বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানবভ্রূণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএ অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। অপসারণ করা ডিএনএটি বংশানুক্রমিক হৃদ্রোগ বহনের জন্য দায়ী বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন, এই সফলতার সূত্র ধরেই বংশানুক্রমিক এমন আরও ১০ হাজার ত্রুটি দূর করার ব্যাপারে সম্ভাবনার দরজা খুলে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি ও সল্ক ইনস্টিটিউট এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ইনস্টিটিউট ফর বেসিক সায়েন্সের একদল বিজ্ঞানী এই সাফল্য পেয়েছেন। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে।
গবেষকেরা মূলত হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি নিয়ে গবেষণা করেছেন। কোনো কারণ ছাড়াই হৃদ্পেশির কোনো অংশ বেড়ে যাওয়া এবং তার কারণে হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়াই হলো এ রোগের বৈশিষ্ট্য। প্রতি পাঁচ শ জনের মধ্যে একজন এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। ত্রুটিযুক্ত একটি মাত্র জিনের কারণে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয় মানুষ। মা-বাবার কেউ হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে আক্রান্ত হলে তাঁদের সন্তানদেরও একই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ।
গবেষণার সময় রোগটি আক্রান্ত এক ব্যক্তির শুক্রাণু দিয়ে একটি স্বাস্থ্যবান ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে শুক্রাণুর ত্রুটি সংশোধন করা হয়। এই পদ্ধতিতে শতভাগ সাফল্য না পেলেও ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ত্রুটিমুক্ত ভ্রূণ সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।
গবেষক দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ড. শৌখ্রাত মিতালিপভ বলেন, এই কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া রোগের বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
২০১৫ সাল থেকে মানবভ্রূণ সম্পাদনা করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। চীনের বিজ্ঞানীরা কয়েক দফায় কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন। তাঁরাও সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের গবেষণায় সবগুলো কোষই ত্রুটিমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে সম্পাদনা করা ভ্রূণ পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যবান ও রোগাক্রান্ত কোষের ‘মোজাইক’-এ পরিণত হয়। তবে ওই গবেষণাগুলোয় যে বাধাগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলোর অভিজ্ঞতাই সাম্প্রতিকতম এই গবেষণার পথপ্রদর্শকে পরিণত হয়।