গুগল ট্র্যাকিং থেকে নিষ্কৃতি প্রায় অসমম্ভব
কৌশলে গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করছে টেক জায়ান্ট গুগল। এ কাজে এতটাই দক্ষতার পরিচয় দেয়া হচ্ছে যে, স্বাভাবিক অনলাইন কার্যক্রমেও কেউ নিজেকে গুগলের নজরদারি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। অর্থাৎ অনলাইন সেবা ব্যবহারের সময় গুগল ট্র্যাকিংয়ের হাত থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা প্রায় অসম্ভব। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডগলাস শ্মিট পরিচালিত ৫৫ পৃষ্ঠার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগল মোবাইল ডিভাইস অপারেটিং সিস্টেম বাজারে অ্যান্ড্রয়েড দিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহে জনপ্রিয় এ অপারেটিং সিস্টেমকে কাজে লাগানো হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ক্রোম ব্রাউজারের সহায়তায় প্রতি ঘণ্টায় ১৪ বার একজন গ্রাহকের তথ্য গুগলের সার্ভারে প্রেরণ করে।
গুগল ট্র্যাকিংয়ের হাত থেকে নিজেকে আড়াল করতে অ্যান্ড্রয়েডচালিত বা গুগলের ডিভাইস কিংবা সেবা ব্যবহার ছেড়ে দিলে ডাটা সংগ্রহ কিছুটা সীমিত হয়ে পড়ে। তবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে কিছু তথ্যে গুগলের প্রবেশাধিকার থেকেই যায়।
গুগল তথ্য সংগ্রহে যেসব কৌশল অবলম্বন করে সেগুলোতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। গুগল ম্যাপ, হ্যাংআউটস চ্যাট ও ইউটিউবের পাশাপাশি ডাবলক্লিক বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুগলের এসব পণ্য বিভিন্ন কৌশলে গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ করে, যা সাধারণ একজন গ্রাহকের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
ডগলাস শ্মিট গবেষণা প্রতিবেদনটির সমাপ্তিতে লিখেছেন, গুগলের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম অধিকাংশ সময় সংঘটিত হয়, যখন কেউ সরাসরি এর কোনো পণ্যের সঙ্গে জড়িত থাকে না।
সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারী প্রত্যেকের লোকেশন ডাটা বা অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহ করে গুগল। প্লাটফর্মটির গ্রাহকরা গোপনীয়তা রক্ষায় ডিভাইসের লোকেশন হিস্ট্রি ফিচার বন্ধ রাখলেও কৌশলে তাদের অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গোপনে অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের এ কৌশলকে বলা হয় ‘ডার্ক প্যাটার্ন’। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের ভুল পথে চালিত করে তাদের তথ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখছে গুগল। নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য এপির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তথ্যকে আরো জোরালো করল।
গুগলের পক্ষ থেকে নতুন গবেষণা প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, গবেষণা প্রতিবেদনটি একটি লবিস্ট গ্রুপ দ্বারা অনুমোদিত এবং লিখেছেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি কিনা ওরাকল ও গুগলের মধ্যে চলমান পেটেন্ট দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষদর্শী। কাজেই প্রতিবেদনটিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।
অবশ্য এপির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি গুগলের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের অবস্থানগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ স্বীকার করে নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বলা হয়, এসব তথ্য বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার কিংবা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয় না।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, গুগলের এ ধরনের চর্চা বেশ ভয়ানক। কারণ ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় যেকোনো সতর্কতা অবলম্বন করলেও ডিভাইস ইন্টারনেটে যুক্ত করলে অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার অবস্থানগত তথ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে গুগলে পাঠাতে থাকে। এটি এমন এক ফিচার, যা গ্রাহককে না জানিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারী চাইলেও এ কার্যক্রম থেকে রেহাই পাবে না। কারণ লোকেশন ট্র্যাকিং ফিচার বন্ধ রাখলেও তাদের অবস্থানের তথ্য গুগলের কাছে চলে যাবে। অবস্থান ও পরিচয়সংক্রান্ত ডাটার ব্যবহার বা অপব্যবহার দুটোই হতে পারে বলে মত দিয়েছেন তারা।
Source:
http://bonikbarta.net/bangla/news/2018-08-26/168509/%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A6%B2-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%AC/