“ইস, যদি অমন সুন্দর হতাম” , “আর একটু যদি লম্বা হতাম” ,
“অমন সুন্দর দেহ যদি আমার থাকতো” , “হায়! আমারও যদি
অমন একটা কিছু থাকতো”– মুলত এমন সব আকাঙ্ক্ষার
নামই মনস্তাত্ত্বিক হতাশা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের জীবনটাই কেটে যায় এমন
সব হতাশামুলক আচরণ আর চিন্তাধারায়।
আসলে মানুষের শ্রেষ্ঠ হবার আকাঙ্ক্ষাটা চিরন্তন।
বরাবরই মানুষ চেয়েছে অন্যের থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠতম
স্থানে নিয়ে যেতে। অথচ মানুষ জানেই না, অন্যকে
পিছনে ফেলে নিজেকে এগিয়ে যাবার বাসনা বস্তূত
নিজেকেই ছোট করে।
সম্পূর্ণ নিশ্চিত থাকতে পারেন, আরেকজনকে হারিয়ে
আপনি কোনওদিন সফল হতে পারবেন না। বরং আপনি
আপনার মতো থেকে আপনার জায়গাতেই কেমন করে
উন্নতি করবেন, সে চেষ্টাই যদি করেন; দেখবেন আপনার
সাফল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সফল ব্যক্তিদের কাহিনী পড়বেন, দেখবেন তারা কেউই
অন্যকে হারাতে চাননি, বরং তারা নিজেদের জায়গায়
জিততে চেয়েছেন।
হতে পারে আপনার মুখাবয়ব একটু খারাপ, কিন্তু তাতে
কি! আপনি তো আপনার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যামণ্ডিত।
আপনার ভেতরেই এমন সব গুণ রয়েছে যা অন্য যে কোনো
মানুষের ভেতরে নেই।
একটু খাটো হয়েছেন বলে যে আর হতাশার সীমা থাকবে
না এমনটি নয়। আপনার শারীরিক দৈর্ঘ্য আপনাকে সফল
করবে না, বরং আপনার মস্তিষ্কের প্রখরতার দৈর্ঘ্য
আপনাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলবে।
এখানে আবার মনে রাখা প্রয়োজন, মস্তিষ্ক আর মেধা
দুটো আলাদা জিনিস। মস্তিষ্ক আপনাকে সঠিক সময়ে
সঠিক কাজ করার পথ দেখাবে আর মেধা আপনার কাজের
ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। সফল ব্যক্তিদের খুব
কমই মেধাসম্পন্ন ছিলেন, বরং তারা ছিলেন উর্বর
মস্তিষ্কের অধিকারী পরিশ্রমী ব্যক্তি, যার কারণে
সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে তারা আজ সফল হয়েছেন।
আপনার যা কিছু নেই তা নিয়ে আপনি হতাশাই ভুগবেন না
বরং যা আছে তাই নিয়েই উন্নতি করার চেষ্টা করুন। মনে
রাখবেন-একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি আমরা।তিনি নিজেই
আমাদেরকে এক এক রকমের অনুদান দিয়ে আমাদেরকে
দুনিয়াই পাঠিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা আপনার পাশের
মানুষটিকে সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী করেছেন, তিনি
পারলে আপনাকেও সমপরিমাণ স্বাস্থ্য বা ঐশ্বর্যের
মালিক করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, কারণ
সৃষ্টিকর্তা ভালো করেই জানেন কার কিসে মঙ্গল।
কেননা মঙ্গলটা তো তারই সৃষ্টি।
কারও হয়তো অঢেল সম্পত্তি আছে, মনে হতে পারে অমন
সম্পদ আপনার থাকলে আপনিও কিছু করে দেখাতে
পারতেন। কিন্তু সত্যিই যদি ব্যাপারটা তাই হতো, তাহলে
যিনি সম্পত্তিটির মালিক তিনি নিজেও অনেক আগেই
সফল ব্যাক্তিত্ব হতে পারতেন। একটু খেয়াল করে
দেখবেন, অঢেল সম্পদ থাকলেও সেই মানুষটি মানুষের
শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারেননি।
ঠিক এমনি ভাবেই একই কথা সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
সুতরাং নিজের মনের এমন দুশ্চিন্তা দূর করে ফেলুন।
অহেতুক হতাশা আপনাকে শুধু অন্যের ব্যাপারে ভাবিয়ে
নিজের ব্যাপারে উদাসীন করে দিবে। এর থেকে বরং
নিজের ব্যাপারে ভেবে, নিজের সম্পদ আর সম্বলটুকুকে
ভেবেই সে অনুপাতে কাজ করে যান।
মনে রাখবেন, অন্যের যা কিছু আছে তা নিয়ে ভেবে শুধু
শুধু নিজে কষ্ট পাবেন কিন্তু তাতে কোনওদিনও ভাগ
পাবেন না। তাই অন্যের ব্যাপারে পার্থক্য করে নিজে
নিজে কষ্ট না পেয়ে আপনি আপনার জায়গায় থেকে
সফল হবার চেষ্টা করুন। দেখবেন, যাদের সুযোগ ছিল
ভালো কিছু করার-যাদেরকে দেখে আপনি আফসোস
করেছেন, একদিন তারাই আপনার সফলতার ভারে নুয়ে
পড়বে।