ওয়াশিংটন ডি সি-তে অবস্থিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলোজিস্ট র্যান্ডাল প্যাকারের মতে,
"মাত্রাতিরিক্ত উত্তপ্ত পরিবেশে একজন বয়স্ক ব্যাক্তির দেহ থেকে ঘণ্টায় ১ থেকে ১.৫ লিটার [২.১-৩.২ পিন্টস] ঘাম নির্গত হয় এবং কোনো শিশুকে উত্তপ্ত গাড়িতে রেখে দিলে কিংবা একজন অ্যাথলেট যদি রৌদ্রোত্তপ্ত পরিবেশে কঠোর অনুশীলন করে, তবে এদের দেহ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই অতি মাত্রায় উত্তপ্ত এবং পানিশূন্য হয়ে মারা যেতে পারে।"
সাধারণত দেখা যায়, যখন কোনো ব্যাক্তি অতিমাত্রায় তপ্ত আবহাওয়ায় পানিশূন্য হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এর প্রকৃত অর্থ হলো ব্যক্তির দেহের ভেতরের তাপমাত্রা তখন উচ্চ থাকে।
কিন্তু একটু ভিন্নমত পোষণ করেছেন অ্যারিজোনায় অবস্থিত ব্যানার থান্ডারবার্ড মেডিক্যাল সেন্টারে মেডিসিন বিভাগে কর্মরত ডাক্তার কার্ট ডিকসন। তার বক্তব্য, সবসময় এরূপ পরিস্থিতি হবে এটা ঠিক নয়, এর কিছু ভিন্নতাও রয়েছে নির্দিষ্ট সমষ্টির ব্যক্তিদের মাঝে। যেমন- খুব ছোট বাচ্চা এবং বয়োবৃদ্ধ যারা কি না স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভোগেন, তারা না পারে পানি পান করার সময়টি স্মরণ রাখতে কিংবা না পারে কারো সাহায্য ছাড়া পানি পান করতে।
সুতরাং, একজন ব্যক্তির দেহ থেকে কী পরিমাণ পানি নিঃসরণ হলে ডিহাইড্রেশান শুরু হবে? এর যথার্থ জবাব এসেছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সরকারি জরিপে, যা কি না পরিচিত ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস গাইডলাইনস ২০০৯' হিসেবে। সেখানে বলা হয়েছে,
"কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে তার মোট ওজনের ১০% পানি নিঃসরিত হলে মারাত্মক ডিহাইড্রেশনের আশংকা রয়েছে। যদিও সেই নির্দিষ্ট পরিমাপটি বাস্তবিকভাবে করা অসম্ভব। তবে প্রচলিত অভিমত রয়েছে যে, রৌদ্রোত্তপ্ত আবহাওয়ায় যদি ব্যক্তির দেহ থেকে ১.৫ লিটার পর্যন্ত পানি নিঃসরিত হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে তার ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।"
অন্যদিকে দ্য ইউনিভার্সিটি অভ রচেস্টার মেডিক্যাল সেন্টার থেকে বলা হয়েছে,
"ব্যক্তির দেহ থেকে যখন পানির পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রা থেকে কমে আসে, সেই মুহূর্তে আচরণের প্রকৃতিগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন- তৃষ্ণার্ত হওয়া, শুষ্ক ত্বক, ক্লান্তিবোধ হওয়া, হালকা মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বিভ্রম হওয়া, শুষ্ক মুখ, দ্রুত নাড়ি এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সঞ্চালন হওয়া।
যেসব শিশু পানিশূন্যতায় ভোগে, এরা যখন কান্না করে, তখন এদের চোখ থেকে পানি পড়ে না। এদের চোখ কোটরাগত হয়, গাল এবং পেট প্রায় ভেতরে ঢুকে যায়। এমনকি এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি স্তিমিত হয়ে থাকে, আর যখন ত্বকে আলতো করে চাপ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন ত্বকের ভাব অসমতল থেকে যায়।"
থান্ডারবার্ড মেডিক্যাল সেন্টারের ডাক্তার কার্ট ডিকসন’ও এক্ষেত্রে লাইভ সায়েন্সকে তার মত দিয়েছেন, জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন- অবসাদ, ক্লান্তি; যখন দাঁড়াতে যায় তখন প্রচুর ক্লান্তিভাব আচ্ছন্ন করে থাকে, এরূপ সময়ে কদাচিৎ বমিও করতে দেখা যায়। উপরন্তু, এরা এতটাই অসুস্থ থাকে যে, এদের রোগের পেছনে যে ডিহাইড্রেশনই দায়ী, তা শুনেও মুখে আলাদা ভীতির কোনো ছাপ দেখা যায় না।
[Collected]