ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ

Author Topic: ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ  (Read 1055 times)

Offline Md. Abul Bashar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 174
  • Test
    • View Profile
ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ
« on: July 12, 2017, 03:01:26 PM »
ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ

দুনিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও মুসলিমবিরোধী তীব্রতা লক্ষ করলে মনে হয় ইসলাম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যকার শতাব্দী-পুরনো ক্রুসেডের লাভা পশ্চিমা বিশ্বের কিছু বুদ্ধিজীবীর মাথায় গভীরভাবে চেপে বসেছে। ইসলাম তাদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। তাই তারা ইসলামের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য পশ্চিমারা আধা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে তারা নানা অমূলক প্রচারণার জালে ইসলামকে উগ্রতা বা চরমপন্থার সাথে মিলিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলামকে তারা সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীল ইত্যাদি বলে গালমন্দ করে চলেছে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা যারা ইতিহাস সম্পর্কে জানি, তাদের কাছে স্পষ্ট যে, মৌলবাদের মতো উগ্রতা বা চরমপন্থার জন্মই হয়েছিল পশ্চিমা সমাজে। এক সময় তারা নিজেরাই ছিল সন্ত্রাসের সাথে জড়িত। আর আজো আধুনিক কায়দায় এসব সভ্যতা
বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসের মাধ্যমে দুনিয়াকে অস্থির করে রেখেছে। সন্ত্রাসের ভিত্তি প্রথমে রচিত হয়েছিল
ইউরোপে। ওই সব দেশের ধর্মীয় বিকৃতির ফসল হিসেবে সন্ত্রাস সমাজ ও রাষ্ট্রকে টেনে এনেছিল। যাদের
ধর্মের শিক্ষা ছিলÑ কেউ যদি তোমার কোনো একগালে চড় মারে, তাহলে তুমিও অগ্রসর হও এবং তার
অপর গালে আঘাত করো। অথচ বিপরীতপক্ষে আমরা দেখি, ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই। এখানে যুদ্ধের খাতিরে যুদ্ধ কিংবা জিহাদের খাতিরে তলোয়ার চালোনোর কোনো ঘটনার অস্তিত্ব
নেই। যারা নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে কিংবা মানবজমিনে হানাহানি বা ফাসাদ ছড়ায় ইসলাম তাদেরকে মানবতার শুত্রু বলে গণ্য করে। অথচ উগ্র পশ্চিমাজগত এবং অবিশ্বাসীরা এ কথা প্রচার
করে বেড়াচ্ছে যে, ইসলামে জিহাদ একটি জঘন্য ঘৃণিত বিষয়। তাদের ভাষায়, জিহাদ জোর করে ইসলাম
প্রসারের একটি অস্ত্র মাত্র। ইতিহাসের বহুল প্রমাণিত সাক্ষ্য হচ্ছে, মানুষ সবসময় অন্যায়-অবিচার এবং
স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠকে উচ্চকিত করেছে, প্রতিবাদ করেছে। যেখানেই মানবাধিকার
লঙ্ঘিত হয়েছে অথবা ন্যায়বিচারের অভাব ঘটেছে মানুষ সেখানেই নিরুপায় হয়েই প্রতিবাদের ভাষা
ব্যবহার করেছে অথবা ধ্বংসাত্মক পথে পরিচালিত হতে বাধ্য হয়েছে। আমরা পৃথিবীর সাম্প্রতিককালের গণযুদ্ধ, বিরোধ-হানাহানি, দুর্যোগ, বিশৃঙ্খলা কিংবা অরাজকতার ঘটনাগুলোর প্রতি আলোকপাত করলে
দেখতে পাবো, এসব ঘটনার মূলে আছে রাষ্ট্রপরিচালিত সন্ত্রাস, অত্যাচার-নিপীড়ন এবং শাসকদের উগ্র ও
অমানবিক আচরণ। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের রক্তক্ষয় এবং গণহত্যার কারণ হলো সেখানকার সামরিক শাসক ও রাজনৈতিক নেতাদের একনায়ক ও স্বৈরাচারমূলক ব্যবহার। তারা জনগণের অধিকার হরণ করে নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থ ও উগ্র ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে বেছে নেয় হত্যা ও নিপীড়নের পথ। শাসকরা সুবিচার প্রতিষ্ঠা এবং শোষণ ও নিপীড়ন দমন করতে ব্যর্থ হয়ে বরং চরম উগ্রতার পরিচয় দিচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা অত্যাচার ও দমন-পীড়নের অস্ত্রকে শেষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এই অসহায় অবস্থায় ওইসব দেশ, এলাকা বা জনপদের মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজ জেগে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। তারা তখন শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবস্থার পরিবর্তন চাইলেও তার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে চরম হতাশার কবলে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয় সামাজিক অস্থিরতা। এভাবে একটি অন্যায় বা অবিচারের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা বাধ্যতামূলক প্রতিরোধকারী সমাজকে উগ্র বা সন্ত্রাসী বলার কোনো সুযোগ নেই। এমনটা বলাও
নেহাত অন্যায়। বরং এই অসুন্দর কাজটির জন্য শাসকগোষ্ঠীই দায়ী। সন্ত্রাস বিস্তারের অন্যতম কারণ হলো ন্যায়নীতিকে অস্বীকার করা। সরকার কিংবা প্রশাসন জনগণের ন্যায়বিচারের দাবি পূরণে সক্ষম না হলে তারা নিদারুণভাবে নিগৃহীত হয়। ফলে সরকার বা সমাজের পরিচালকদের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড ঘৃণা। আর তার থেকে জন্ম নেয় প্রতিশোধ স্পৃহাও। সন্ত্রাসের কতগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে।
সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। সরকারের দুর্বলতাগুলো পুঁজি করে জনগণের
সস্তা জনপ্রিয়তাকে অবলম্বন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসের পথ তৈরি করা হয়। এসব যারা করে তারা অনেক সময় আদর্শের কথা বলে বেড়ায়। তাদের অভিযোগগুলোও অনেক সময় বাস্তব বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় সরকার তাদের ব্যাপারে, তাদের পরিবার, গোত্র, সম্প্রদায় অথবা তাদের এলাকার বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করে থাকে। এই পরিস্থিতিতে নিগৃহীতজনগণ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। এভাবে অস্ত্রধারণকে পৃথিবীর কোনো কোনোধর্ম বিশেষ করে ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না। কেননা,ইসলাম অসহায় ও নিরীহ মানুষকে পুঁজি করে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা তৈরিকে পছন্দ করে না। বস্তুতপক্ষে,বস্তুতান্ত্রিক সমাজ এবং পশ্চিমা সভ্যতা এ ধরনেরসন্ত্রাসকে সমর্থন করে এবং এ কাজকে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এ ধরনের সমাজের নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতি এবং শিক্ষার কারণে ক্রমেই হয়ে ওঠে অনিয়ন্ত্রিত এবং বর্বর। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অর্থাৎ অস্ত্র সংস্কৃতি ও রক্তপাত ইত্যাদিকে মোটেই পছন্দ করে না। বরং ইসলাম সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ফ্যাসিবাদী তৎপরতা এবং সন্ত্রাসকে বিরোধিতা করে। আজকাল বীরত্বের নামে বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে রাষ্ট্রগুলো অনেক সাহসী ঘটনা পরিচালনা করে বা আগ্রাসন চালায়। অথচ ইসলামি ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনার অস্তিত্বই ছিল না। মজার ব্যাপার হলো, এ ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মানবতা, স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রের নামে পশ্চিমা
দেশগুলোতেই ঘটে থাকে। এর মধ্যে রাশিয়া, আমেরিকা, ভারতের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা মানসিক জগতে নাজিদের ভীতিময় নারকীয়তার অপছায়া প্রতিফলিত হচ্ছিল। তার পরক্ষণেই সমাজতন্ত্রের উত্থান ঘটল ব্যাপক আঙ্গিকে এবং এক ভয়ানক মূর্তিতে। এই দুই শক্তি
অবশেষে তাদের দুঃখজনক পরিণতির মুখোমুখি হতে হলো। এরপর পশ্চিমা বিশ্ব আবারো নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর সাক্ষাৎ পেল। নিঃসন্দেহে এটা ছিল সালাহউদ্দিন আয়ুবীর ঝলমলে তরবারির সেই ঝলকানি যার কাছে তৃতীয় রিচার্ডের নেতৃত্বাধীন সমগ্র খ্রিষ্টানজগত পরাজয় বরণ করেছিল। বীর আয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাস দখলমুক্ত করে শতাব্দীর কলঙ্ক থেকে মুসলিম জগতকে গৌরবের শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইসলামের এ স্বচ্ছ ইতিহাস সত্ত্বেও ইউরোপের ইহুদি মিডিয়া ইসলামকে এতটা ভয়ঙ্করভাবে চিত্রিত করে যে, মানবতার জন্য এক ভয়াবহ ও বিধ্বংসী পরিণাম ইসলাম ও তার অনুসারীদের পক্ষ হতে অপেক্ষা করছে।
বস্তুতপক্ষে, এটা ইতিহাসেরই এক ট্র্যাজেডি যে, কোনো জুলুমবাজ সরকার বা নেতৃত্ব এভাবেই তার
প্রতিপক্ষকে ভীতিজনকভাবে দাঁড় করায়, যাতে তার অভীষ্ট মতলব সহজে সাধিত হতে পারে। ইসলামকে যুগে যুগে অযথা মানবতার শত্রু বলে প্রচার করা হয়েছে। অথচ এর সাথে এ ধারণার কোনো সংস্র বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসলাম স¤পর্কে পশ্চিমা ভীতিকে ঔড়যহ খ. ঊংঢ়ধংরঃড় তার ঞযব ওংষধস ঞযৎবধঃ বইতে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এভাবেÑ ঞযব গঁংষরসং ধৎব পড়সরহম, ঃযব গঁংষরসং ধৎব পড়সরহম. ইসলামকে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িয়ে পশ্চিমারা তাদের স্বার্থ হাসিলের কু-মতলবে মেতে উঠেছে। যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইসলামি ব্যক্তি ও সংগঠনের সাথে জড়িয়ে ফেলার পশ্চিমা কৌশল সন্ত্রাসের মূল নির্ধারণের পথকে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে সন্ত্রাসীরাই আসলে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। এর পরিণাম হিসেবে সন্ত্রাস এখন বুমেরাং হয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দিকেই ফিরে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শান্তিপ্রিয় মানুষ। সুশীলসমাজ। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, পশ্চিমাদের এই অপকর্ম এবং ইসলামকে নিঃশেষ করার অপকৌশল মানুষ বুঝে উঠতে পারছে না। তবে আশার কথা হলো, সম্প্রতি সন্ত্রাস বা উগ্রতার সাথে ইসলামের যে দূরতম স¤পর্ক নেই তা ক্রমেই মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠছে। এ ব্যাপারে ইসলামপন্থীদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ইসলামের সুষমাকে তুলে ধরতে তাদেরও আরো সচেতন ও
বলিষ্ঠ হতে হবে।