মা-বাবা চেয়েছিলেন মাইকেল ডেল একজন বড় ডাক্তার হবেন। এ জন্য মেডিসিনের ওপর পড়াশোনার জন্য কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু খুব ছোট বয়স থেকে ডেলের আগ্রহ ছিল কম্পিউটারে। মাত্র সাত বছর বয়সে একটি ক্যালকুলেটার হাতে পেয়েছিলেন, ব্যাপক আগ্রহের কারণেই ১৫ বছর বয়সে মা-বাবা তাঁকে কিনে দেন একটি অ্যাপল কম্পিউটার। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন এটি ব্যবহার করে ডেল অনেক কিছু শিখবে। কিন্তু যখন দেখতে পেলেন কম্পিউটারের সব যন্ত্রাংশ আলাদা করে ডেল পুরো কম্পিউটারই বিকল করে দিয়েছেন তখন কিছুটা আঘাতই পেয়েছিলেন। কিন্তু ডেলের চিন্তা ছিল এটিকে আবার কিভাবে জোড়া দেওয়া যায় তা শেখা। সেটা তিনি ভালোভাবেই শিখতে পেরেছিলেন।
মাইকেল ডেলের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি টেক্সাসের হাউসটনে। তিনি ডেল টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান ও সিইও। ২০১৬ সালে কম্পিউটার স্টোরেজ জায়ান্ট ইএমসির সঙ্গে ডেল ইনকরপোরেশন একীভূত হয়ে গড়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ডেল টেকনোলজিস।
মাইকেল ডেল বিশ্বের ২৫তম শীর্ষ ধনী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ৩১.৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের ধনীর তালিকায় তাঁর সম্পদ ছিল ৩৪.৩ বিলিয়ন ডলার।
পড়ালেখার জন্য ডেল মা-বাবার ওপর নির্ভর করেননি, করেছিলেন খণ্ডকালীন চাকরি। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন তিনি একটি পত্রিকার সাবস্ক্রিপশনস বিক্রির চাকরি নেন। সেখান থেকে এক বছরে আয় করেন ১৮ হাজার ডলার।
মা-বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী ডাক্তার হওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ভর্তি হয়েছিলেন মেডিসিনে। সেখানে পড়াশোনার খরচের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। এবার তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলেন কম্পিউটার সংযোজন ব্যবসা। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কিনে সেগুলোকে পুরো একটি কম্পিউটারে রূপান্তর করে সহপাঠী ও অন্যদের কাছে বিক্রি করতেন। এভাবেই ১৯৮৪ সালে তাঁর প্রথম কম্পানি ‘পিসি’স লিমিটেড’ নিবন্ধনভুক্ত হয়। একই বছরের মে মাসে নতুন নাম দেন ডেল কম্পিউটার করপোরেশন। কয়েক মাস পর মা-বাবার কাছে গিয়ে তাঁদের কম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন দেখালেন। মা-বাবা দেখলেন প্রায় দুই লাখ ডলার মুনাফা করেছে কম্পানি। তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হলেন ডাক্তারি নয়, কম্পিউটারই মাইকেল ডেলের উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে তিনি পুরোদমে কম্পানিতে মনোযোগ দেন।
১৯৯৬ সালে ডেল ওয়েবের মাধ্যমে কম্পিউটার বিক্রি শুরু করেন। ওই বছর কম্পানি তাদের প্রথম সার্ভার চালু করে। তখন ডেল ডটকম থেকে প্রতিদিনি এক মিলিয়ন ডলার বিক্রি হতো। ২০০১ সালের প্রথম প্রান্তিকে ডেল প্রতিদ্বন্দ্বী কমপ্যাককে অতিক্রম করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিসি কম্পানিতে পরিণত হয়। বাজারের ১২.৮ শতাংশ আসে ডেলের হাতে।
১৯৯২ সালে ২৭ বছর বয়সে মাইকেল ডেল হলেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ সিইও। তাঁর কম্পানি ফরচুনের ৫০০ কম্পানির তালিকায় স্থান পায়। ১৯৯৯ সালে ডেল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘মাইকেল অ্যান্ড সুসান ডেল ফাউন্ডেশন’। বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্যপীড়িত শিশুদের সাহায্যের জন্য তিনি এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০১৭ সালের মে মাসে ডেল তাঁদের ফাউন্ডেশনে এক বিলিয়ন ডলার প্রদান করেন। ১৯৯৯ সালে ডেল একটি বই প্রকাশ করেন তাঁর জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা ও শিক্ষা নিয়ে। যা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য দারুণ শিক্ষণীয়। বিজনেস ইনসাইডার, উইকিপিডিয়া, বিজনেসআইডিয়াস্ল্যাব ডটকম।