চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রাটিস, সক্রেটিস, আলেক্সান্ডারের দেশ গ্রিস। ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্বে এথেন্স একটি মহামারি হয়েছিল। তখনকার জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুবরণ করেছিল। বর্তমান করোনাভাইরাসে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত ২ হাজার ১৯২ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১০২ জন, সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ২৬৯ জন।
আবারও চ্যালেঞ্জের সময়ে গ্রিস সারা বিশ্বে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। বহু শতাব্দীর উত্তরাধিকারী, সাম্প্রতিক সময়ে অর্জন করেছে বিস্ময়কর সাফল্য—গ্রিক আমেরিকান অ্যান্ডি মানাতোস ও মাইক মানাতোস জানিয়েছেন।
গ্রিসের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিফফি পাইট আমেরিকান হেলেনিক চেম্বার অব কমার্সকে একটি বার্তায় গ্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেরিয়াকোস মিতসোটাকিসকে এই ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে তাঁর বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করার জন্য প্রশংসা করেছেন। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের প্রতি গ্রিক জনগণের আনুগত্যের বিষয়টিও তুলে ধরেছিলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র ও নিউজ ওয়েবসাইটগুলো গ্রিস সরকার ও জনগণের প্রশংসা করছে।
১০ এপ্রিল ব্লুমবার্গ ‘সংকট মোকাবিলা করতে গ্রিস পারদর্শিতা কীভাবে দেখায়’ শিরোনামসহ একটি অ্যাড ও নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল। করোনাভাইরাস হুমকির প্রতি গ্রিক সরকারের তাৎক্ষণিক ও সাহসী প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়েছে, ‘এথেন্সের প্রথম কোভিড-১৯-এর মৃত্যুর খবর প্রকাশের ৪ দিনের মধ্যে সমস্ত অপরিহার্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ইতালি ও স্পেন যথাক্রমে ১৪ এবং ৩০ দিনের পরে তা করেছে। গ্রিসে অপ্রয়োজনীয় চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মাত্র এক সপ্তাহ পরে এল এটি অন্য দেশের তুলনায় দ্রুত।
দেশটিতে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলেনি। পর্যটননির্ভর দেশ গ্রিস করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দায় পড়বে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রিস। আন্তর্জাতিক চিন্তাবিদেরা মনে করেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে পর্যটকদের পাশাপাশি কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা ছুটে আসতেন এই গ্রিসে, জ্ঞান অর্জনের জন্য ইতিহাসের সাক্ষী এই দেশে, যেখান থেকে শুরু হয়েছে পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্র। নারী মুক্তি আন্দোলন। সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, নাটক, বিশ্বের প্রথম ইউনিভার্সিটি এবং রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর জন্য উন্নত বিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্রিস একটি জ্ঞান অর্জনের পাঠশালা। করোনার প্রভাবে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রিস। গ্রিসের পর্যটন মন্ত্রণালয়টি করোনাভাইরাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সমর্থন করার জন্য ১৪ মাসের ভাউচার জারি করবে।
মন্ত্রণালয় একটি প্রাসঙ্গিক প্রবিধান প্রবর্তন করবে, যা পর্যটক ব্যবসার জন্য তাদের ক্লায়েন্টদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ দেবে। পর্যটনমন্ত্রী হারিস থিওহারিস জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট উদ্যোগটি সপ্তাহের মধ্যেই সংসদে আনা হবে এবং সংসদ সদস্যদের অনুমোদনের জন্য যে খসড়া বিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার একটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ইউরোপীয় কমিশনকে এই পদক্ষেপের সমর্থনের জন্য অনুরোধ করার জন্য একটি চিঠি প্রস্তুত করছে।
https://www.prothomalo.com/durporobash/article