আকোরিয়ামের দোকানে পিরানহা মাছ দেখে কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলাম। পিরানহা মাছ হল একটি অতিমাত্রায় রাক্ষুসে মাছ। অন্য সব সাধারণ মাছকে সে খেয়ে ফেলে। গল্পের বইয়ে পড়েছিলাম যে নদীতে পিরানহা মাছ থাকে সে নদীতে গরু ছাগল বা অন্য কোন প্রানী নামে না। সেখানে নামলে পরে কেবল মাত্র তাদের হাড় গোড় পাওয়া যায়। জিজ্ঞেস করে উত্তর পেয়েছিলামঃ কিছু বিদেশী এই পিরানহা মাছকে বড় আকোরিয়ামে ছেড়ে দেয়। তার পর এতে সাধারণ মাছ ছেড়ে দেখে পিরানহা মাছটি কিভাবে অন্য মাছকে শিকার করে খেয়ে ফেলে। শুনে খুব অদ্ভুত মনে হল। আকরিয়ামে মানুষ শখ করে সুন্দর সুন্দর মাছ পুষে। আর এরা কিনা সেই সুন্দর মাছগুলোকে একটি কুৎসিত মাছ কিভাবে খেয়ে ফেলে তা দেখে আনন্দ পায়!!
ভাবতে ছিলাম বিভিন্ন প্রানীর খাদ্য নিয়ে। একটি পাখী খুটে খুটে মাটি থেকে খাবার খাচ্ছে। আর দূরে একটি বিড়াল পাখিটিকে দেখে নীচু হয়ে লেজ নাড়াচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে বিড়ালটি লালায়িত হয়েছে পাখিটিকে শিকার করার জন্য। এইটা খুব স্বাভাবিক একটি চিত্র।
পাখিটি লালায়িত বীজ জাতীয় খাবার দেখে। বিড়ালটি লালায়িত পাখিটিকে দেখে। বীজের প্রতি বিড়ালটির কোন আকর্ষণ নাই। একেবারেই নাই।
একেক প্রাণীর জন্মের পর থেকেই একেক খাদ্যের প্রতি তার লোভ থাকে। মাংসাশী প্রানী অন্য প্রাণী দেখে শিকার করার জন্য চেষ্টা করে। আবার তৃণভোজী প্রাণীর অন্য প্রাণীর প্রতি কোনই আগ্রহ থাকে না। তার সব লোভ পড়ে থাকে লতা পাতা ঘাসের প্রতি।
এক জনের কাছে যা খাদ্য অন্যজনের কাছে তা অখাদ্য।
উপরের এই বর্ণনার তুলনা করা যায় কেন একেক মানুষ কেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জীবন জাপন করে। কেননা প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মন মানুশিকতা ও আগ্রহ নিয়ে জন্মায়। কেউ চায় বিখ্যাত হতে। কেউ চায় অর্থ। কেউ বা আরাম আয়েসের অলস জীবনের স্বপ্ন দেখে চলে।
এক জনের কাছে যা সারাজীবনের সাধনা - অপরজনের কাছে হয়তো তা বিদ্রুপের কারণ।
তাইতো আমরা দেখি হিটলার অজস্র মানুষকে মেরে ফেলেছেন। তার মাধ্যমেই সে সার্থকতার খোঁজ করেছেন। অপরপক্ষে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল যুদ্ধাহত মানুষদের সেবা করে জীবন পার করেছেন। লেডি উইথ দি ল্যাম্প কখনই হিটলারের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন না।
আমরা সবাই মানুষ। কিন্তু আমরা সবাই একই সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মাই না। কেউ সার্থকতা খুঁজে কবিতা লিখে। কেউ খুঁজে সাহসিকতার মাঝে। কেউ বা টাকা গুনে পরিতৃপ্ত হয়। কেউ বা দান করে।
কেউ পিরানহা মাছের মত মন মানুশিকতার। কেউ বা চঞ্চল হরিণীর মত মনের।
বিভিন্ন প্রাণী যেমন ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের প্রতি আগ্রহ নিয়ে জন্মায় - ঠিক তেমন একেক মানুষ একেক জিনিসের প্রতি আগ্রহ নিয়ে জন্মায়।