আপনি কি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় গ্রাড স্কুলে ভর্তি হতে চান? কিন্তু ফান্ডিং জোগাড় হয়নি/এসিস্টেন্টশিপ পাননি/টাকা নাই? তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্য। (হাতি পোস্ট হলেও কষ্ট করে একটু পড়ে নিন ও জনস্বার্থে লেখাটা ভর্তিচ্ছুদের পড়ান।)
“আমার পরিবারের সামর্থ নাই ফান্ডিং ছাড়া পড়ার”
“আমি অমুক জায়গায় ফান্ড পাই নাই, তাই তাদের ভর্তির অফার নিতে পারি নাই।”
এই কথাগুলা কি চেনা চেনা লাগে?
আপনি নিজেই কি বলছেন এসব কথা?
বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের ক্ষেত্রেই প্রথম কথাটা প্রযোজ্য, বাপের টাকায় বিদেশে টিউশন ফি দিয়ে পড়ার সামর্থ খুব কম মানুষেরই আছে। তাই উচ্চ শিক্ষার্থে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার জন্য সবাই ফান্ডিং খোজে, যা ফেলোশীপ, রিসার্চ এসিস্টেন্টশীপ, কিংবা টিচিং এসিস্টেন্টশীপের মাধ্যমে আসে। কিন্তু সেগুলা পাওয়া সম্ভব একাডেমিক বা রিসার্চের ফল ভালো হলে। এর কারণে সবাই সেভাবে ফান্ডিং পান না। ফান্ডিং ছাড়া মাস্টার্সে ভর্তির অফার বা আই-টুয়েন্টি সহজেই মিলে। কিন্তু ফান্ডিং ছাড়া সেই অফার গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না বাংলাদেশের অধিকাংশই। আমার কর্মস্থল ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে এরকম প্রচুর আনফান্ডেড এডমিশন দেই আমরা, এর মাঝে বাংলাদেশের অনেকেই থাকেন, কিন্তু অন্যদেশীয়রা এসে গেলেও বাংলাদেশ থেকে কেউ অফার নেননা, এমনকি অন্যত্র ভর্তির আমন্ত্রণ না থাকলেও।
আমি বলবো, এটা বড় রকমের বোকামি। ফান্ডিং না পেলে পড়বেনই না?
~ ফান্ডিং ছাড়াই উচ্চশিক্ষার উপায় ~
কেনো?
কারণ পড়ার খরচ জোগাড়ের অজস্র তরিকা আছে, যা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানে এবং তা প্রয়োগ করে দিব্যি মাস্টার্সের খরচ বের করে ফেলছে।
আমি মাস্টার্স/পিএইচডি লেভেলের একটা ক্লাস পড়াই। রিসার্চ কোর্স বলে সেখানে সাধারণত ১৫ জন শিক্ষার্থী হতো, কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে বিপুল সংখ্যক মাস্টার্স লেভেলের বিদেশী শিক্ষার্থী আসছে, ফলে সেই ক্লাসে জায়গাই মেলেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, কিংবা চীন থেকে।
কীভাবে?
প্রথাগত ফান্ডিং সোর্সের যেমন টিএ আরএ এর বাইরেও যে কোনো ক্যাম্পাসে অনেক কাজের সুযোগ থাকে। হতে পারে সেটা অন্য কোনো বিভাগের কোনো প্রফেসরের অধীনে রিসার্চ এসিস্টেন্টের কাজ। উদাহরণ স্বরূপ বলি, আমার পরিচিত একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স করতো, কিন্তু রিসার্চ এসিস্টেন্ট ছিলো মেডিকাল স্কুলের এক প্রফেসরের সাথে, কারণ সেই প্রফেসরের কিছু সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ ছিলো এক প্রজেক্টে।
আবার অনেক সময়ে ঘণ্টা হিসাবে নানা কাজ করা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই। আমার এক ইরানী ছাত্র ছিলো, মাস্টার্স করছে। তার কোনো ফান্ডিং ছিলো না, মাস খানেক ধরে আমার পিছনে ঘুরেছে, শেষমেশ তাকে ডিপার্টমেন্টের সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের অধীনে একটা প্রজেক্টে মোবাইল এপ ডেভেলপারের কাজ জুটিয়ে দিলাম, মাসে তার আয় দাঁড়ালো বারশ ডলারের মতো। পুরাপুরি ফান্ড না হলেও কিন্তু তার অনেক খানি খরচ জোগাড় হলো। আর এর পাশাপাশি একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকুরি জোগাড় করেছিলো, আয় হয়েছে ভালোই, টিউশন কাভার করে থাকা খাওয়ার খরচ মিটে গেছে। বছর দুয়েক কষ্ট করে মাস্টার্স শেষ করে ফেলেছে, এই সময়ের মধ্যেই তার পকেট থেকে যা খরচ হয়েছে সবটা তুলে ফেলতে পারবে মনে হয়।
আর অনেক ডিপার্টমেন্টই ফান্ডিং না দিলেও টিউশন মাফ করা (ওয়েইভার) অথবা ইন-স্টেট টিউশন দিতে পারে। আমার কর্মস্থলে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্সে ফান্ড না দিলেও ৫-৬ জন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে টিউশন মাফ কিংবা কম টিউশনের সুবিধা দেয়া হয়। ফলে প্রতি সেমিস্টারে পড়ার খরচ কমে দাঁড়ায় ৩-৪ হাজার ডলারের মতো, যা পার্ট টাইম চাকুরি থেকে মেটানো সম্ভব। আমার দুঃখ লাগে যখন দেখি, অনেক বাংলাদেশী ছাত্রই ফান্ডিং না পেলে আসবেই না এই গোঁ ধরে বসে থাকে, আর সেখানে ভারত, নেপাল। ইরান, চীনের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হলেই কাজ একটা জোগাড় হবে, এই বিশ্বাসে চলে আসে, পেয়েও যায় কাজ/ফান্ডিং।
আমার লেখাগুলা পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সেলফ ফান্ডিং এ ভর্তি হলেও ভিসা মেলে না। এই যুক্তি কিন্তু অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য। ভারত বা পাকিস্তানী শিক্ষার্থীদের জন্য যে পরিমাণ এডমিশন দেয়ায় হয় তাদের সবাই ভিসা পায়না বটে। কিন্তু অনেকেই পায়। আর বাংলাদেশী প্রচুর শিক্ষার্থীকেও আমার ইউনিভার্সিটিতেও দেখেছি সেলফ ফান্ডিং এ ভিসা নিয়ে আসতে। কাজেই "ভিসা পাবো না" এইটাকে অবধারিত ধরে নেয়া এবং এরকম যারা বলছে তাদের কথা বিশ্বাস করাটাও বোকামির মাঝেই পড়ে। চেষ্টা না করলে জানবেন কী করে?
তাই এই গোঁ ধরে বসে থাকা বাদ দেন … ফান্ডিং শুরুতে সরাসরি না পেলেও পরে অবশ্যই পাওয়া যায়, সেটা বিশ্বাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্যম আর সদিচ্ছা থাকলে ফান্ডিং এক সময়ে জোগাড় হবেই।