ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর অনুমতি না পাওয়ায় এখনো শুরু হয়নি কাটা পড়া সাবমেরিন কেবলের সংস্কারের কাজ। এ অনুমতি পেতে অপেক্ষা করতে হবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। আর অনুমতি পেলে ১২ জুলাই সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের ডিজিএম মো. শাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে তিনি জানান, ৬ জুন সিঙ্গাপুর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের তলদেশে থাকা সাবমেরিন কেবলের ইস্ট সেগমেন্ট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গতি শ্লথ হয়ে গেছে। কেননা বাংলাদেশের অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়। এখন এ ব্যান্ডউইডথ নিয়ে আসা ব্যাহত হওয়ার কারণে বর্তমানে ইন্টারনেটে ধীরগতি পাওয়া যাচ্ছে।
মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি পেতে সাবমেরিন কেবলের ওয়েস্ট সেগমেন্ট থেকে (ফ্রান্স, ইতালি) কিছু ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে দেশে ব্যান্ডউইথের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ কভারেজ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ইন্টারনেট সংযোগের ধীরগতিতে পড়তে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
সাবমেরিন কেবলের সংস্কারের কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে একটি সমস্যা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রের তলদেশে থাকা সাবমেরিন কেবলের সংস্কার কাজ শুরু জন্য ওই দেশের নৌবাহিনীর অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে। তবে সংস্কার কাজ শুরুর জন্য আমরা কনসোর্টিয়াম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। তারা জানিয়েছে এ সমস্যা সামাধান করতে ১২ জুলাই নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সমুদ্রের তলদেশে থাকা ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের সংস্কার কাজ ১২ জুলাই শুরু হলে ১৫ বা ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের জন্য শুধু একটি মাত্র সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীল। এটি হচ্ছে ১৬ দেশের সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়াম (জোট) সাউথ এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফোর (সি-মি-উই-ফোর) নামে সাবমেরিন কেবল সংযোগ। বাংলাদেশের এটি ছাড়া বিকল্প না থাকায় বিভিন্ন সময়েই এ সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন হলে বা মেরামতের জন্য বন্ধ রাখা হলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। আর প্রতিবেশী দেশগুলোয় একাধিক সাবমেরিন কেবল সংযোগ থাকায় বর্তমানে ইস্ট সেগমেন্ট বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
তাই তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে একটি কেবলের ওপর নির্ভর না করে আরো একটি সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হতে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়। এটি হলে সি-মি-উই-ফাইভ সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
এদিকে সাবমেরিন কেবল ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে এবং দেশে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর লক্ষ্যে গত ৫ জানুয়ারি ৬ প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল-আইটিসি লাইসেন্স দেয় সরকার। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হল নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ৬ মাসের মধ্যে আইটিসি লাইসেন্স প্রাপ্তদের কাজ শুরু করতে হবে। আইটিসি লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করলে সাবমেরিন কেবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও তখন তেমন সমস্যা হবে না।