হজযাত্রা: প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই

Author Topic: হজযাত্রা: প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই  (Read 3026 times)

Offline shaiful

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 63
    • View Profile
জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ আগস্ট পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। এ সম্পর্কে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল জলিল জানালেন, এবার যাঁরা হজে যাচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ, হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। হজের প্রশিক্ষণও নিতে হবে। হজ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য তথ্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় থেকে জানা যাবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বইপুস্তক বা পরিচিতদের কাছ থেকেও হজবিষয়ক তথ্য জানতে পারেন। আর হজের প্রয়োজনীয় তথ্য (www.hajj.gov.bd) ঠিকানায় পাওয়া যাবে।
হজে যাচ্ছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করুন: ‘হে আল্লাহ! আমার হজকে সহজ করো, কবুল করো’—দেখবেন, আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হজের দীর্ঘ সফরে ধৈর্য হারাবেন না। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখবেন, তাহলে অল্পতেই বিচলিত হবেন না।

হজে যাওয়ার আগে
পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট সংগ্রহ করুন ও তারিখ জেনে নিন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। নিয়ম মেনে ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন দিয়ে নিন। হজের নিয়ম জানার জন্য একাধিক বই পড়তে পারেন। চাইলে ‘প্রথম আলো হজ গাইড’ সংগ্রহ করতে পারেন। এটা (www.prothom-alo.com/hajj) থেকে ডাউনলোড করতে পারেন। অথবা যাঁরা পড়তে পারেন না, তাঁরা অন্য হাজিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। হজের কোনো বিষয়ে ভিন্নমত দেখলে ঝগড়া করবেন না। আপনি যে আলেমের ইলম ও তাকওয়ার ওপর আস্থা রাখেন, তার সমাধান অনুযায়ী আমল করবেন। তবে সে মতে আমল করার জন্য অন্য কাউকে বাধ্য করবেন না।

প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা দরকার। যেমন ১. পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, ২. পুরুষের জন্য ইহরামের কাপড় কমপক্ষে দুই সেট (প্রতি সেটে শরীরের নিচের অংশে পরার জন্য আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়। ইহরামের কাপড় সাদা, সুতি হলে ভালো হয়, আর নারীদের জন্য সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক পোশাকই ইহরামের কাপড়) ৩. নরম ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল, ৪. ইহরাম পরার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হলে কটিবন্ধনী (বেল্ট), ৫. গামছা, তোয়ালে, ৬. লুঙ্গি, গেঞ্জি, পাজামা, পাঞ্জাবি (আপনি যে পোশাক পরবেন), ৭. সাবান, পেস্ট, ব্রাশ, মিসওয়াক, ৮. নখ কাটার যন্ত্র, সুই-সুতা, ৯. থালা, বাটি, গ্লাস, ১০. হজের বই, কোরআন শরিফ, ধর্মীয় পুস্তক, ১১. কাগজ-কলম, ১২. প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চশমা ব্যবহার করলে অতিরিক্ত একটি চশমা (ভিড় বা অন্য কোনো কারণে ভেঙে গেলে ব্যবহারের জন্য), ১৩. বাংলাদেশি টাকা (দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য), ১৪. নারীদের জন্য বোরকা, ১৫. যত দিন বিদেশে থাকবেন, সেই অনুযায়ী নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ ওষুধ নেবেন, ১৬. মোবাইল ফোন সেট (সৌদি আরবে ব্যবহার করা যায়, তেমন সিম কিনে নিতে হবে), ১৭. মালপত্র নেওয়ার জন্য ব্যাগ অথবা স্যুটকেস (তালা-চাবিসহ) নিতে হবে। ব্যাগের ওপর ইংরেজিতে নিজের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর লিখতে হবে। এর বাইরে আরও কিছু প্রয়োজনীয় মনে হলে তা নিয়ম মেনে সঙ্গে নিতে হবে।

ঢাকার হজ ক্যাম্প
বিমানে যাত্রার আগে হজ ক্যাম্পে যত দিন অবস্থান করবেন, আপনার শরীর ও মালপত্রের প্রতি খেয়াল রাখবেন। কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি থাকলে অবশ্যই তা নিয়ে নিন। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে নিন।

ব্যাগেজ নিয়মকানুন
বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, যেমন রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নেওয়া যাবে না।

ইহরাম
আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়—তা জেনে নিন। যদি মদিনায় হয়, তাহলে এখন ইহরাম নয়ð; যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম করতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দায় পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা ইহরাম করার নির্দিষ্ট স্থান। বিমানে যদিও ইহরাম করার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও দৃষ্টিকটু। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। তদুপরি গুনাহ হবে। ইহরাম গ্রহণের পর সাংসারিক কাজকর্ম নিষেধ, যেমন সহবাস করা যাবে না; পুরুষদের জন্য কোনো সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি পরা বৈধ নয়; কথা ও কাজে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না; নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না; কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না; কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না; ক্ষতিকর সব প্রাণী মারা যাবে, ক্ষতি করে না এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।

ঢাকা বিমানবন্দর
উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মালপত্র দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মালপত্র রেখে এর টোকেন দিলে তা যত্ন করে রাখবেন। কারণ, জেদ্দা বিমানবন্দরে ওই টোকেন দেখালে সেই ব্যাগ আপনাকে ফেরত দেবে। ইমিগ্রেশন, চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র যত্নে রাখুন।
বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্নে রাখুন। সময়মতো বিমানে উঠে নির্ধারিত আসনে বসুন।

জেদ্দা বিমানবন্দর
বিমান থেকে নামার পর দেখবেন, একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। অবতরণ কার্ড, হেলথ কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি কাগজপত্র বের করুন। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার। ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবেন। বিমানের বেল্টে মালামাল খুঁজে নিরাপত্তা-তল্লাশির জন্য মালামাল দিন। তারপর মোয়াল্লেমের কাউন্টার। লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ পৌঁছাবেন।

হজ টার্মিনাল
হজ টার্মিনালের ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ গিয়ে অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে, ধৈর্য হারাবেন না। সেখানে অজু করা, নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। বসার জন্য চেয়ারও রয়েছে।
প্রতি ৪৫ জনের জন্য একটি বাসের ব্যবস্থা। মোয়াল্লেমের গাড়ি আপনাকে জেদ্দা থেকে মক্কায় যে বাড়িতে থাকবেন, সেখানে নামিয়ে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর (আরবিতে লেখা) কবজি বেল্ট দেওয়া হবে আপনাকে, তা হাতে পরে নেবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র (যাতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্টের নাম ইত্যাদি থাকবে) গলায় ঝোলাবেন। জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া পড়ুন (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...)।

মক্কায় পৌঁছানোর পর
 মক্কায় পৌঁছে আপনার থাকার জায়গায় মাল পত্র রেখে বিশ্রাম নিন। যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়, নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে দলবদ্ধভাবে ওমরাহর নিয়ত করে থাকলে ওমরাহ পালন করুন।
 মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) অনেক প্রবেশপথ আছে। সব কটি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশপথের নাম আছে, যেমন ‘বাদশা আবদুল আজিজ প্রবেশপথ’। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হবেন। সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরে ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।
 কাবা শরিফে জুতা-স্যান্ডেল রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, নির্দিষ্ট স্থানে জুতা রাখুন। যেখানে-সেখানে জুতা রাখলে পরে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রতিটি জুতা রাখার র‌্যাকেও নম্বর দেওয়া আছে। এই নম্বর মনে রাখুন। চাইলে জুতা বহন করার ব্যাগ সঙ্গে রাখতে পারেন।
 কাবাঘরের চারটি কোণের আলাদা নাম আছে: হাজরে আসওয়াদ, রকনে ইরাকি, রকনে শামি ও রকনে ইয়ামেনি। হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোণ থেকে শুরু হয়ে কাবাঘরের পরবর্তী কোণ রকনে ইরাকি। তারপর যথাক্রমে রকনে শামি (দুই কোণের মাঝামাঝি স্থান মিজাবে রহমত ও হাতিম) ও রকনে ইয়ামেনি। এটা ঘুরে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাওয়াফের এক চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে একে একে সাত চক্কর দিতে হয়।
 তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দৌড়। এভাবে সাতটি দৌড় সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর দৌড় বা চক্করগুলো হবে)।
 ওমরাহর নিয়মকানুন আগে জেনে নেবেন। এসব কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে হবে, যেমন তওয়াফ করা (কাবা শরিফ সাতবার চক্কর), নামাজ আদায় করা, জমজমের পানি পান করা, সাঈ করা (সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো—যদিও মসৃণ পথ এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রিত), মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করা। ওয়াক্তের নামাজের সময় হলে, যতটুকু হয়েছে ওই সময় নামাজ পড়ে আবার বাকিটুকু শেষ করা।

ওমরাহ
 হিল (কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থান) থেকে অথবা মিকাত থেকে ইহরাম করে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সাঈ করা এবং মাথার চুল ফেলে দেওয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে।
 হজ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ। হজের মাসসমূহে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) ওমরাহর নিয়তে ইহরাম করে, ওমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে হজে তামাত্তু বলে।
 হজের মাসসমূহে একই সঙ্গে হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে ওমরাহ ও হজ করাকে হজে কিরান বলে। আর শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম করে হজ সম্পাদনকে হজে ইফরাদ বলে।
পরামর্শ
 দেশে থাকাকালীন আপনার প্যাকেজের সুবিধাদি, যেমন মক্কা–মদিনায় থাকা, খাওয়া, কোরবানিসহ অন্য সুবিধার কথা হজ এজেন্সির কাছ থেকে লিখিতসহ খুব ভালোভাবে বুঝে নিন। সৌদি আরব গিয়ে তা মিলিয়ে নিতে পারবেন।
 কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সৌদি সরকারের স্বীকৃত ব্যবস্থা। এতে সময় বাঁচে, নিরাপদ। হজের অন্যান্য কাজ সহজে সারতে পারবেন। এর বাইরে দেওয়া হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
 সৌদি আরবে অবস্থানকালে ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। সিগন্যাল পড়লে রাস্তা পার হতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার সময় অবশ্যই ডানে-বাঁয়ে দেখেশুনে সাবধানে পার হতে হবে। কখনো দৌড়ে রাস্তা পারাপার হবেন না।
 কাবা শরিফ ও মসজিদে নববির ভেতরে কিছুদূর পরপর জমজম পানি (স্বাভাবিক ও ঠান্ডা) খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাণভরে জমজম পানি পান করুন।
 কোনো ধরনের অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনায় পড়লে বাংলাদেশ হজ মিশনের মেডিকেল সদস্যের (চিকিৎসক) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
 হজযাত্রীদের তথ্য, হারানো হজযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ হজ মিশনে অবস্থিত আইটি হেল্প ডেস্ক সাহায্য করে।
 তাওয়াফ, সাঈ করার সময় অহেতুক কথা বলা বা ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। টাকাপয়সা নিরাপদে রাখুন।
 মাহরাম (যেসব পুরুষের সঙ্গে দেখা করা জায়েজ। যেমন স্বামী, বাবা, আপন ভাই, আপন চাচা-মামা, ছেলে ইত্যাদি) ছাড়া নারী হজযাত্রী এককভাবে হজে গমনের যোগ্য বিবেচিত হন না।
 মক্কায় বাসার দূরত্ব নির্ধারিত হয় কাবা শরিফ থেকে। আর মদিনায় মসজিদে নববি থেকে। বাসস্থান কত দূর, তার ওপর নির্ভর করে হজের ব্যয়ের টাকা। অর্থাৎ কাবা শরিফ থেকে বাসার দূরত্ব কম হলে খরচ বেড়ে যাবে। যত বেশি দূরত্ব হবে, খরচও তত কম হবে।
 হজের সময় হজযাত্রীদের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়, আপনার হজ এজেন্সি আপনাকে যথাযথ সুবিধাদি (দেশ থেকে আপনাকে থাকা, খাওয়াসহ অন্য যেসব সুবিধার কথা বলেছিল) না দিলে আপনি মক্কা ও মদিনার বাংলাদেশ হজ মিশনকে জানাতে পারেন। এতেও আপনি সন্তুষ্ট না থাকলে সৌদির ওয়াজারাতুল হজ বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে পারেন।
 মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসেন, তাহলে ইহরামের কাপড় সঙ্গে নিতে হবে।
 হজযাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড়ে পথ হারানোর আশঙ্কা থাকে। তবে এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ ব্যাপারে হজযাত্রীদের সচেতন থাকতে হবে। অনেক বাংলাদেশি হজযাত্রী হারিয়ে যাওয়ার কারণে হজের আহকাম বা নিয়মকানুন ঠিকমতো পালন করতে পারেন না।
 মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। মক্কার হোটেলগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল—সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে একজনের খাবার কিনলে বাড়িতে বসে অনায়াসে দুজন খেতে পারেন।
 মক্কা-মদিনায় প্রচুর ফলমূল ও ফলের রস পাওয়া যায়। এগুলো কিনে খেতে পারেন।
 মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কিনবেন।
 মক্কায় ঐতিহাসিক স্থান হেরা গুহা, সাওর পর্বত, মা’আলা কবরস্থান, মসজিদে জিন, মক্কা জাদুঘর, গিলাফ তৈরির কারখানা, লাইব্রেরি, মিনায় আল-খায়েফ মসজিদ, আরাফাতের ময়দান, নামিরা মসজিদ মুজদালিফা, জামারা (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়ার স্থান) ঘুরে আসতে পারেন।
 মদিনায় মসজিদে নববি, রিয়াজুল জান্নাহ, বাকি কবরস্থান, ওহুদ পাহাড়, খন্দক, মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে জুমআ, মসজিদে গামামাহ, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাদশাহ ফাহাদ কোরআন শরিফ প্রিন্টিং কমপ্লেক্স ঘুরে আসতে পারেন।

হজের সময় লক্ষ করুন
 হজের পাঁচ দিন মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা, মিনায় অবস্থান করবেন। তাই হাতব্যাগে এক সেট অতিরিক্ত ইহরামের কাপড় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন।
 কোনো কোনো হজযাত্রী হেঁটে হজের আমলগুলো করে থাকেন। যেমন মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। আরাফাত থেকে মুজদালিফার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। মুজদালিফা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এসব স্থানবিশেষে হেঁটে যেতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
 দিনের বেলা বাইরে বের হলে ছাতা সঙ্গে নেবেন। মুজদালিফায় রাতে থাকার জন্য প্লাস্টিকের পাটি ব্যবহার করতে পারেন। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার রাখতে পারেন। মক্কাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাতা, পাটি কিনতে পাওয়া যায়।
 মিনার ম্যাপ থাকলে হারানোর ভয় নেই। মিনার কিছু অবস্থান চিনে নিজের মতো করে আয়ত্তে আনলে এখানে চলাচল করা সহজ হয়। যেমন জামারা (শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান), মসজিদে খায়েফ, মিনায় তিনটি ব্রিজ—বাদশাহ খালেদ ব্রিজ ১৫ নম্বর, বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিজ ২৫ নম্বর, বাদশাহ ফয়সাল ব্রিজ ৩৫ নম্বর। হাঁটার পথ (টিনশেড নামে পরিচিত)। এখানে সাতটি জোন রয়েছে। মিনার বড় রাস্তাগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম ও নম্বর রয়েছে।
 রাস্তার নাম ও নম্বর জানা থাকলে মিনায় চলাচল সহজ হয়। পথ হারানোর সুযোগ কম থাকে। বড় রাস্তাগুলো হলো: বাদশাহ ফয়সাল রোড ৫০ নম্বর রাস্তা, আলজাওহারাত রোড ৫৬ নম্বর রাস্তা, সুক্কল আরব রোড ৬২ নম্বর রাস্তা, কিং ফাহাদ রোড ৬৮ নম্বর রাস্তা। মিনায় রেলস্টেশন তিনটি। মুজদালিফায় রেলস্টেশন তিনটি। এ ছাড়া রয়েছে সুড়ঙ্গপথ, টানেল, পায়ে চলার রাস্তা, হাসপাতাল, মসজিদ, পোস্ট অফিস, মিনার বাদশাহ বাড়ি, রয়েল গেস্ট হাউস (রাজকীয় অতিথি ভবন) মোয়াচ্ছাসা কার্যালয়।
 ছাপানো অথবা ইন্টারনেটে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাতের মানচিত্র পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মানচিত্র দেখুন, তাহলে ওখানকার রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
 মিনায় মোয়াল্লেম নম্বর বা তাঁবু নম্বর জানা না থাকলে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারেন। মোয়াল্লেম অফিস থেকে তাঁবুর নম্বরসহ কার্ড দেওয়া হয়। তা যত্নে রাখতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময়ও কার্ডটি সঙ্গে রাখুন। সমস্যা এড়ানোর জন্য যে তাঁবুতে অবস্থান করবেন, সেই তাঁবু চিহ্নিত করে নিন।
 মিনায় জামারা থেকে আপনার তাঁবুর অবস্থান, তাঁবু থেকে মসজিদুল হারামে যাওয়া-আসার পথ সম্পর্কে ধারণা নিন। ভিড় এড়াতে কেউ কেউ হেঁটে সুড়ঙ্গ (টানেল) পথ দিয়ে মসজিদুল হারামে পৌঁছান। হাঁটার পথ চিনতে স্থানীয় (বাংলাদেশি কাউকে বললে দেখিয়ে দেবেন) বা গুগল ম্যাপের সহায়তা (https://goo.gl/WPBR25) নিতে পারেন।
 অনেকে ট্যাবলেট বা আইফোন নিয়ে যান। রাস্তাঘাট, অবস্থান ইত্যাদি জানতে হজ ও পিলগ্রিম অ্যাপসের সহায়তা নিতে পারেন।
 আরাফাতের ময়দানে অনেক প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে খাবার, জুস, ফল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। ওই সব খাবার আনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়তে হয়। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
 মিনায় চুল কাটার লোক পাওয়া যায়। নিজেরা নিজেদের চুল কাটবেন না, এতে মাথা কেটে যেতে পারে।
 মিনায় কোনো সমস্যা হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের তাঁবুতে যোগাযোগ করবেন।

দোয়া কবুলের জায়গা
পবিত্র মক্কায় কাবা শরিফের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া কবুল হয়ে থাকে।
 মাতাফ—তাওয়াফ করার স্থানকে মাতাফ বলে।
 মুলতাজাম।
 হাতিমের মধ্যে।
 মিজাবে রহমতের মধ্যে।
 কাবাঘরের ভেতরে।
 জমজম কূপের কাছে (যদিও কূপ এখন বেসমেন্টের নিচে, চাইলেও এখন দেখা যায় না)।
 মাকামে ইবরাহিমের কাছে।
 সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের ওপর।
 সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে।
 বায়তুল্লাহর দিকে যখন নজর পড়ে।
 রকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে।
 আরাফাতের ময়দানে।
 মুজদালিফার ময়দানে।
 মিনার ময়দানে এবং মিনার মসজিদে খায়েফে।
 কঙ্কর মারার স্থানে।

তালবিয়া
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নিয়মাতা লাকা ওয়াল্ মুলক, লা শারিকা লাক্।

লক্ষ করুন
টিকা দেওয়া
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং যেসব জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে, সেখান থেকে টিকা দিতে পারবেন।

তথ্য
(www.hajj.gov.bd) ওয়েবসাইটে ১০ সংখ্যার ট্র্যাকিং নম্বরটি প্রাক নিবন্ধনের সময় কম্পিউটারের দেওয়া নম্বর যেমন H7F94C53C1 জানা থাকলে হজযাত্রী ও তাঁর আত্মীয়স্বজন ওই হাজির তথ্য পেতে পারেন সহজে। হজ তথ্য সেবা কেন্দ্রে +৮৮০৯৬০২৬৬৬৭০৭ ফোন করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় মালপত্র
হজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র সংগ্রহ করা এখন থেকেই শুরু করুন। আপনার মালপত্র হালকা রাখুন। কারণ, আপনাকেই তা বহন করতে হবে।

নিয়মকানুন
হজের নিয়মকানুন জানতে প্রয়োজনীয় বইপুস্তক পড়ুন। প্রথম আলো হজ গাইড সংগ্রহ করতে পারবেন হজ ক্যাম্প অথবা প্রথম আলো কার্যালয় থেকে।
(www.prothom-alo.com/hajj) থেকেও ডাউনলোড করতে পারেন

হজযাত্রীদের জন্য নতুন নিয়ম
 সৌদি সরকার এবার হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। ই-ভিসার কাগজ আলাদাভাবে প্রিন্ট করে হজযাত্রীদের দেওয়া হবে। এই ভিসা পাসপোর্টের সঙ্গে লাগানো থাকে না। ফলে হজযাত্রীদের এটি আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে। আগে পাসপোর্টের সঙ্গে ভিসা লাগানো থাকায় আলাদা করে সংরক্ষণের প্রয়োজন হতো না। এবার ই-ভিসা ও পাসপোর্ট বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল মারার পরও সেটি যত্ন করে রাখতে হবে।
 হজযাত্রীদের যাওয়া-আসার জন্য বিমানের দুটি বোর্ডিং কার্ড যাত্রীদের আগেই দিয়ে দেওয়া হবে। সেটি যত্ন করে রাখতে হবে।
 মক্কা–মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বিমানের সিটি চেকিং থাকছে না।

Source: http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1260486/হজযাত্রা-প্রস্তুতি-নিতে-হবে-এখনই
Md. Shaiful Islam Khan
Public Relations Officer
Daffodil International University
9138234-5, Ext-154, 01713-493064
Shaiful@daffodilvarsity.edu.bd

Offline milan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 304
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/page/show_page_detail/coordination-offices
These inf. very crucial for all Muslim.
Milan Hossain
Sr. Coordination Officer
Department of Civil Engineering
Faculty of Engineering
Cell: 01847140165
e-mail: ceoffice@daffodilvarsity.edu.bd
Ext. 258
https://daffodilvarsity.edu.bd