তখন উনার বয়স অনেক কম। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হাটুতে বল লেগে ব্যাথা পেয়েছিলেন। বাবা নিয়ে গেলেন অরথপেডিক ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তাকে মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলেন - বড় হলে কি হবে? মিনিস্টার না মাস্টার? যদি বেশী পড় তাহলে তোমার মাস্টার হতে হবে। আর যদি কম পড় তাহলে হবে মিনি............। (অনেক আগের স্মৃতি তাই কেমন ঝাপসা হয়ে এসেছে।)
তার পর তিনি নিজেই কিছুদিন ভেবেছিলেন কি হবেন বড় হয়ে? তবে ক্লাসে বা বাইরে জিজ্ঞেস করলে বলতেন তিনি বড় হলে ইঞ্জিনিয়ার হবেন।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি খাতা কলম নিয়ে বসেছিলেন। মনে আছে প্রথমে একটি ছক কাটা টেবিল তৈরি করেছিলেন। প্রথম কলামে লিখেছিলেনঃ পেশা। দ্বিতীয় কলামেঃ সুবিধা ও শেষ কলামেঃ অসুবিধা।
পেশা কলামে প্রথমে এক নাম্বারে লিখলেনঃ
ইঞ্জিনিয়ার। সুবিধাঃ (জানা নাই) অসুবিধাঃ নীরস সাব্জেক্ট।
এর পর তিনি লিখে চলেছিলেন একের পর এক পেশা, তার সুবিধা ও অসুবিধা। যেমনঃ
ডাক্তার। সুবিধাঃ (জানা নাই) অসুবিধাঃ কাটা ছেড়া করতে হয়।
পুলিশ। সুবিধাঃ (জানা নাই) অসুবিধাঃ পেটাতে হয়।
____ চাকুরী। সুবিধাঃ (জানা নাই) অসুবিধাঃ ঘুস খেতে হয়।
দেখলেন কোন পেশার সুবিধাই তিনি জানেন না। খালি অসুবিধার কথাই তিনি জানেন।
তবে একটি পেশা দুইটি সুবিধা তিনি লিখতে পারলেন।
নাবিক। সুবিধাঃ বেতন অনেক। জাহাজে মশারী লাগাতে হয় না। অসুবিধাঃ সাতার জানা নাই।
ভেবে দেখলেন কোনটাতেই তিনি নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবেন না।
এবার তিনি লিস্টে যোগ করেছিলেনঃ শ্রমজীবী পেশা গুলো। এইগুলোতেও কি তিনি আনফিট? তিনি আবার শারীরিক কষ্ট করতে পারেন না। তাই এইগুলো বাদ।
সব শেষে তিনি যোগ করেছিলেনঃ ব্যাবসায়ী আর রাজনীতিবিদ।
কি করে এই পেশাগুলো করতে হয়? এদের কাজ কি? হতে হলে কি কি পড়তে হয়? কি কি জানতে হয়? অফিসে কতক্ষণ থাকতে হয়? এইসবের কিছুই তার তার কিছুই জানা নাই। তবে সুবিধার লিস্টটি লিখতে গিয়ে দেখলেন অনেক ছোট হয়ে গেছে। শুধু দুইটি শব্দঃ টাকা + ক্ষমতা।
এই লিস্ট করার পর অনেক দিন হয়ে গেছে। সেটি কোথায় তিনি জানেন না। শুধু স্মৃতিতে খুঁজে পান।
এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি জেনে গেছেনঃ বিবেক না থাকলে সব পেশাতেই এই ছোট দুইটি শব্দ পাওয়া যাবে। আর বিবেক থাকলে যে কেউ এই জনসমাজে আনফিট হয়ে যায়। তার আর কষ্টের শেষ থাকে না।