মানুষ সামাজিক প্রাণী। একাকীত্বের তুলনায় দশজনকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা তার ধর্ম। এই দশজনের মধ্যে সবার সঙ্গে সম্পর্কে এক রকম হয় না, তেমনি হয় না এক রকম মানসিকতাও।
কিন্তু আন্তরিক প্রশান্তির জন্যে আবশ্যক হলো, সবার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা রাখা। এমনকি যদি কারও থেকে অপরাধমূলক কাজ হয়ে যায়। তবে তার উচিত হলো দ্রুত পাপের পথ থেকে ফিরে আসা। আর সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে এমনটি ভাবা, হয়তো সে সেই অপরাধের দরুণ অনুতপ্ত ও তা থেকে ফিরে এসেছে।
অন্যের ব্যাপারে এমন উত্তম ধারণার প্রতি তাকিদ দিয়ে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুন্দর ধারণা সুন্দর ইবাদতের অংশ।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯৩
ভালো ধারণার বিপরীতে মন্দ ধারণা থেকে তৈরি হতে পারে হাজারও ভুল। কেউ হয়তো কল্যাণকামীতার নিয়তে কোনো কথা বললো, মন্দ ধারণার দরুণ তা পরিণত হয় চাটুকারিতা কিংবা ছিদ্রান্বেষণে।
ঠিক তেমনি একটা ভুলের সূত্র ধরে জমিয়ে রাখা হয় বিদ্বেষ কিংবা পরস্পর কাদা ছোঁড়াছুড়ির কোনো উপলক্ষ।
আমাদের সমাজ মন্দ ধারণায় ছেঁয়ে আছে। মানবজীবন এই দোষে দূষিত হয়ে গেছে। অথচ ইসলাম তা সমর্থন করে না। বরং তা থেকে সাবধান করে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ। আর তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। আর একজন অন্যজনের গীবত করো না।’ -সূরা আল হুজুরাত: ১২
কোরআনে কারিমের সতর্কতার পাশাপাশি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন এ বিষয়ে।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা তা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।’ –সহিহ বোখারি: ৬০৬৪
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ধারণা মানবিক বিষয়। ক্ষেত্রবিশেষ তা নিজের অজান্তে অন্তরে উদিত হয়। এমন অবস্থা থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
আর মনে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে তখন কী করণীয়- এ প্রসঙ্গেও ইসলাম পথ দেখিয়েছে। হাদিসে নববীতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনটি বস্তু আমার উম্মাতের সঙ্গে আবশ্যক হয়ে যাবে- ১. শুভ-অশুভের লক্ষণ, ২. হিংসা ও ৩. মন্দ ধারণা। এক ব্যক্তি জানতে চাইলো- ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই বিষয়গুলোকে দূর করবে কোন বিষয়? তিনিউত্তরে বললেন, যখন হিংসা করবে, তখন আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নাও। যখন মন্দ ধারণা হবে, সেটাকে (মনে) স্থান দেবে না। আর শুভ-অশুভের লক্ষণ মনে হলে সেস্থান থেকে সরে যাও।’
অর্থাৎ এই তিন দোষ থেকে মানুষের মুক্ত থাকা কঠিন। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- অন্যের ব্যাপারে মন্দ ধারণা।
অন্যের প্রতি মন্দ ধারণার মতো কাজ থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো- তা মনে স্থান না দেওয়া। যেখানে মন্দ ধারণাকে মনে স্থান দিতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে এর বহিঃপ্রকাশ কতটা নিন্দিত ও মারাত্মক হতে পারে! এমন ধারণাকে দূরে সরিয়ে রাখা ও খামোকা মিথ্যে ভেবে ভুলে যাওয়া উচিত। একে মস্তিষ্কে স্থান দেওয়া যাবে না। তাহলেই তা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
Source: মুফতি ফারহীন জান্নাত ইউসুফী, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম