অক্সিজেন নামা

Author Topic: অক্সিজেন নামা  (Read 1161 times)

Offline Nayeem

  • Newbie
  • *
  • Posts: 7
  • Test
    • View Profile
অক্সিজেন নামা
« on: July 10, 2023, 05:20:49 AM »
অক্সিজেন ছাড়া এক মুহূর্তও আমাদের পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। মহাবিশ্বের যেখানেই যাই, এই একটা জিনিসের পর্যাপ্ত যোগানের ব্যবস্থা না করে আমাদের এক পা বাড়ানোরও উপায় নেই। নানাভাবে শরীরের অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যাহত হতে পারে। লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম হলে, বাতাসে অক্সিজেন কম থাকলে, কিংবা ফুসফুস যদি আর যতটুকু দরকার ততটুকু অক্সিজেন ধরতে না পারে। এখন করোনায় যেটা হচ্ছে, ফুসফুসের কোষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শরীর আর বাতাস থেকে অক্সিজেন ছেঁকে নিতে পারছে না। তাহলে কী করা যায়? শরীর যদি বাতাস থেকে তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টেনে নিতে পারে, তাহলে তার মৃত্যু অবধারিত। বাতাসে অক্সিজেন আছে মাত্র ২১ ভাগ, বাকিটা প্রায় সব নাইট্রোজেন। স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ সেই ২১ ভাগ অক্সিজেন থেকেই তার প্রয়োজনীয়টুকু ছেঁকে নিতে পারে। কিন্তু যখন ফুসফুস সেটা আর পারছে না, তখন তাকে প্রায় ৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন দিতে হবে যেটাকে আমরা বলি মেডিক্যাল অক্সিজেন। এখন এই অক্সিজেন কীভাবে পাওয়া যায়? আগেই বলেছি অক্সিজেন হচ্ছে এই গ্রহের সবচেয়ে সহজলভ্য বস্তু। বিশ্বাস হয় না? এই যে বিশাল বিশাল সমুদ্রে এত জল, তার দুই ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেন। কিন্তু সমুদ্রই তো সব না। সমুদ্রেরও তলা আছে, সেখানে থেকে শুরু করে পৃথিবীর বাইরের ভাগ যেটাকে ক্রাস্ট বলে, সেটার প্রায় পুরোটাই অক্সিজেনের বিভিন্ন অক্সাইড দিয়ে তৈরি। মাটি, বালি, এসিড, জৈব যৌগ, কোথায় নেই এই অক্সিজেন? ছোটবেলায় আমরা মনে হয় সবাই পড়েছি, যে লবন জলের মধ্যে কার্বনের কাঠি পুঁতে তাতে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিলেই জলের হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন ভেঙে গিয়ে কার্বনের দুই কাঠির মাথা দিয়ে বের হতে থাকে! তাহলে? জলের তো অভাব নেই, জলের মধ্যে কারেন্টের লাইন দিয়ে দিলেই অক্সিজেন পাওয়া যাবে? ভুলেও না! জল আর বিদ্যুৎ খুব একটা বন্ধু না, একটু এদিক সেদিক হলেই কপালে ভীষণ দুঃখ। বইয়ে আমরা ডিসি কারেন্ট দিয়েছি যেটা বেশ সহজ সরল, আমরা বাসার কারেন্টের লাইনে যেটা পাই সেটা এসি, সেটা এদিক সেদিক নাচতে থাকে সবসময়, মোটেই সোজাসাপ্টা না। আর এভাবে ডিসি কারেন্ট দিয়ে জল থেকে অক্সিজেন বানিয়ে সেটা ব্যবহারযোগ্য করতে যে পরিমাণ খরচ আর ঝামেলা তার থেকে সহজ উপায় হাতের কাছেই আছে! কোথায়, কোথায়? জ্বি, নাকের কাছে! মানে বাতাসে! মুখ চুপসানোর কিছু নেই, যদিও বাতাসের ৭৮ ভাগই নাইট্রোজেন আর মাত্র ২১ ভাগ অক্সিজেন, সেই একুশ ভাগই যথেষ্ট কারণ বাতাসের যোগান প্রায় অফুরন্ত। আমাদের শুধুতাকে ঠাণ্ডা করতে হবে! তা কতটুকু ঠাণ্ডা? তা ধরুন গিয়ে প্রায় মাইনাস ২০০ ডিগ্রী! এত ঠাণ্ডার কথা শুনে মাথা গরম হচ্ছে কি? কিন্তু বিশ্বাস করুন, এর থেকে সহজ আর কম খরচের উপায় এখনও মানুষের জানা নেই। বাতাসকে ভীষণ চাপে প্রথমে গরম ও সংকুচিত করে তাকে আবার চাপমুক্ত করা হয়, একই সাথে তরল নাইট্রোজেনের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তরল নাইট্রোজেন খুবই ঠাণ্ডা স্বভাবের, তার আসেপাশে দিয়ে যেই যায় তাকেই ঠাণ্ডা করে ফেলে। তো বাতাসকে এভাবে ঠাণ্ডা করতে থাকলে আমরা তরল বাতাস পেয়ে যাই। জিনিসটা কেমন তাই না? বলছি বাতাস, কিন্তু জলের মত তরল! সেই তরল বাতাসকে একটু কম ঠাণ্ডা করলেই (গরম করা বলছি না কারণ এখনও আমরা মাইনাসের প্রায় ১৯০ ডিগ্রি নীচে!) প্রথমে নাইট্রোজেন উড়াল দেয় -১৯৬ এর আসেপাশে, তারপর কিছুটা আর্গন গ্যাস উধাও হয়, আর পড়ে থাকে অক্সিজেন। অক্সিজেনও উড়াল দিতে শুরু করে -১৮২ ডিগ্রীর আসেপাশে, তখন তাকে খপ করে ধরা হয়। এরপর আরও কিছু কচলাকচলি করে পরিষ্কার করে প্রায় ৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়া যায়। অক্সিজেন কিন্তু তরল অবস্থায় বেশ সুন্দর নীলচে দেখতে। গ্যাস হয়ে গেলে আর রঙচঙ থাকে না। তবে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও অপার্থিব একটা জিনিস যেটাকে বলে নর্দান লাইট বা অরোরা, সেটার কারণ কিন্তু অক্সিজেনের উত্তেজিত নাচানাচি! এক বিচিত্র কারণে অক্সিজেন চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় (সে এক আরেক ইতিহাস!)। সূর্যের সৌরঝড়, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র সব মিলিয়ে অক্সিজেন সবুজ আর লাল আলোর বর্ণালী হয়ে নেচে ওঠে, আর শান্ত নাইট্রোজেন একটু নীলচে বা বেগুনী রঙ নিয়ে দুলতে থাকে। আমাদের প্রাণবায়ুহওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেন আরেক বিশাল রক্ষাকবচ হয়ে আছে পৃথিবীর জন্য। তিনটা অক্সিজেন একসাথে হয়ে তৈরি করে একটা ওজন (Ozone), এমন অসংখ্য ওজনের একটা আবরণ প্রতিমুহূর্তে ঠেকিয়ে দিচ্ছে সূর্যের অতিবেগুনী আলোসহ আরও নানা মহাজাগতিক রশ্মি। এগুলো পৃথিবী পর্যন্ত সরাসরি পৌঁছালে আর দেখা লাগত না, কবে বিলীণ হয়ে যেতাম সব! যখন আমরা সব একসাথে দেখি, তখন মনে হয় কী চমৎকার একটা ব্যবস্থা, সবকিছু যেন খাপেখাপ মিলে যাওয়া। আমাদের যেমনটা দরকার ঠিক তেমনভাবেই যেন সব তৈরি করা। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই এখানে সেখানে। যেন কেউ একজন সুনিপুণভাবে পরিকল্পনা করে তৈরি করেছেন এই ব্যবস্থা। অক্সিজেন বুকে টেনে নিয়ে আমি যতটুকু শান্তি পাই, আমার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নমতের হয়েও আপনি সেই একই শান্তি পাবেন প্রকৃতি থেকে। অক্সিজেনের অভাবে আমার মতই ছটফট করতে থাকবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ। এই মৌলিক জায়গায় এসে সবাই এক হয়ে যায়, সবাই একই প্রকৃতির সন্তান, একটাই গ্রহ পৃথিবীর মানুষ। এই গ্রহের নিয়ম, আমরা মহাবিশ্বের যেখানেই যাই, কখনোই অগ্রাহ্য করতে পারব না।  [Collected]

নাঈম হাসান
ইলিনয় , ইউ এস এ