শিশুর সব ধরণের অসুখের জন্যই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই। তাই প্রয়োজন ছাড়াও যদি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় তাহলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক অধিক ব্যবহারের ফলে শিশুদের যে সমস্যাগুলো হয় তা হল :
· সম্ভাব্য যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো দেখা যায় তা হল- ডায়রিয়া, মুখ ও গলায় ঘা হয় এবং ডায়াপার র্যাশ হয়।
· অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায় তাই পরবর্তীতে অসুখ হলে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়।
· পেটের প্রদাহজনিত সমস্যা ও জুভেনাইল আইডিওপ্যাথিক আরথ্রাইটিস সহ অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
· কিছু গবেষণা প্রতিবেদনের মতে অ্যান্টিবায়োটিকের অধিক ব্যবহারের ফলে শিশুর ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যাটির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যদি আপনার সন্তানের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয় তাহলে ডাক্তার তাকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেবেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার কারণ সম্পর্কে আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে তাহলে তা চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করুন। শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করানোর সময় সঠিক পরিমাণে দিন। যদি শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পরে বমি করে দেয় এবং তা একের অধিকবার হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসককে জানান। শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের অত্যধিক বা অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য আপনার যা করা প্রয়োজন :
১। জানুন
অ্যান্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে ভাইরাস নয়। তাই ভাইরাস ইনফেকশন যেমন- ঠান্ডা, ফ্লু, বেশিরভাগ কাশি ও ব্রংকাইটিস, গলাব্যথা ও সর্দি ইত্যাদির ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে কোন লাভ হয়না।
২। কোর্স সম্পন্ন করুন
অ্যান্টিবায়োটিক অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ পেতে পারে। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার পর আপনার সন্তান যেন সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৩। প্রথমে ঘরেই নিরাময়ের চেষ্টা করুন
বেশিরভাগ শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ যেমন- গলা ব্যথা, কানের ইনফেকশন, সাইনাস ইনফেকশন, ঠাণ্ডা, ব্রংকাইটিস এর তীব্রতা কমতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও। এজন্য যা করতে হবে- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, বেশি তরল খাবার খেতে হবে, যেকোন ধরণের দূষণ থেকে মুক্ত থাকা, গলাব্যথা দূর করার কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গারগেল করা বা উষ্ণ তরল পান করা।
৪। ঔষধ
৬ মাস বা তার কম বয়সের শিশুদের ব্যথা বা জ্বর কমার জন্য অ্যাসিটামিনোফ্যান ঔষধ সেবন করাতে পারেন, ৬ মাসের বেশি বয়সের শিশুদের অ্যাসিটামিনোফ্যান বা ইবোপ্রুফিন সেবন করাতে পারেন। সঠিক মাত্রা জানার জন্য চিকিৎসকের বা ফার্মাসিস্টের সহায়তা নিন। শিশুদের অ্যাসপিরিন দিবেন না।
৫। চিহ্নিত করুন
আপনার সন্তানের কি ঠান্ডা লেগেছে নাকি অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছে তা সঠিক ভাবে চিহ্নিত করুন। জলবায়ুর বা তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে সাইনাসের ব্যথা বা চাপ খুবই সাধারণ সমস্যা। কপাল বা নাকের উপরে উষ্ণ চাপের ফলে এর নিরাময় সম্ভব। বড় শিশুদের খেত্রে গরম ভাপ নেয়াতে পারেন।
৬। চিকিৎসককে চাপ দেবেন না
আপনার সন্তানকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার জন্য চিকিৎসককে চাপ দেবেন না। চিকিৎসক যদি মনে করেন অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার প্রয়োজন আছে তাহলেই তিনি প্রেসক্রাইব করবেন।
৭। একই ঔষধ অন্য শিশুকে দেবেন না
কোন কোন শিশু খেলনা বা স্ন্যাক্স অন্য শিশুদের সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে আবার কোন শিশু পছন্দ করেনা। কিন্তু কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এক শিশুর অ্যান্টিবায়োটিক অন্য শিশুকে খেতে দেবেন না। পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য বারতি অ্যান্টিবায়োটিক ঘরে রেখে দেবেন না।
৮। টিকা দিন
আপনার শিশুকে সব গুলো টিকা দেয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হোন। টিকার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জনিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করা যায়।