রাজশাহীর সাঁওতালদের কথা [/size][/color]
ছবির মত ছোট্ট আমাদের দেশ নানা কারনেই বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকে। যে সব বিষয় নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি তার অন্যতম হল, দেশবাসীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আমাদের সেই গর্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আজ অনেকটাই হুমকির মুখে। বিশেষ করে ‘আদিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত জাতিগোষ্ঠীগুলির সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার প্রসঙ্গটি প্রায় বিপন্ন। রাজশাহী অঞ্চলের সাঁওতালদের সমাজ ও সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা সরেজমীন পর্যবেক্ষণ করলে একরাশ হতাশা এসে ভিড় করে। কী রকম অবহেলার মাধ্যমে যে তাদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে চলেছে! এদিকে কে দেখবে?
রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে সাঁওতালদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের দৈহিক গঠন বাঙ্গালী হিন্দু কিংবা মুসলমানদের মত নয়। গায়ের রঙ কালো, নাক চ্যাপ্টা, ঠোট মোটা, চুল কোকড়ানো এবং দেহের মাঝারী ধরনের উচচতা প্রভৃতি দৈহিক বৈশিষ্ঠ্য এদেরকে আদি অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীর প্রাক-দ্রাবিড় বলে চিহ্নিত করে দেয়। সাঁওতালরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত। সাঁওতালী ভাষায় এই গোত্রগুলিকে ‘প্যারিস’ বলা হয়। গোত্রগুলি হচেছ হাঁসদা, মুরমু (মুর্ম্মু), হ্যামব্রম, মারান্ডি, সোরেন (সরেন), টুডু, বাসিক, কিস্কু, বেশরা, চুঁড়ে, পাউরিয়া ও চিলবিলি। তাদের নামের সাথে গোত্র উল্লেখ থাকে। যেমন তাদের দু’একটি নাম- লুসিয়া হেমব্রম, রজনী মুর্ম্মু ইত্যাদি। সাঁওতালরা জড় উপাসক। সূর্য তাদের প্রধান দেবতা। এছাড়াও তারা 'মবাংবুরো', 'বোঙ্গা' ইত্যাদি দেব দেবীর পূঁজা করে থাকে। তাদের কল্যাণ দেবতার নাম 'ধরোম'।
সাঁওতালদের ‘আদিবাসী’ বলা হলেও তাঁরা কিন্তু এ দেশের আদিবাসী নন। এঁদের ইতিহাস ও ‘আদিবাসী’ শব্দের সংজ্ঞা পর্যালোচনা করলে রাজশাহী অঞ্চলের সাঁওতাল, ওরাওঁ, পাহাড়িয়া, মাহালী, প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠীর মানবমন্ডলীকে বাসস্থানগতভাবে আদিবাসী বলা যায় না। কারণ এঁদের আদি বাসস্থান এখানে নয়। ভারতের বিহার রাজ্যের সাঁওতাল পরগণার অর্ন্তগত রাজমহলের পাহাড়, ছোট নাগপুর, পালামৌ দামন-ই কোহ্ প্রভৃতি স্থানে তারা বসবাস করত। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার এই অঞ্চলসমূহে রেলপথ স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, চা বাগান তৈরী, হালচাষ প্রভৃতি কাজে তারা এদিকে আসতে থাকে। তা ছাড়া, রাজশাহী, মালদহ, বগুড়া, দিনাজপুর অঞ্চলের বড় বড় ভূ-স্বামী ও জমিদারগণ বন-জঙ্গল বিনাশ করে কৃষি জমি উদ্ধারের কাজে তাদের শ্রমিক হিসেবে নিয়ে আসতেন। কাজ শেষে এসব শ্রমিকদের কেউ কেউ তাদের মূল বাসস্থানে ফিরে গেলেও, কিছু লোক আস্তে আস্তে বসতি গড়ে তোলে। এখন বরেন্দ্র অঞ্চলে যে সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, পাহাড়িয়া, হাজং প্রভৃতি জাতি বাস করছে, তারা ঐ সব শ্রমিক জনগোষ্ঠীর অধ:স্তন বংশধর।
তাহলে তাদের আদিবাসী কেন বলি? ব্যাখ্যাটা সাদামাটা। যেমন, প্রাচীন কাল থেকেই তারা পূর্ব-পুরূষদের নিকট থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। নিজেদের সামাজিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় তারা রক্ষণশীল। তাদের নিজস্ব ভাষা, আলাদা দৈহিক গঠনসহ অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও সত্তা রয়েছে, যা তাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্টী থেকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। তাদের আচার-আচরন, অনুষ্ঠানাদি বিংশ শতাব্দীতেও আদিম পদ্ধতিতেই পরিচালিত হয়ে আসছে। তাই তারা আদি বাসস্থান ব্যতীত ‘আদিবাসী’ হিসেবে পরিচিত। সাধারণ অর্থে তাদের উপজাতিও বলা হয়ে থাকে। আদিবাসী কি উপজাতি সেটা বড় কোন বিষয় নয়। তারা আমাদের ভাই, প্রতিবেশী-বন্ধু। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
দুঃখজনক হল যে, সাঁওতালদের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। ইংরেজ সরকার ও জমিদারগণ নিজেদের প্রয়োজনেই সাঁওতালদেরকে বরেন্দ্র অঞ্চলে এনে কাজে লাগিয়েছিল। তবে ব্যাপকভাবে তারা সাঁওতাল পরগণাতেই বসতি স্থাপন করেছিল। তারা বন জঙ্গল কেটে জমি বের করত। ঐ সময় খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা বাংলাদেশের বরেন্দ্র এলাকায়ও চলে আসে অনেকেই। এভাবে রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে তারা ব্যাপকভাবে বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু অত্যাধিক পরিশ্রমী হওয়া সত্বেও সাঁওতালরা বরাবরই থেকেছে অসহায় ও দরিদ্র। কেননা বরেন্দ্র এলাকার জমি চাষযোগ্য করার পরও তারা জমির মালিক হতে পারেনি খাজনা ও জমিদারদের কারণে। জমি চাষযোগ্য হলেই জমিদার খাজনা চেয়ে বসত, এবং সাঁওতালরা তখন অন্য জঙ্গল পরিস্কার করে জমি তৈরী করত, বসতি স্থাপন করে চাষবাস শুরু করত। এভাবেই বরেন্দ্র এলাকার হাজার হাজার একর জমি তাদের প্রচেষ্টায় চাষযোগ্য হয়েছে কিন্তু সাঁওতালরা দারিদ্রের তিমিরেই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মতই সাঁওতালদের সংখ্যা নিয়েও অ¯পষ্টতা আছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ ও ১৯৮১ সালের আদম শুমারীতে আদিবাসীদের আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি। তাদের জেলা ভিত্তিক কোন হিসাবও দেওয়া হয়নি। তবে ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যূরো প্রদত্ত তথ্য অনুসারে সমগ্র বাংলাদেশে সাঁওতাল পরিবারের সংখ্যা ৪০,৯৫০ টি এবং মোট জনসংখ্যা ২,০২,৭৪৪ জন।
বর্তমান রাজশাহী জেলায় সাঁওতালদের সংখ্যা নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পরিসংখ্যানের মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, খ্রিস্টান মিশনারী সংস্থা প্রদত্ত তথ্যকে এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। কারণ, তারা মাঠ পর্যায়ে কর্মতৎপর। ১৯৮৫ সালে আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায় রাজশাহী জেলায় সাঁওতাল সংখ্যা ৪১,০০২ জন।
বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালরা কি সনাতন ‘সাঁওতাল’ আছে? এর খুব সংক্ষিপ্ত এবং অতিশয় সত্য উত্তরটি হচ্ছে -না। শুধু সাঁওতাল সম্প্রদায় নয়, বরেন্দ্র এলাকার আদিবাসীদের একটি বিরাট অংশ খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে খ্রিস্টান মিশনারীদের হাতে পড়ে। সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময় থেকেই খ্রিস্টান মিশনারীরা টার্গেট নির্ধারণ করেছিল এদেশের উপজাতীয় লোকদের। বিশেষ করে নিুবর্ণের মানুষ, অভাবগ্রস্থ, কোন মারাত্বক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের (যেমন, কুষ্ঠ রোগীদের)। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আদিবাসী লোকজন, মধ্য অঞ্চলের (গারো পাহাড় অঞ্চলের) উপজাতীয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীরা মিশনারীদের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। এসব জেলায় অপেক্ষাকৃত ব্যাপকভাবে খ্রিস্টান জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহীর সাঁওতালদের অবস্থাও তাই। খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের মাঝে ধর্ম প্রচার করতে যেয়ে তাদেরকে নানাবিধ আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। অতীতেও দিয়েছে, এখনও দেয়। যদিও এ সকল সুবিধার খুব সামান্ন অংশই দরিদ্র সাঁওতাল পরিবারগুলি পেয়ে থাকে। তারপরও দেখা গেছে, মিশনারীদের কল্যাণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার কারণেই বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালরা ব্যাপকভাবে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করছে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আগ্রহে ইংরেজ সরকারের প্রণীত ১৮১৩ সালের সনদ আইনের মাধ্যমে এদেশে প্রথম খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তর কার্যক্রম শুরু হয়। তার দশ বছর পর ১৮২২ সালের হিসেবে দেখা যায় এদেশে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০৩ জনে। সেই থেকে এদেশে খ্রিস্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ১৯৪১ সালে বাংলায় খ্রিস্টান সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪২৬ জন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্র্ব-পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে খ্রিস্টান সংখ্যা ছিল ১,০৬,৫০৭ জন এবং ১৯৬১ সালে তা দাঁড়ায় ১,৪৮,৯০৩ জনে।
১৮৮১ সালে রাজশাহী জেলায় (বর্তমান রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও নবাবগঞ্জসহ বৃহত্তর রাজশাহী জেলা) খ্রিস্টান সংখ্যা ছিল মাত্র ১২১ জন। ১৯৩১ সালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫২৯ জনে, ১৯৬১ সালে ৮৩০৩ জন। বরেন্দ্রের অন্য জেলাগুলিতেও একই হারে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এভাবে বরেন্দ্র এলাকায় খ্রিস্টান জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। ধর্মান্তরিতদের সিংহভাগই রাজশাহীর আদিবাসী পরিবারের, বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের।
ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছে আদিবাসীদের ধর্ম ও তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। খ্রিস্টান হওয়ার কারনে তাদের পূর্বের ধর্মমত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাদ দিয়ে তারা খ্রিস্টীয় জীবনযাত্রার আলোকে নিজেদের ঢেলে সাজিয়েছেন। প্রতিটি সাঁওতাল পল্লী ধর্মীয় কারণে আজ দ্বিধা বিভক্ত। একদল সনাতন বিশ্বাসী সাঁওতাল। অন্যদল নব্য খ্রিস্টান সাঁওতাল। প্রায় প্রতিটি সাঁওতাল পল্লীতে গীর্জা নির্মিত হয়েছে। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার দেওপাড়া ইউনিয়নের একটি সাঁওতাল পল্লীর একটি গবেষণা চিত্র এখানে উল্লেখ করা যায়। পল্লীটিতে ১৩২টি সাঁওতাল পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৬৭৮ জন। জরীপে দেখা গেছে তাদের মধ্যে চিরায়ত সাঁওতাল এখন ৪৩৪ জন অর্থাৎ ৬৪% আর খ্রিস্টান হয়েছে ২৪৪ জন অর্থাৎ ৩৬%। এই চিত্র অন্যান্য সাঁওতাল বসতিতেও লক্ষ্যণীয়।
এ অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে খাবারের ব্যাপারে মুসলমান ও হিন্দু সমাজের প্রভাব আছে। যেমন, অনেক সাঁওতালই গরুর গোস্ত খায় না, আবার অনেকে শুকুরের গোস্ত খায়না কিন্তু গরুর গোস্ত খায়। তবে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান পরিবারগুলিতে এসবের কোন বাছ-বিচার নাই। পোশাকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সনাতনদের চেয়ে ধর্মান্তরিতরা বেশ পরিপাটি পোশাকে থাকে। নতুন প্রজন্মের সাঁওতাল তরুণেরা শার্ট-প্যান্ট, জুতা, ক্যাপ ইত্যাদি পরিধান করছে। বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে তাদের রীতি-নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিয়ের প্রচলিত সনাতন রীতি আর মানছেন না। তাদের বিয়ে গীর্জাতেই অনুষ্ঠিত হচেছ। অবশ্য ধর্মান্তরিত অনেক সাঁওতাল গীর্জায় বিয়ে করলেও বাড়ীতে এসে সনাতন নিয়ম কানুন পালন করে থাকে। এভাবে ধর্মান্তর তাদের নিজস্ব উৎসব-অনুষ্ঠানের ধরণ ও ধারা পাল্টে দিয়েছে। ধর্মান্তরিতরা এখন বড় দিনের উৎসব পালন করছে। খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করার ফলে তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থ সকল ক্ষেত্রেই উন্নততর সুবিধা পাচেছ বটে কিন্তু তাদের সনাতন সংস্কৃতি হারিয়ে যাচেছ।
আমি কোন নৃতত্ববিদ নই। বাল্যকালে দাদার আখের জমিতে দল বেঁধে এঁদের কাজ করতে দেখতাম। অসম্ভব রকমের সরলতা এঁদের ভেতরে খুঁজে পেতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সুযোগ পেলেই আদিবাসী পল্লীগুলিতে ঘুরতে যেতাম। এঁদের জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করত। আজ কত বছর পার হয়ে গেল! সাঁওতালরা তেমনই আছে। অভাব দূর করতে গিয়ে তারা ধর্ম বিসর্জন দিয়েছে। হারিয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটা আমাকে খুব নাড়া দেয়।
রাজশাহী অঞ্চলের প্রত্যন্ত অনাবাদি গ্রামাঞ্চলের এই জনগোষ্ঠী তো এই মাটিতে বেড়ে ওঠা আর দশ জনের মতই সাধারন মানুষ। সমান ভোটাধিকার রয়েছে তাদের । অবশ্য অনেকেই তাদের নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্ঠা করেন। কিন্তু তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে এদেশের কেউ মাথা ঘামায় বলে মনে হয় না। তাদের সংস্কৃতির বর্তমান এই সংকটকালে এখন যেমন সবাই নিশ্চুপ, অতীতেও তাই ছিল। অতীতে হিন্দু সম্প্রদায় তাদের আত্মীকরণের চেষ্টা করেনি, মুসলমান সম্প্রদায়ও তাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতে সাহস দেখায়নি। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের এই উপেক্ষিত মনোভাব এবং শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার নিশ্চয়তা বোধ থেকে সাঁওতালরা খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণের দিকে ঝুকছে। তারা ধর্মান্তরিত হচ্ছে, সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে এদেশের সাংঙ্কৃতিক ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল ধারা। এমন একদিন বেশী দূরে নয়, যে দিন বরেন্দ্র অঞ্চলে সনাতনপন্থী একজন সাঁওতাল খুঁজে পাওয়াও দুস্কর হবে।