একটা সময় ছিল যখন প্রায় সব কিছুতেই লাইনে দাঁড়াতে হত। সেই স্কুলে ভর্তির পর থেকেই লাইনে দাঁড়ানো শুরু। প্রতিদিন সকালে স্কুলের মাঠে লাইনে দাঁড়ানো। বিল দিতে ও টাকা উঠাতে ব্যাংকে মানুষের লম্বা লাইন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ফর্ম কিনতে ও জমা দিতে লাইন।
ট্রেন ও বাসের টিকেট কিনতে লাইন। ট্রেন ও বাসে উঠতে লাইন। পোস্ট অফিসে লাইন। প্যাথলজি ল্যাবে লাইন।
লাইনের সামনে থেকে এক জন করে চলে যেত আর লাইন আস্তে আস্তে এগিয়ে যেত।
আমার জীবনে সব থেকে বেশী সময় যে লাইনে দাঁড়িয়েছি তাতে পুরো ৭ ঘন্টা লেগেছিল। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা। মাঝখানের সময়ে কিছু খাই নাই। এমনকি এক গ্লাস পানিও না।
আমি দেখেছি লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের মাঝে এক রকমের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এর মাঝে অন্য কেউ যদি ফাঁকতালে লাইনের সিরিয়াল না মেনে কাজ সেরে নিতে চায় - তাহলে বাকিদের এক জোট হওয়া দেখার মত হয়। আবার লাইন যদি ধীরে আগায় তাহলে লাইনে সেই অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
মানুষের লাইনে দাঁড়ানো দেখে সেই সমাজ ও দেশের অনেক কিছু অনুমান করা যায়।
আমাদের দেশের অনেক ব্যাংকে ও প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য আলাদা লাইন থাকে। মহিলাদের এই লাইন সাধারনতঃ পুরুষদের লাইনের থেকে অনেক ছোট থাকে। তাই অনেকেই কাজ দ্রুত সারার জন্য বাসা থেকে কোন মহিলা সদস্য সাথে নিয়ে যান।
আমাদের নিজেদের জেনারেশন যত লাইনে দাঁড়িয়েছে তত আর কোন জেনারেশন দাড়ায়নি। কেননা আমাদের সময় সবই অ্যানালগ ছিল। সব ফর্মই হাতে লিখে আবার হাতে হাতে জমা দিতে হত।
আমাদের আগের জেনারেশনে মানুষের সংখ্যা অনেক কম ছিল। তাই তাদেরও আমাদের মত এতো বেশী লাইনে দাঁড়াতে হয় নাই।
বর্তমানের জেনারেশন দেখি আর ভাবি। এদের ধৈর্য শক্তি এতো কম কেন? কেননা তাদের খুব কম লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। সব কিছু ডিজিটাল হওয়ায় তাদের আর লাইনে অপেক্ষা করতে হয় না।
কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনেই ফর্ম ডাউন লোড করে তা ফিল আপ করলেই হয়। জমাও দেয়া যায় অনলাইনেই। আবেদনের ফলাফলও পাওয়া যায় অনলাইনেই। ইন্টারনেটের গতি ঠিক থাকলেই হল।