রাসূল (সা.) যখন দুনিয়ায় আগমন করেন, সে সময়টাকে অন্ধকার যুগ বলা হয়। সময়টা ছিল মানবতার ক্রান্তিকাল। পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধ ছিল ভয়াবহ মাত্রায়। নীতিনৈতিকতার তোয়াক্কা ছিল না। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গোষ্ঠীযুদ্ধ চলত বছরের পর বছর। মানবাধিকার ছিল চরমভাবে পর্যবসিত। সবদিকে ছিল ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। মানবতার সেই ক্রান্তিকালে নারী সমাজও চরমভাবে নিগৃহীত ছিল। নারীদের নিয়ে তখনকার সমাজে নানা কুসংস্কারের চর্চা ছিল। ইতিহাস ও কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় পাওয়া যায়, খ্রিষ্টানরা নারীদের পিরিয়ডকালীন তাদের আলাদা গুরুত্ব দিত না। বরং তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে যা খুবই মন্দ একটি বিষয় বলে বিবেচিত। তা ছাড়া এটি মানসিক ও শারীরিক হেনস্তাও বটে। আবার ইহুদি আর অগ্নিপূজারিরা পিরিয়ডের সময় নারীদের ঘর থেকে বের করে দিত। ভেবে দেখুন তো, একজন গৃহিণীকে তার স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের সময় ঘর থেকে বের করে দেয়ার চিত্রটা কতটা অমানবিক! কন্যাসন্তান হলে সম্মানহানিকর মনে করা হতো। কন্যাসন্তানকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। এ ধরনের বহু অমানবিক নারীবিরোধী কুপ্রথা তখনকার সমাজে প্রচলিত ছিল। রাসূল (সা.) দুনিয়ায় এসে এ অশুভ রাহুর কবল থেকে সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটালেন। তিনি এসে নারীদের সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা দিলেন। নারীরাও যে সমাজের অনিবার্য অংশ, তারাও যে সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে, তিনি তাঁর কথা ও কাজে প্রমাণ রাখলেন। এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, নারী ও সুগন্ধি আমার প্রিয়। মুজামে আওসাত ০৬/৫৩।
আরেক হাদিসে এসেছে, আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, আমিও আমার প্রাণাধিক প্রিয় রাসূল (সা.) একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম। (সহি বোখারি হা. ৫৯৫৫)। আরেক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে যাই দান করবে, তার জন্য সওয়াব পাবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দাও, তার জন্যও। (সহি বোখারি হা. ৫৬)।
রাসূলের এসব কথা তখনকার সময়ের, যখন নারীদের কুলক্ষণে মনে করা হতো। অচ্ছুত মনে করা হতো। তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, নারী ঘরের রানি; নারীরা ভালোবাসার পাত্র, ঘৃণার নয়। তাদের অপমান করা যাবে না। সমাজে পুরুষের সমান্তরালে রয়েছে নারীর ন্যায্য হিস্যা। আজ বিশেষত যখন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ইভটিজিংয়ের মতো ভয়াবহ সামাজিক অপরাধের দৌরাত্ম্য চলছে, তখন আমাদের আবার রাসূল (সা.)-এর জীবনচরিত পাঠ করতে হবে। মুসলিমদের জন্য তিনিই অনুপম আদর্শ। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণেই রয়েছে মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি।