প্রখ্যাত মার্কিন লেখক এডগার অ্যালান পোর এক গল্পে একটি চরিত্রের মাথা কাটা পড়ে। হতবুদ্ধি বন্ধুরা তখন সেই মাথাবিহীন দেহটাকেই বাঁচানোর চেষ্টা চালায় ও ব্যর্থ হয়। মাথা না থাকলে বেঁচে থাকা অসম্ভব। কাজেই যখন দেখবেন, জলজ্যান্ত একজন মানুষ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং দুই হাত দিয়ে ধরে আছে তার নিজেরই খণ্ডিত মস্তকখানা, পিলে চমকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক!
অবশ্য খণ্ডিত মাথা বলতে একেবারে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মাথার কথা বলা হচ্ছে না। এই জাদুর ক্ষেত্রে দর্শক দেখতে পান, জাদুকরের মাথাটা নিচু হয়ে নেমে এসেছে একদম বুকের মাঝামাঝি অংশে। বাস্তবে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কিন্তু নিজের মাথা সটান দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বুকের মাঝামাঝি আনা সম্ভব না। অথচ এ ক্ষেত্রে জাদুকর যে দিব্যি বহাল তবিয়তে থাকেন তা-ই নয়, খানিক পরে মাথাটা ঠেলে আবার স্বস্থানে বসিয়েও দেন। যেন স্থানচ্যুত মাথা নিয়ে এই হাঙ্গামা পোহানোটা তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক অভ্যাস।
তাহলে কী এই জাদুর রহস্য? কিভাবে জাদুকর নিজের মাথা নিয়ে এমন হেলাফেলা করেন? আর কিভাবেই বা অমন বিদঘুটেভাবে মাথা স্থানচ্যুত হওয়ার পরও দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক থাকেন? এর পেছনের রহস্যটা কিন্তু খুবই সাধারণ।
এ ক্ষেত্রে জাদুকরকে তিন প্রস্থ পোশাক পরতে হয়। প্রথমে একই রং ও মাপের দুটি শার্ট (ভেতরের শার্টটাকে প্রথম ও ওপরের শার্টটাকে দ্বিতীয় বলা যাক) এবং তার ওপরে গাড় রঙের জ্যাকেট পরে নেন জাদুকর। দ্বিতীয় শার্টের সামনের দিকে জাদুকরের বুক পর্যন্ত ইংরেজি ‘ভি’র আদলে কাটা থাকে। আর দুই শার্টের মধ্যে থাকে একটা মামুলি কোট ঝোলানোর হ্যাঙার। জাদুকর নিজের পোশাকের মধ্যে এমনভাবে লুকিয়ে রাখেন যে ওটার উপস্থিতি বাইরে থেকে বোঝা যায় না।
এবার শুরু হয় আসল অংশ। জাদুকর প্রথমে দু-একটা সাধারণ জাদু দেখিয়ে দর্শকদের কিছুটা তাক লাগান। এরপর হঠাৎ বেদম হাঁচি দিতে শুরু করেন। হাঁচির দমকেই বোধ হয় একসময় দর্শক দেখেন, জাদুকরের মাথাখানা নেমে এসেছে বুকের মাঝামাঝি অংশে। এখানেই লুকিয়ে আছে সব রহস্য। জাদুকর হাঁচি দিতে দিতেই মাথার পেছনের অংশে হাত বুলাতে থাকেন। তারপর সুযোগ বুঝে মাথাটা যতটা সম্ভব নিচু করে ফেলেন, একই সঙ্গে শার্টের আড়ালে লুকানো হ্যাঙারটি ধরে উঠিয়ে দেন কিছুটা। যেহেতু হ্যাঙারটির ওপর একটা শার্ট আর একটা কোট থাকে, দর্শকরা কিন্তু এর উপস্থিতি বুঝতে পারেন না। ফলে খালি চোখে মনে হয় জাদুকরের মাথাখানা বোধ হয় স্থানচ্যুত হয়ে বুকের মাঝামাঝি অংশে ঝুলে পড়েছে।
এরপর আর কি, দর্শকদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে দিয়েই জাদুকর নিজের ‘স্থানচ্যুত’ মাথাখানা ঠেলে আবার যথাস্থানে বসিয়ে দেন। একই সঙ্গে সবার অলক্ষ্যে হ্যাঙারখানাও নামিয়ে দেন। হতবুদ্ধি দর্শকরা দেখেন, জাদুকর দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক আছেন।
এই জাদুটা অবশ্য বেশ দ্রুত করতে হয়। দর্শকদের কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া চলবে না যে জাদুকর নিজের পিঠের দিকে একটা হ্যাঙার লুকিয়ে রেখেছেন। এই জাদুতে হ্যাঙারখানার ভূমিকাই আসলে সব। কারণ ওটা দিয়েই তো জাদুকর দর্শকদের মনে বিভ্রম সৃষ্টি করেন।
জাপানি জাদুকর সিরিল তাকায়ামা এই জাদু দেখিয়ে এককালে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন। ইদানীং অবশ্য রাস্তাঘাটেও কেউ কেউ এই জাদু দেখিয়ে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেন।
লিখেছেনঃঅমর্ত্য গালিব চৌধুরী।
http://www.kalerkantho.com/feature/mogoj-dholai+/2017/04/23/489660