রকেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্পেস এক্স এবং আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহন কোম্পানি টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্ক বর্তমানে একজন বিলিয়নিয়ার হলেও একসময় তার এই দুইটি কোম্পানিই দেউলিয়া হতে বসেছিল। সম্প্রতি ইলোন মাস্ক জানান, স্পেস এক্স এবং টেসলা নেহায়েত ভাগ্যগুণেই বেঁচে গেছে।
১১ মার্চ, শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট সম্মেলনের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন ইলোন মাস্ক। তখনই তিনি জানান, ২০০৮ সালে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন তিনি। খবর বিবিসির।
‘স্পেস এক্স এবং টেসলা দুই কোম্পানিরই টিকে থাকার সম্ভাবনা ছিল ১০ শতাংশেরও কম’, বলেন তিনি।
এই দুই কোম্পানি নিয়ে ভীষণ সংগ্রামের এক গল্প শোনান তিনি। ২০০২ সালে স্পেস এক্স প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার ভয়ে নিজের বন্ধুদেরকেও এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে দেননি মাস্ক।
তিনি জানান, ২০০২ সালে পেপ্যাল বিক্রি করে দিয়ে ১৮০ মিলিয়ন ডলার পান তিনি। এর ৯০ মিলিয়ন তিনি বিনিয়োগ করেন স্পেস এক্স এবং টেসলায়। কিন্তু প্রথম দিকে লাভের বদলে ক্রমাগত লোকসানের মুখ দেখতে থাকেন মাস্ক।২০০৮ সাল ছিল কোম্পানি দুটির জন্য এক কঠিন সময়। স্পেস এক্সের ফ্যালকন ১ রকেট তিন তিনবার উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়। ফলে ক্রিসমাসের মাত্র দুই দিন আগে টেসলার দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
শুধু তা-ই নয়, ২০০৮ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় মাস্কের। এ সময় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় তার। এমনকি বাসা ভাড়ার জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ধারও নিতে হয় তাকে।
টেসলার দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা যখন দেখা দেয় তখন ইলোন মাস্কের হাতে ছিল ৪০ মিলিয়ন ডলার। তার সামনে দুইটি পথ খোলা ছিল। যদি তিনি কোনো একটি কোম্পানিতে পুরো ৪০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করতে পারতেন, তাহলে সেই কোম্পানির টিকে থাকার সম্ভাবনা বাড়ত। আবার তিনি যদি দুই কোম্পানিতেই ২০ মিলিয়ন করে বিনিয়োগ করতে পারতেন, তাহলে সাফল্যের চেয়ে বরং ভরাডুবির সম্ভাবনাই ছিল বেশি।
কিন্তু স্পেস এক্স এবং টেসলা-দুটো কোম্পানিকেই সন্তানের মতো ভালোবাসতেন মাস্ক। তাই ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তিনি ২০ মিলিয়ন করে বিনিয়োগ করেন উভয় কোম্পানিতে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় এরপরই কোম্পানি দুটি উন্নতি করতে শুরু করে।
এ সম্পর্কে ইলেন মাস্ক বলেন, ‘নেহায়েত ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছে স্পেস এক্স, টেসলাও। একটু এদিক-ওদিক হলেই এতদিনে দুই কোম্পানিই মারা যেত।’
এমন দোদুল্যমান অবস্থা সম্পর্কে মাস্ক জানান, একটা সময় কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার মতো ভালো কোনো ইঞ্জিনিয়ার না পেয়ে নিজেই ফ্যালকন ১ রকেটের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাজ করেছেন তিনি। আবার এখন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তিনি ৮০-৯০ শতাংশ সময় স্পেস এক্স এবং টেসলার ডিজাইনিং করে কাটান। অন্যান্য নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দেন ব্যবসা চালানোর ভার।
অন্যদিকে মাস্ক তার টানেল প্রস্তুতকারক উদ্যোগ বোরিং কোম্পানি নিয়ে অনেক টুইট করলেও, এর পেছনে তিনি ২ শতাংশ সময়ও দেন না বলে জানান।