কাউনডাউন শুরু! হাতে গোনা আর কয়েক ঘণ্টা পরই ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হতে চলেছে। ১১টি শহরের ১২ স্টেডিয়ামে হবে মোট ৬৪টি ম্যাচ।
যে ১২টি স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের খেলাগুলি:
১) লুঝনিকি স্টেডিয়াম: মস্কো শহরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। এর আগে স্টেডিয়ামটির নাম ছিল সেন্ট্রাল লেনিন স্টেডিয়াম। ৮১ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামেই হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচ। স্টেডিয়ামটি পুনর্নিমাণে খরচ পড়েছে ৪১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ১৯৮০ সালে মস্কোতে অলিম্পিকসের আসর বসেছিল এই স্টেডিয়ামে। তার ঠিক দু’বছর পর উয়েফা কাপের ম্যাচে স্পার্তাক মস্কো-হল্যান্ডের এইচএফসি হার্লেমের খেলায় গণ্ডগোলের জেরে পদপিষ্ট হয়ে ৬৬ জন দর্শক মারা যায়। ১৯৯০ সালে নবরূপে গড়ে তোলা হয় এই স্টেডিয়ামটি। নতুন করে নামকরণ করা হয় লুঝিনিকি স্টেডিয়াম। তারপর এই মাঠে হয়েছে ১৯৯৯ সালে উয়েফা কাপ ফাইনাল। ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয়েছে লুঝিনিকি স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপে গ্রুপ ও নক-আউট পর্ব মিলিয়ে মোট সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
২) ফিশত স্টেডিয়াম: সোচির এই ফিস্ত স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল ২০১৪ সালে শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য। প্রায় ৪৮ হাজার দর্শক এই মাঠে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। রাশিয়া বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে এই স্টেডিয়াম নতুন করে তৈরি হয়। যার কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। ফিফা কনফেডারেশন কাপের বেশ কিছু ম্যাচ হয়েছে এই মাঠে। এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হবে। তার মধ্যে রয়েছে ১৫ জুন স্পেন বনাম পর্তুগাল ম্যাচ। এছাড়া ২৩ জুন জার্মানি খেলবে সুইডেনের বিরুদ্ধে। ৭ জুলাই তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচও হবে সোচির ফিশত স্টেডিয়ামে।
৩) সেইন্ট পিতার্সবুর্গ স্টেডিয়াম: দ্য ক্রেস্তোভস্কি কিংবা জেনিত এরিনা ছিল এর পূর্ব নাম। বিশ্বকাপের জন্য এই স্টেডিয়ামের নতুন নাম হয় সেইন্ট পিতার্সবুর্গ। ৬৮ হাজারের বেশি দর্শকাসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মোট সাতটি ম্যাচ হবে। কাপ জেতার প্রবল দাবিদার ব্রাজিল যেমন গ্রুপ পর্বে ২২ জুন কোস্টারিকার মুখোমুখি হবে, তেমনি অপর দাবিদার আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২৬ জুন খেলবে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে। ১৯ জুন আয়োজক দেশ রাশিয়া
মুখোমুখি হবে মিশরের। প্রথম সেমিফাইনাল ও তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচও হবে এই স্টেডিয়ামে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা স্টেডিয়ামগুলির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সেইন্ট পিতার্সবুর্গ।
৪) মরদোভিয়া এরিনা: ইনসা নদীর তীরে এই স্টেডিয়ামে প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। তবে বিশ্বকাপের পর দর্শক সংখ্যা কমিয়ে ২৮ হাজার করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১০ সালে এই স্টেডিয়াম ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ বিশ্বকাপের সুবাদে ফের নতুন করে সেজে উঠেছে মরদোভিয়া এরিনা। আর্থিক সমস্যায় স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল উদ্যোক্তাদের। আগামী ২৫ জুন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইরানের মুখোমুখি হবে এই মাঠে। গ্রুপ পর্বের মোট চারটি ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে।
৫) কাজান এরিনা: ২০১৩ সালে গ্রীস্মকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেমসের জন্য কাজান এরিনা গড়ে তোলা হয়েছিল। তারপর এই মাঠে বহু ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কনফেডারেশন কাপের খেলা হয়েছিল এখানে। লন্ডনের এমিরেটস ও ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম যে সংস্থা তৈরি করেছিল, তাদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কাজান এরিনা তৈরি করার। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক এই স্টেডিয়ামে বসে এবারে বিশ্বকাপে গ্রুপ ও নক-আউট পর্ব মিলিয়ে ছ’টি ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন। গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এই কাজান এরিনাতেই দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে ২৭ জুন। এছাড়া ৬ জুলাই দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে এখানে।
৬) সামারা এরিনা: বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে রাশিয়াকে সব থেকে বেশি বেগ দিয়েছে এই সামারা এরিনা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করতে না পারায় ফিফার কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল স্থানীয় উদ্যোক্তাদের। শহর থেকে অনেকটা দূরে। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শক এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মোট ছ’টি ম্যাচ দেখতে পাবে।
৭) একাতেরিনবুর্গ এরিনা: রাশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম দেশ একাতেরিনবুর্গ। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ফিফার অনুরোধে উদ্যোক্তারা অস্থায়ীভাবে ১২ হাজার দর্শকাসন তৈরি করতে বাধ্য হয়েছেন। মস্কো থেকে প্রায় ১ হাজার ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামে ৩৫ হাজার দর্শক এবারে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন। এই স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় নানা অভিযোগ সামনে এসেছিল। সেখানকার মানবাধিকার সংস্থার দাবি ছিল,মাইনাস ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিয়ে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ চলছে। তবে সব বিতর্ক পেছনে ফেলে একাতেরিনবুর্গ এরিনা এবারে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।
৮) নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম: ভোলগা ও ওকা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত নিঝনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম। এই মাঠেই আগামী ২১ জুন আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। এই মাঠে হবে ইংল্যান্ড-পানামা ম্যাচও। ৪৫ হাজার ৩শ ৩১ দর্শকাসন বিশিষ্ট নিঝনি স্টেডিয়ামে গ্রুপ ও নক-আউট পর্ব মিলিয়ে মোট ছ’টি ম্যাচ হবে।
৯) কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম: বিশ্বকাপের মোট চারটি ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে। প্রথম দিকে ৪৫ হাজার দর্শকাসন থাকলেও নিরাপত্তার কারণে ফিফার অনুরোধে তা কমিয়ে ৩৫ হাজার করা হয়েছে। ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন এই মাঠেই গ্রুপ পর্বে মরক্কোর বিরুদ্ধে খেলবে। ২৮ জুন ইংল্যান্ড-বেলজিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে।
১০) ভলগোগ্রাদ এরিনা: ভলগা নদীর তীরে এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত। পূর্ব নাম ছিল স্ট্যালিনগ্রাদ। বিশ্বকাপে মোট ৪৫ হাজার দর্শক এই মাঠে খেলা দেখতে পারবেন। তবে বিশ্বকাপের পর দর্শকাসন দশ হাজার কমিয়ে ফেলা হবে। নকআউট পর্বের কোনো ম্যাচ রাখা হয়নি এই স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বের মোট চারটি ম্যাচ রয়েছে।
১১) রোস্তভ এরিনা: দক্ষিণ মস্কোর ডন নদীর তীরে এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মোট পাঁচটি ম্যাচ হবে। ৪৫ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট এই স্টেডিয়ামে ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৩ সালে এই স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়। খননকাজের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা উদ্ধার হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে। ফলে ২০১৭ সালে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০১৮ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়।
১২) স্পার্তাক স্টেডিয়াম: ২০০৭ রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন স্পার্তাক মস্কোর হোম গ্রাউন্ড। ৪৩ হাজার ২শ ৯৮ জন দর্শক এই স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। স্টেডিয়ামটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে স্পার্তাক স্টেডিয়ামের পথ চলা শুরু। ইতিমধ্যেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কনফেডারেশন কাপের খেলা হয়েছে এই মাঠে। এই স্টেডিয়াম তৈরিতে রাশিয়া সরকারের নতুন কোনো খরচ করেনি। গ্রুপ ও নক-আউট পর্ব মিলিয়ে মোট পাঁচটি ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে।