করোনারি আর্টারি ডিজিজ কি?
হৃদযন্ত্র (হার্ট) – এ রক্ত সরবরাহকারী নালীকে করোনারি আর্টারি বলে। এগুলো সরু নলের মত। এই নালিকার ভিতর গাত্রে চর্বি (কোলেস্টেরল) জমা হয়ে নালীগুলোকে এত বেশি সরু করে ফেলে যে রক্ত চলাচলে বাধা পড়তে পারে। ফলে করোনারি আর্টারি ডিজিজে হৃদযন্ত্রে রক্ত এবং অক্সিজেন কম সরবরাহ হতে থাকে। করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে হার্ট অ্যাটাক আ অ্যানজিনা (বুকে প্রচন্ড ব্যথা এবং চাপ অনুভব করা) – তে আক্রান্ত হয়ে রোগী মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
হার্ট অ্যাটাক কি?
হার্ট অ্যাটাকের মেডিকেল ভাষা হল মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। হৃদ পেশীর কোন একটি অংশে রক্ত সরবরাহ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে যেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।
কোলেস্টেরল কি?
আমাদের সকলের দেহে কোলেস্টেরল আছে। আমাদের দেহই কোলেস্টেরল তৈরী করে থাকে। মাংস এবং গবাদি পশু হতে জাত খাদ্যেও কোলেস্টেরল থাকে। উদ্ভিজ্জ খাদ্যে কোলেস্টেরল থাকে না। কোলেস্টেরল একটি নরম, সাদা, মোমের ন্যায় বস্তু যা রক্তস্রোতে পাওয়া যায়। মজার ব্যপার হল যে আমাদের শরীরের কাজের জন্য কোলেস্টেরল প্রয়োজন। যেমনঃ এটা আমাদের কোষ তৈরীতে এবং খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছু ভাল নয় কথাটা আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রেও সঠিক। বেশি চর্বি জাতীয় খাদ্য খেলে, কম শারীরিক পরিশ্রম করলে কোলেস্টেরল রেড়ে যায় যা হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যান্য কারণ যেমন ডায়াবেটিস, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদির কারণেও কোলেস্টেরল মাত্রা বেড়ে যায়।
কয়েক প্রকার কোলেস্টেরল রয়েছে। যার মধ্যে কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) কোলেস্টেরল এবং উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরল প্রধান।
এলডিএল (কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল
এই ধরণের কোলেস্টেরলকে সব সময়ই "খারাপ" কোলেস্টেরল বলা হয়। কারণ এগুলো রক্তনালীর ভিতরের গাত্রে জমে শক্ত দানার মত হয়ে যায়। এই দানা বড় হয়ে হৃদযন্ত্র বা মস্তিস্কে রক্ত প্রবাদ বন্ধ করে দেয় বা কমিয়ে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এইচডিএল (উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল
এই ধরণের কোলেস্টেরলকে সব সময়ই "ভাল" কোলেস্টেরল বলে। কারণ এগুলো এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। প্রকৃত পক্ষে এইচডিএল কোলেস্টেরল সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত বিপদের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
উচ্চ কোলেস্টেরল হওয়ার সমস্যা
উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরলের সরাসরি কোন উপসর্গ বোঝা যায় না। যতদিন না হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয় ততদিন পর্যন্ত এটি অনাবিস্কৃতই থেকে যায় এবং এই অবস্থায় প্রায় কয়েক বছরও থাকতে পারে।
সাধারণ করোনারি আর্টারি
যখন কোলেস্টেরল কম থাকে তখন রক্তনালীর গাত্র মসৃণ এবং তৈলাক্ত থাকে যাতে সহজেই রক্ত চলাচল করতে পারে।
রক্তনালীর গাত্রে চর্বির দানা জমে যাওয়া
অতিরিক্ত চর্বি জমাট বেধে রক্তনালীর গাত্রে জমা হয়ে রক্ত চলাচল কমে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এলডিএল কোলেস্টেরল কমলে কি সুবিধা হয়?
এলডিএল কোলেস্টেরল কমলে রক্তনালীর গাত্রের জমাট চর্বিও কমে যায়। ফলে হৃদযন্ত্র সহজেই প্রয়োজনীয় রক্ত ও পুষ্টি পায়।
এলডিএল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনের তিনটি উপায় হচ্ছেঃ
পরিমিত খাদ্য
ঔষধ
ব্যায়াম
খাদ্য তালিকায় কোন ধরণের খাদ্য যোগ করতে হবে?
এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্য তালিকায় এমন খাদ্য যোগ করতে হবে যেগুলোর মধ্যে কম মাত্রায় কোলেস্টেরল এবং সম্পৃক্ত চর্বি আছে। সম্পৃক্ত চর্বি শরীরের মধ্যে কোলেস্টেরলে পরিবর্তিত হয়। খাদ্য তালিকায় অধিক আঁশযুক্ত খাদ্য যোগ করতে হবে।
ঔষধ
ঔষধ গ্রহণের ব্যপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
ব্যায়াম
ব্যায়ামের মাধ্যমে এলডিএল কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে এইচডিএল কোলেস্টেরল মাত্রা বাড়িয়ে শক্তি বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নতির মাধ্যমে আয়ু বাড়িয়ে নেওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে নতুন কোন ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে যদি কারও পূর্বেই কোন করোনারি আর্টারি ডিজিজ থাকে।
মনে রাখবেন, মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম ভাল নয়। ওজন কমাতে দীর্ঘ দৌড় শরীরের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। শারীরিক ক্ষয় এড়াতে হালকা কিছু ব্যায়ামই যথেষ্ট।
※ নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের একটি একাডেমিক প্রকাশনা – "কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনের নতুন দিগন্ত" থেকে সংগৃহীত এবং আংশিক পরিমার্জিত।