জীবনের শেষ দশকে আসিয়া আহমদ ছফা ‘গাভী বিত্তান্ত’ নামে একখানি উপাদেয় কাহিনী লিখিয়াছিলেন। সঙ্গত কারণেই এই কাহিনীটি জনপ্রিয় হইয়াছে। কোনো কোনো অধ্যাপক ইহাতে আমাদের জ্ঞানদায়িনী মাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সহি বড় আদি ও আসল উষ্মা প্রকাশ করিয়াছিলেন। আবার এক জগদ্বিখ্যাত বিদুষী নারীধর্ম-ব্যবসায়ী আমাকে শোনাইয়াছিলেন : ‘অশ্লীল, অশ্লীল, পাশে নাঙ্গ নিয়ে বসে পড়া যায় না।’ ইহারা বুঝিলাম একান্ত রাগের বশেই অনুরাগ হারাইয়াছিলেন। সম্প্রতি এলেমদার এক সমালোচক নাম অজিত রায় এই রচনার মধ্যে প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক জোনাথন সুইফটের (১৬৬৭-১৭৪৫) প্রভাব আবিষ্কার করিয়াছেন। রায় মহাশয় রায় দিয়াছেন, আহমদ ছফার সাধনার প্রতিটি ক্ষেত্রই যদ্যপি ‘মননশীল ও মৌলিক’, তথাপি ‘আঙ্গিকের ব্যাপারে’ তাহার লেখায় ‘কিছুটা অনুকরণপ্রবণতা’ দেখা যায়। (রায় ২০১৯ : ৩৯৯)
সত্য বলিতে হইলে বলিতে হইবে এই প্রস্তাবটি ‘মননশীল ও মৌলিক’ আবিষ্কার বিশেষ। সমস্যার মধ্যে, শুদ্ধ ‘সাইটগাইস্ট’ বা যুগধর্মের চরিত্রটাই যে এই সমধর্মের মূলে তাহার হিশাবটা রায় মহাশয় লয়েন নাই। ড্রাইডেন, সুইফট, পোপ, কিংবা জনসন ইহারা ইংল্যান্ডের বিপ্লবী যুগের লোক। আহমদ ছফার সহিত ইহাদের সমকামিতার গোড়া এখানেই। অনেকেই জানেন, ‘গাভী বিত্তান্ত’ কাহিনীর কয়েক বছর আগে আহমদ ছফা ‘গাভীর জন্য শোকপ্রস্তাব’ নামে একপ্রস্ত মহান গদ্যও লিখিয়াছিলেন। একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ লন বা ঘাসক্ষেত্রে বিচরণরত একটি গাভী দুই দল লড়াকু মানুষের মধ্যখানে পড়িয়া গুলিবিদ্ধ হইয়াছিল। ব্যাজস্তোত্রস্বরূপ মহাত্মা ছফা লিখিয়াছিলেন, গাভীটি নিশ্চয়ই অপরাধী। তাহার জবানে যুক্তিটা এই ভাষা ধরিয়াছিল : ‘দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে গরুর বেটির অনুপ্রবেশ তাও পেটে বাচ্চা নিয়ে অবশ্যই একটি [অমার্জনীয়] অপরাধ। গরুর বেটি মনুষ্য ছাওয়ালের বিদ্যাশিক্ষার কারখানায় পা দিয়ে সীমানা লঙ্ঘন করেছে, এটা অবধারিত সত্য। গাভীটির পক্ষেও কিছু যুক্তি দাঁড় করানো যেত। গাভীটির মা-বাপ দুজনেই অস্ট্রেলীয়। বাংলাদেশে সে ছিল নবাগত মেয়েশিশু। ঘাসক্ষেত্র এবং জ্ঞানক্ষেত্রের পার্থক্য বুঝে নেয়ার মতো পূর্বধারণা তার ছিল না। অজ্ঞতা অপরাধ নয়, কিন্তু অজ্ঞতার অপরাধও অপরাধ।’ (ছফা ২০০০ : ৪০)
Read more here:
http://ahmedsofa.org/2019/09/09/0037/