আমাকে আদেশ করা হয়েছে- আপনাদের খেদমতে দ্বীনের কিছু কথা আরয করতে। দ্বীনের কথা বলতে সবসময় অত দীর্ঘ সময় নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ তাআলা যদি ইখলাছের সাথে কিছু বলার ও শোনার তাওফীক দান করেন, তাহলে অল্প কথাতেও অনেক ফায়দা হয়। আর আল্লাহ হেফাযত করুন- ইখলাস যদি না থাকে, তাহলে লম্বা-চওড়া বয়ানও বেকার হয়ে যায়।
মূলত আমি নসীহত করার যোগ্য কেউ নই। তবে মুরুব্বীদের থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা নারী জাতিকে এ উম্মতের বিনির্মাণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নারীগণ হচ্ছেন একটি সমাজের মূল স্তম্ভ-ফাউন্ডেশন। তাদের উপর ভর করেই পুরো সমাজ দাঁড়িয়ে থাকে এবং গোটা জাতি প্রতিপালিত হয়।
আমি তো বলি, আজ আমরা যেসব বড় বড় আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, মুফতী-মুহাদ্দিস-মুফাসসির, ওলী-বুযুর্গের কথা শুনি, নাম শোনামাত্র তো তাদের কীর্তিগুলো মনে পড়ে যায়, কিন্তু পর্দার অন্তরালের ঐসব নারীদের কথা আমাদের খুব কমজনেরই মনে আসে, যাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও কুরবানী, শ্রম ও মেহনত এবং তালীম ও তরবিয়তের বদৌলতে আজ এঁরা এত বড় বড় ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পেরেছেন।
ইমাম আবু হানীফা রাহ.-কে আজ কে না চেনে! ইমাম বুখারী রাহ.-কে কে না জানে!! কিন্তু ঐসব মা কেমন ছিলেন, যারা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম বুখারী রাহ. প্রমুখের মত মহারত্নগুলোকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন! জন্মের পর সঠিক তরবিয়তে বড় করেছিলেন। যার ফলে তারা চাঁদ সুরুজের মত অন্ধকার দুনিয়ায় আলো বিকিরণ করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ তাদের খিদমাত থেকে আলো পাবে ইনশাআল্লাহ।
এসব বুযুর্গানে দ্বীন যাদেরকে আজ আমরা চিনি, আল্লাহ তাআলার দরবারে তো তারা (ইনশাআল্লাহ) অবশ্যই মকবুল ও মনোনীত হয়েছেন। কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাওয়া এসব মা-জননী যারা এ বুযুর্গদেরকে গর্ভে ধারণ করেছেন, বলুন আল্লাহর দরবারে তাদের মর্তবা কত উঁচু হতে পারে! ভাগ্যবতী এসব মায়ের নামধামের কোনো ফিকির ছিল না। ছিল না পদ-পদবীর কোনো লালসা। ব্যস, আল্লাহর দেওয়া আমানত-সন্তানের এমন তরবিয়ত তারা করে গেছেন, যার ফলে তাঁরা চাঁদ-সুরুজ হয়ে দুনিয়া আলোকিত করেছেন। এ বিবেচনায় চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ তাআলা মাতৃজাতিকে কত উচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন!
মাতৃকোলকে রাব্বুল আলামীন সন্তানের সর্বপ্রথম বিদ্যালয় বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাসে এমন ঘটনা অনেক যে, মা-সন্তানের মুখে যখন দুধ দিবেন, তখন তার যবানে তিলাওয়াত জারি থাকত। সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করে করে সন্তানকে দুধ পান করাতেন মায়েরা। বলুন, যে শিশুর প্রতিপালন ও তরবিয়ত এমন কোলে হয়, জাতির জন্য সে কত উজ্জ্বল আলো হতে পারে! আমার বলার উদ্দেশ্য হল, আপনারা আপনাদেরকে চিনতে ও বুঝতে চেষ্টা করুন।