মসজিদে নববী
১২ রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হচ্ছে হিকমতি দুনিয়া ও কুদরতি বেহেশতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন।
নবী রাসূলদের জন্য আল্লাহপাকের রহমত-বরকত-শান্তি সার্বক্ষণিক। আল্লাহপাক নবী রাসূলদের জন্ম-মৃত্যু দিনে বিশেষভাবে শান্তি বর্ষণ করেন কোরআনের আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হচ্ছে। কোরআনের এ আয়াত থেকে বোঝা যাচ্ছে জন্মদিনে যেভাবে শান্তি বর্ষিত হয়- মৃত্যু দিনেও সেভাবে শান্তি বর্ষিত হয়। নবীজির জন্ম-মৃত্যু একই দিনে হলেও একইভাবে শান্তি নাজিল হয়।
রাসূল পাকের উম্মত হিসেবে আল্লাহর বান্দা হিসেবে আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হওয়ার জন্য আমাদের রাসূল পাকের প্রতি দরূদ-সালাম পাঠাতে হবে এবং সাধ্যমতো গরিব-মিসকিনদের খাওয়াতে হবে। আয়াত (১০৭:৪), (৩৩:৫৩) ঈদে মিলাদুন্নবী সাধ্যমতো উদযাপন করলে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর রহমত-বরকত শান্তি বর্ষিত হবে বান্দার ওপর।
সূরা মারইয়াম : তোমাকে ইয়াহইয়া নামের পুত্রের সুসংবাদ জানাচ্ছি, (১৫) তার ওপর শান্তি হোক জন্মের দিনে, মৃত্যুর দিনে এবং পুনরুত্থানের দিনে। (৩৩) আর আমার প্রতি শান্তি আমার জন্মদিনে, মৃত্যু দিনে এবং জীবিত পুনরুত্থিত হওয়ার দিন। (৩৪) এ হল ঈসা ইবনে মরিয়মের জন্য।
সূরা আলে ইমরান : ১৬৯। যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে, তাদের আপনি কখনও মৃত বলে ধারণা করবেন না। বরং তারা জীবিত, তারা তাদের রবের থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হন।
সূরা আল বাকারাহ : ১৫৪। আর যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করে তাদের তোমরা মৃত বল না, বরং তারা জীবিত অবশ্য তোমরা তা বোঝ না। ১৬৩৭। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমরা জুমার দিন আমার প্রতি বেশি দরূদ পাঠ করবে। কেননা তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়, ফেরেশতারা তা পৌঁছে দেয়।
যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, তা থেকে সে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তা আমার কাছে পেশ হতে থাকে। রাবি বলেন, আমি বললাম : ইন্তেকালের পরেও? তিনি (সা.) বললেন : হ্যাঁ, ইন্তেকালের পরেও।
কোরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে স্পষ্ট, নবী রাসূলরা ও আল্লাহর পথে যারা নিহত হন তাদের মৃত ভাবা যাবে না বরং তারা জীবিত এবং আল্লাহর রিজিকপ্রাপ্ত। নবী রাসূল ও শহীদানদের জন্ম-মৃত্যু দিবসে গরিব-মিসকিনসহ মানুষ খাওয়ানো আল্লাহ প্রদত্ত রিজিককে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ ও রাসূল পাক সন্তুষ্ট হন। আল্লাহ পাকের বিবেচনায় জীবিতরা রিজিকপ্রাপ্ত।
সূরা আল-মুমতাহিনা : ১৩। হে মুমিনরা যাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট তোমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কর না। তারা অবশ্যই পরকাল সম্পর্কে তেমনি নিরাশ হয়েছে, যেমনি কাফেররা কবরে থাকা লোকদের সম্পর্কে নিরাশ হয়েছে।
যাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাসূল পাকের ওপর দরূদ সালাম পাঠানো হবে ও গরিব-মিসকিনসহ মানুষকে খাদ্যদান করা হবে সেই কবরবাসী ও আয়োজকদের ওপর আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর রহমত-বরকত-শান্তি বর্ষিত হবে। জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার মধ্যে এটাই প্রমাণ করে, জীবিতরা কবরে থাকা লোকদের সম্পর্কে ও পরকাল সম্পর্কে নিরাশ নয় বরং আল্লাহ ও রাসূলের রহমত-বরকত করুণা শান্তির ওপর নির্ভরশীল।
সূরা মাউন : (১) আপনি কি দেখেছেন, সেই ব্যক্তিকে যে দ্বীনকে মিথ্যা মনে করে? (২) সে তো ওই ব্যক্তি যে এতিমকে ধাক্কা দেয়। (৩) এবং মিসকিনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করে না।
সূরা মাউনে দেখা যাচ্ছে, মিসকিনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত না করলে ধর্মকে অস্বীকারকারী হতে হয়। শুধু নামাজ-রোজা নয়, গোটা ধর্মকে অস্বীকার করা হয়। কোনো রকমের ছলচাতুরী করা যাবে না। মসজিদ-মাদ্রাসা এমনকি বেহেশত নির্মাণের দোহাই দিয়েও গরিব-মিসকিনকে খাদ্যদানে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
সূরা আল এনশিরাহ : (৪) আমি তোমার স্মরণকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।
এ আয়াতে বোঝা যাচ্ছে, রাসূল পাকের স্মরণকেই আল্লাহ পাক সর্বোচ্চ মর্যাদা-সম্মান দিয়েছেন। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে রাসূল পাককে সর্বাধিক স্মরণ করা হয়।
সূরা আল আহযাব : (৫৩)। হে মুমিনরা! তোমরা নবীর ঘরে তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করো না, খাবার জন্য তা পাকানোর অপেক্ষায় বসে থেক না। কিন্তু তোমাদের যখন ডাকা হয় তখন প্রবেশ কর। এরপর তোমরা যখন খানা খেয়ে ফেলবে তখন বেরিয়ে যেও।
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে, রাসূল পাক মানুষ খাওয়াতেন গরিব-মিসকিন-ধনী সবাইকে। মানুষকে খানা খাওয়ানো নবীপ্রেমিকদের ফরজ। ঈদে মিলাদুন্নবীসহ জন্ম-মৃত্যু দিনে মানুষকে খাদ্যদান মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর শান্তি বর্ষণের উসিলা। সূরা আল আহজাব : (৬)। আর মুমিনরা নবীদের কাছে তাদের নিজের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
আয়াত (৩৩:৬) থেকে বুঝে নিতে হবে, রাসূল পাক আমার ওপর আমার নিজের চেয়ে বেশি কর্তৃত্বশীল। ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থাৎ রাসূল পাকের জন্ম-মৃত্যু দিবস উদযাপনের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে হবে যে, রাসূল পাক আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র পরিবার ও সহায় সম্পত্তির, এমনকি আমার নিজের চেয়েও আপন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, টোপেরবাড়ি দরবার শরিফ, ধামরাই