়েল করে জরিমানা গুনতে হবে। আরও বলা হয়েছে, বেধে দেওয়া সময়ের পরও এজেন্সি যদি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে গৃহকর্মী দিতে না পারে তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তিপত্র বাতিল হবে। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার দেওয়া সব টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে এজেন্সি।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানান, দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক উদ্যোগের সফলতা আসছে। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে এ বছরই সৌদি আরবের শ্রমবাজারে গতি আসবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমরা গৃহকর্মীদের নাম নিবন্ধন করছি। সৌদি সরকার চাইলেই তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে সে দেশে পাঠাতে পারবো‘।