Recent Posts

Pages: 1 ... 7 8 [9] 10
81
Career Guidance / Navigating the Dynamic Career Path of a Video Editor
« Last post by Mahfuuzur Rahman on March 31, 2024, 01:29:36 PM »
Navigating the Dynamic Career Path of a Video Editor

Video editors now play a crucial creative role in addition to being behind-the-scenes technicians in an era where visual storytelling rules the internet world. As more and more material is produced online and on different platforms, there is an increasing need for qualified video editors, which opens up a wide range of job options in many different sectors. Let's examine the abilities, difficulties, and opportunities that define the dynamic professional path of a video editor.

The Skill Set

Video editing is a complex skill that calls for a combination of technical expertise and creative sensibility. It's not just about cutting clips together. A competent video editor needs to be well-versed in editing programmes like DaVinci Resolve, Final Cut Pro, and Adobe Premiere Pro. Editors can modify film, apply effects, and create engaging narratives by becoming proficient with these tools. Furthermore, a video editor's storytelling skills and acute attention to detail are invaluable. Editors may create compelling stories that captivate audiences by skillfully combining raw footage with an awareness of rhythm, timing, and visual aesthetics. Beyond technical proficiency, close collaboration and communication are necessary when working with directors, producers, and clients to realize their vision.

Industry Diversity

Video editing's adaptability goes beyond conventional limits and presents potential in a wide range of industries. Video editors are essential in determining the plot and emotional resonance of motion pictures and television shows. Expert editors contribute to the immersive experience that enthrals audiences worldwide, whether they are working on episodic television shows or blockbuster films. Video editing has uses in corporate communications, advertising, education, and other fields than entertainment. Businesses use video content to engage customers, communicate brand messaging, and increase conversions in the digital age. Video editors are integral to raising brand identity and improving communication tactics, whether they are producing business presentations, training modules, or promotional videos.

Challenges and Rewards

Although there are countless creative opportunities in the field of video editing, there are drawbacks as well. The fast-paced business of video production is full with tight schedules, picky clientele, and technological challenges. In order to overcome challenges and produce excellent work under duress, editors need to demonstrate their capacity to adapt and solve problems. But there are also lots of benefits associated with a profession in video editing. The many rewards that come with this line of work include the pleasure of working with skilled professionals, the satisfaction of seeing a project through to completion, and the delight of evoking emotions through visual storytelling. Additionally, because digital media is always changing, video editors are always learning new things and improving their craft, which keeps their work interesting and dynamic.

Future Outlook

Video editors' roles will continue to change in tandem with customer tastes and technological advancements. There are more opportunities for creative exploration and invention thanks to the emergence of streaming platforms, virtual reality, and immersive media. Video editors will continue to be in great demand across industries if they embrace new trends, adjust to new technologies, and hone their art.

In conclusion, individuals who have a passion for visual storytelling and a dedication to perfection will find a wealth of chances in the professional path of a video editor. By combining technical expertise, artistic vision, and flexibility, video editors can create meaningful jobs that have a global influence on viewers. Thus, keep in mind that every cut you make, whether you're editing a social media snippet, a business video, or a blockbuster movie, has the ability to inspire viewers and form narratives.


By- MD. Imon Al Rashid Utswa
ID: 221-23-036
Dept: JMC
82
The Significance of Early Employment: Building Blocks for a Brighter Future

In the journey of personal and professional development, early employment serves as a crucial cornerstone. It not only provides financial independence but also fosters essential skills, shapes character, and offers invaluable insights into the world of work.
Early employment offers individuals the opportunity to acquire and refine a diverse set of skills. Whether it's communication, time management, problem-solving, or teamwork, these competencies are honed through real-world experience, laying a solid foundation for future career success.
Being employed from a young age instills a strong work ethic. Understanding the value of hard work, responsibility, and commitment early on can significantly influence one's professional trajectory. It cultivates perseverance and resilience, qualities that are indispensable in navigating the challenges of the workplace.
Managing finances is a fundamental life skill. Early employment exposes individuals to budgeting, saving, and financial planning, empowering them to make informed decisions about money. Such financial literacy equips them with the tools to achieve financial stability and independence later in life.
Building professional networks is vital for career advancement. Early employment provides a platform to connect with mentors, colleagues, and industry professionals, fostering valuable relationships that can open doors to future opportunities, mentorship, and guidance.
Beyond professional development, early employment contributes to personal growth. It builds confidence, independence, and a sense of accomplishment. Through overcoming challenges and achieving milestones in the workplace, individuals develop self-awareness and a deeper understanding of their strengths and weaknesses.
In conclusion, early employment is not just about earning a paycheck; it's about laying the groundwork for a fulfilling and successful future. It equips individuals with essential skills, instills valuable lessons, and opens doors to endless possibilities. Embracing early employment opportunities sets the stage for a lifetime of growth, fulfillment, and professional achievement.


By- Jenia Afroz Jowya
ID: 221-10-940
Dept: English
83
জাতিসংঘে চাকরি পেতে আবেদনের টিপস


প্রথমবার আবেদন করে কর্মী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন খুব একটা সহজ হয় না। কিছু বিষয়ে ধারণা থাকলে জাতিসংঘের চাকরির আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

জাতিসংঘে কাজ করে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন উদ্যোগে অবদান রাখার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখা, মানবাধিকার রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ প্রতি বছরই আগ্রহীদের জন্য চাকরির সুযোগ দেয়।

তবে প্রথমবার আবেদন করে কর্মী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন খুব একটা সহজ হয় না। কিছু বিষয়ে ধারণা থাকলে জাতিসংঘের চাকরির আবেদন গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।


জাতিসংঘ একাধিক সংস্থা, তহবিল এবং প্রোগ্রামের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল সংস্থা, যা কয়েকটি ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে। এর আওতায় রয়েছে স্বাস্থ্য (ডব্লিউএইচও), শিশু (ইউনিসেফ), শরণার্থী (ইউএনএইচসিআর), খাদ্য নিরাপত্তার (ডব্লিউএফপি) মতো অঙ্গসংগঠন। যার প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব সাংগঠনিক কাঠামো এবং কার্যক্রমের আওতা। জাতিসংঘের কোন সংস্থাটিতে আপনার আগ্রহ, তার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আছে কি না আবেদন করার আগে জেনে নিন। আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দিষ্ট সংস্থার কাজ ও অবস্থান জানলে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হবে।

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে কি না দেখুন

জাতিসংঘের সব সংস্থায় শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষার দক্ষতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজন হয়। আবেদন করার আগে এসব বিষয়ে অবগত থাকা আবশ্যক। জাতিসংঘ প্রায়শই গ্র‍্যাজুয়েট ডিগ্রি, ইংরেজি বা ফরাসি ভাষায় দক্ষতা এবং প্রাসঙ্গিক পেশাদার অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রার্থীদের আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করে। বহু-সাংস্কৃতিক পরিবেশে কাজ করার ক্ষমতা থাকলে আবেদনকারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। 


আবেদন করার সময় কিছু বিষয়ে নজর দিন

সাদামাটা আবেদনপত্র খুব একটা আকর্ষণীয় হয় না বিধায় তা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আবেদন করার সময় কাজের বিবরণের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উল্লেখ করুন। আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটার সঠিকভাবে লিখুন। টিমওয়ার্ক, যোগাযোগ, জবাবদিহিতা এবং সৃজনশীলতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে আপনার দক্ষতা উল্লেখ করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা কীভাবে উপকারে আসবে তা  উপস্থাপন করতে জাতিসংঘের দক্ষতা কাঠামো ব্যবহার করুন।

সংস্থার মূল্যবোধের প্রতি আপনার অঙ্গীকার হাইলাইট করুন

জাতিসংঘ সততা, পেশাদারিত্ব এবং বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মানকে বিবেচনা করে। আপনার আবেদনে এসব বিষয়ের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করুন। আপনি কীভাবে পেশাদার বা স্বেচ্ছাসেবী কাজে মূল্যবোধ ধরে রেখেছেন সেসবের উদাহরণ দিন। বিভিন্ন দলে কাজ করার সময় কিংবা নেতৃস্থানীয় প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে কীভাবে পরিষেবা দিয়েছেন তা উল্লেখ করুন। আপনার শেখার আগ্রহ আবেদনপত্রে উপস্থাপিত হলে গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন

প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। জাতিসংঘের সব সংস্থার নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মূল্যবোধ এবং চাকরিভেদে নির্দিষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে আপনার দক্ষতা ও জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষমতা মূল্যায়ন করা হবে। জাতিসংঘের দক্ষতা কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রস্তুতি নিন এবং আপনার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এসব দক্ষতা প্রদর্শন করে এমন সুনির্দিষ্ট উদাহরণের কথা মাথায় রাখুন।

ধৈর্যশীল এবং অবিচল থাকুন

জাতিসংঘের চাকরির আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং প্রতিযোগিতামূলক হয় বিধায় আবেদন জমা দেওয়ার পর অপেক্ষা করতে হয়। যা কয়েক মাসব্যাপী হতে পারে। আপনার দক্ষতা, নেটওয়ার্কিং এবং জাতিসংঘের মিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার সুযোগ অনুসন্ধান করতে সেই সময় কাজে লাগাতে পারলে ভালো হবে। প্রথমবার চাকরি না পেলেও চেষ্টা করতে থাকুন। অতীতের প্রক্রিয়া থেকে ধারণা নিতে পারলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।

নেটওয়ার্কিং করুন

নেটওয়ার্কিং আপনার জাতিসংঘে চাকরি করার স্বপ্নপূরণে মূল্যবান হাতিয়ার হতে পারে। পেশাদার নেটওয়ার্কিং সাইট, জাতিসংঘের অ্যাসোসিয়েশন ইভেন্ট বা প্রাসঙ্গিক সেমিনার এবং ওয়েবিনারের মাধ্যমে জাতিসংঘের বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। জাতিসংঘের কার্যক্রমের ধারণা, আবেদনের জন্য টিপস এবং আসন্ন সুযোগ সম্পর্কে তথ্য পেতে এটি বেশ উপকারে আসবে। আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে জাতিসংঘ সম্পর্কিত অনলাইন কোর্স বা ভাষা ক্লাসসহ বিভিন্ন সুযোগ অনুসন্ধান করতে থাকলে জাতিসংঘের কর্মী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে পারবেন আপনিও।

Source: https://bangla.thedailystar.net/youth/career/news-570686
84
ডায়াবেটিস এখন শুধু উন্নত দেশের একটি রোগ নয়। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শহরের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও ডায়াবেটিসের সংখ্যা বাড়ছে। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, বংশগত ধারা ইত্যাদি কারণে বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডায়াবেটিসের সঙ্গে বসবাস মানে হলো জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিক সময়ে সঠিক খাদ্য পরিমাণ মতো গ্রহণ করা।

সবারই জানা, ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ফল মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে! এমন কিছু ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কোন কোন ফল এড়িয়ে চলা উচিত? লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের প্রতিবেদনে রসালো এমন ৬টি ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।

আম
চোখের সামনে আম দেখলে লোভ সামলানো মুশকিল। তবে মনে রাখতে হবে, আমেও কিন্তু চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে। ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।

আঙুর
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আঙুর। সুস্বাদু ফলটিতে ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে। তবে এতে শর্করার পরিমাণও বেশ ভালোই থাকে। ৮৫ গ্রাম আঙুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।

আনারস
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। মিষ্টি-রসালো ফলটি দেখলে, কার না জিভে পানি আসে! তবে জেনে রাখা ভালো, আনারসে চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে! ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ব্লাড সুগার লেভেলের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আনারস বেশি না খাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় যে কারণে ড্রাগন ফল রাখা উচিত

তরমুজ
পুষ্টি গুণে ভরা একটি ফল তরমুজ। এতে ফাইবার এবং ক্যালোরি কম থাকে। হাফ কাপ তরমুজে প্রায় পাঁচ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি না খাওয়াই ভালো।

কলা
এই ফলটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কলায় থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কিডনির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে কলাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। আর কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব একটা উপকারী না। তবে মাঝেমধ্যে এক-আধটা কলা খাওয়া যেতেই পারে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তবে কলায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে।

সবেদা
বাদামী রঙের ফল এবং দানাদার স্বাদ যুক্ত সবেদা প্রাকৃতিক মিষ্টিতে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদায় প্রায় ৭ গ্রাম শর্করা থাকতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করাও উচ্চ পরিমাণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।


Source:https://www.somoynews.tv/news/2021-11-14/
85
ডায়াবেটিক রোগীদের কঠোর নিয়মকানুন মেনে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু রোজা থাকার কারণে এ কঠোর নিয়মকানুনে পরিবর্তন হয়। রোজা রাখার কারণে খাবারের দীর্ঘ বিরতিতে এ সময় নিজেকে কীভাবে সুস্থ রাখবেন এবং কোন কোন প্রয়োজনীয় বিষয় মেনে চলবেন তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

রোজায় সবারই লাইফস্টাইলে একটি বড় পরিবর্তন আসে। এ পরিবর্তন কারও সমস্যা না হলেও রোগীরা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা অসুবিধায় পড়েন।
 
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এ সময় খাবার ও ওষুধের সমন্বয় করার বিকল্প উপায় নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ খাবার আর ওষুধ গ্রহণের সময় পরিবর্তন হওয়ায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমা বা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সমস্যা মোকাবিলা করতে রমজানের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তা হলো:
 
আরও পড়ুন: সেহরিতে যে খাবারগুলো আপনাকে সারাদিন এনার্জি দেবে
 
১। যাদের সকালে নাস্তার আগে বা পরে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হয়, সেটি তারা ইফতারের সময় খাবেন। আর রাতের ওষুধ খাবেন সেহরির সময়। দুপুরের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে নিতে হবে।
 
২। ডায়াবেটিস রোগীদের কিছুক্ষণ পর পর অল্প খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোজার সময় তাদের প্রায় ১৪/১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। ফলে ভোরে ওষুধের মাত্রা একই রকম থাকলে বিকেলের দিকে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের জন্য। এজন্য ভোরে ইনসুলিনের পরিমাণ অর্ধেকের কাছাকাছি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
 
৩। ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রোজার সময় তাদের এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন যাদের শারীরিক শ্রমের দরকার আছে কিন্তু ওজন কমানোর দরকার নেই, তারা তারাবিহ নামাজ পুরোটা পড়লে শারীরিক শ্রম হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু যাদের ওজন কমানোর দরকার আছে, তাদের তারাবিহ নামাজের পর ২০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। তবে বিকেলে কোনোভাবেই শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না।
 
৪।  ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।  যেমন রঙিন ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, টক দই ইত্যাদি। খেজুর খেলে মাত্র একটা বা দুইটি খেতে পারেন। এর বেশি নয়। এ সময় ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো।
 
আরও পড়ুন: অ্যাপল ওয়াচে বাঁচল ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর প্রাণ!
 
৫। রোজা রাখা অবস্থায় সুগার বেশি কমলে বা বেড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ধর্মের বিধিবিধানে উল্লেখ রয়েছে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখতে পারলে তা পরবর্তী কোনো সময়ে রাখা যাবে।
 
সূত্র: বিবিসি


86
মহান আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। তিনি বান্দার ভুলত্রুটি, পাপতাপ, যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা ও মার্জনা করেন এবং দয়া করুণা বর্ষণ করেন।

আল্লাহ বান্দাকে নানানভাবে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যারা তাদের প্রতি মসিবত আপতিত হলে বলে, “নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।” তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।

বান্দা ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করলে আল্লাহ আজাব দূর করে দেন। কোরআনের বর্ণনা, ‘আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না এবং তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে তখনো আল্লাহ তাদের শাস্তি দেবেন না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)

মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে তার মধ্যে পাপ-পুণ্যের সম্ভাবনা দিয়ে রেখেছেন। তাই দোষে-গুণে মানুষ।


কোরআনে রয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাতে (মানব সত্তায়) অপরাধ প্রবণতা ও তাকওয়া বা সতর্কতার জ্ঞান দান করলেন।’ (সুরা শামছ, আয়াত: ৮)। ‘আর আমি তাকে (ভালো-মন্দ, সত্যাসত্য, ন্যায়-অন্যায়) দুটি পথ দেখিয়ে দিয়েছি (যাতে সে সঠিক পথ চিনে চলতে পারে)।’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ১০)

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সব মানুষই অপরাধী, তাদের মাঝে উত্তম হলো তওবাকারী।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন—তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসে অগণিত মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি)


মহান আল্লাহর একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে (নবী মুহাম্মদ সা.)! আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৯)

হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, ‘বান্দা যদি দৈনিক সত্তর বার অপরাধ করে এবং সত্তর বার ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ প্রিয় নবীজি (সা.) দৈনিক সত্তর বারের অধিক বা এক শ বার ইস্তিগফার তথা ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী–রাসুল ছিলেন মাসুম বা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কারণ, তওবা ও ইস্তিগফার স্বতন্ত্র ইবাদত; এতে আল্লাহ খুশি হন।

তওবা ও ইস্তিগফারের জন্য কোরআন ও হাদিসে বহু দোয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দোয়াটি হচ্ছে সাইয়েদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমার শ্রেষ্ঠ আবেদন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ সকাল–সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করে, সে যদি ওই দিন রাতে বা দিবসে ইন্তেকাল করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’

সাইয়েদুল ইস্তিগফার হলো: ‘আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা; খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাততু, আউযু বিকা মিন শাররি মা ছনাতু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিযাম্বি; ফাগফির লি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয্‌ -যুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নাই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সব অপরাধ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন; আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি: ৬৩২৩ ও মুসলিম)।
87
Ramadan and Fasting / চোখের সিয়াম
« Last post by Mrs.Anjuara Khanom on March 21, 2024, 01:15:01 PM »
চোখের সিয়াম হচ্ছে কু-দৃষ্টি ও যত্রতত্র দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—

“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।” [1]

“আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।” [2]

আয়াতদ্বয় থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চক্ষু মানুষের অন্তর পরিচালনা করে এবং এই চক্ষু-ই হচ্ছে আত্মার প্রবেশদ্বার।

একবার নবীজি (সাঃ) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন—

‘হে আলী, কোনাে নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা, প্রথমবার অনিচ্ছায় দৃষ্টি পড়ে গেছে বিধায় সমস্যা নেই; কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়িয হবে না।‘ [3]
দৃষ্টির হিফাযত না করার দশটি ক্ষতি রয়েছে—

এক. কোনাে কাজে মন বসে না। সব সময় একপ্রকার অস্বস্তি অনুভব হয়। অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লােকও স্থিরতা ও কাজের মনােবল হারায়।

দুই. কাউকে দেখার পর তাকে না পাওয়ার বেদনা হৃদয়কে অনবরত দংশন করতে থাকে। এই হতাশা ও অতৃপ্তি তখন দু-চোখের ঘুম কেড়ে নেয়।

তিন. সালাত, সিয়াম কিংবা কুরআন তিলাওয়াত—কোনাে কিছুতেই আত্মতৃপ্তি আসে না। যিকিরে আত্মপ্রশান্তি অনুভব হয় না। এক কথায়, ইবাদাতের মাঝে যে ঈমানী স্বাদ, তা সম্পূর্ণ মাটি হয়ে যায়।

চার. এর দ্বারা বড় বড় গুনাহের সূত্রপাত হয়। অশ্লীলতা ও ব্যভিচারসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিও নেশা ও মাদকের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। ধর্ষণ, হত্যা ও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সালাফদের কেউ একজন বলেন, আমি পবিত্র কুরআনের হাফিয ছিলাম। একবার কোনাে এক নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করি। ফলে চল্লিশ বৎসরে উপনীত হওয়ার পর আমি কুরআন ভুলে যাই। (আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন)

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক উপকারিতা হচ্ছে, অন্তরে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভূত হতে থাকে।

সালাফগণ বলেন, দৃষ্টি হচ্ছে একজন কমান্ডারের মতাে; যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, মুহূর্তে শিকার করে আনবে; কিন্তু যখন তাকে আটকে রাখা হবে, সে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হবে। দৃষ্টিকে উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দিলে অন্তরের দূষণ অনিবার্য। সালাফগণ আরও বলেন, যদি তুমি দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করাে, তবে সে তােমাকে লাঞ্ছিত করবে। যখনই তাকে বন্ধনমুক্ত করবে, সে তােমাকে ভােগান্তিতে ফেলবে ইহকালে কিংবা পরকালে।

শাহ কিরমানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে-ব্যক্তি চক্ষুকে অবনত রাখবে, অন্তরকে তাকওয়ায় সুসজ্জিত করবে, চাল-চলন ও বেশভূষায় সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করবে—সে অবশ্যই আল্লাহপ্রদত্ত ‘অন্তর্দৃষ্টি’লাভে ধন্য হবে। অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন—

“নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” [4]
দৃষ্টির হিফাযত করার পাঁচটি সুফল রয়েছে—

এক.মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আনুগত্যের গুণ অর্জিত হয়। আর এটাই দুনিয়া। ও আখিরাতে সফলতার একমাত্র পুঁজি।

দুই. অন্তর গুনাহমুক্ত থাকে, চিত্ত প্রফুল্ল থাকে এবং সর্বক্ষণ অন্তরে একপ্রকার তৃপ্তি ও আত্মপ্রশান্তি বিরাজ করে।

তিন. যাবতীয় ফিতনা ও জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

চার. আল্লাহর পক্ষ হতে ইলম, মারিফাত ও তাকওয়া লাভের পাশাপাশি সৎকাজের তাওফীক নসীব হয়।

পাঁচ. সত্যবাদী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য ও অনুগ্রহলাভের উপায় এটি। এর মাধ্যমে তাদের অন্তরজগত আরও আলােকিত হয়।

যখন রামাদান মাস আমাদের দুআরে কড়া নাড়ে তখন আমাদের উচিত আপন আপন চক্ষুর হিফাযত করা। তাকে গুনাহমুক্ত রাখা। আর এটিই হচ্ছে ‘চোখের সিয়াম’। সিয়াম পালনার্থে ক্ষুধার্ত থাকার ফলে চোখের অনেক উপকার হয়। যেমন—এক. চোখের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুই. অসৎ মনােবাসনা ও অপাত্রে দৃষ্টির কু-চাহিদা লােপ পায়।

নির্বোধ লােকেরা রাস্তায় চলার সময় এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করে। ফলে তারা শয়তানের খেলার বস্তু ও ক্রীড়নকে পরিণত হয়। শয়তান তাদের নানান গুনাহ ও অপরাধকর্মে লিপ্ত করে।

অনেকেই আছে যারা বাহ্যিকভাবে সিয়াম পালন করে, কিন্তু চক্ষু নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে তাদের কল্প-জগতে হরদম অপকর্মের চিত্র ভাসতে থাকে।

প্রিয় ভাইয়েরা, আসুন আমরা সিয়াম পালনের পাশাপাশি নিজের আত্মা ও চক্ষুকেও গুনাহমুক্ত রাখি।

মহান আল্লাহ বলেন—

“এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদের দেবেন জান্নাত ও রেশমী পােশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। তারা সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।” [5]

শান্তি বর্ষিত হােক তার প্রতি—যে সিয়াম অবস্থায় একমাত্র রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের দৃষ্টির হিফাযত করে।

Source:https://quraneralo.net/coker-siam/
88
আরবী মু‘জিযা শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘মিরাকেল‘। একে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন : তা এমন একটি কাজ যাকে প্রকৃতির নিয়মে সংজ্ঞায়িত বা ব্যাখ্যা করা যায় না। কিংবা তা এমন একটি বিষয় যা মানুষের ক্ষমতা ও সাধ্যের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ তা এমন একটি ঘটনা যা মানবিক কার্যকারণ ও যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যাত নয়। সুতরাং মু‘জিযা যেহেতু মানুষের ক্ষমতা ও যোগ্যতার আয়ত্বাধীন নয়, তাই তা অবশ্যই সরাসরি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলার কর্ম বলেই বিবেচ্য।

একটি মু‘জিযা – আল্লাহ তা‘আলার প্রত্যক্ষ কাজ হিসেবে- আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌম ক্ষমতা ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের প্রতিফলন ঘটায়। মু‘জিযা মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি একটি উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ। এটি প্রমাণিত ও অনস্বীকার্য সত্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ব-জাহানের একমাত্র প্রভু। তাই তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিকে তাঁরই আনুগত্যের নির্দেশ দেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাফল্য ও মুক্তির পথ দেখানোর জন্যে অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। যখন কোনো সম্প্রদায়ের কাছে কোনো নবী প্রেরিত হতেন তখন তারা তাঁর কাছে এই দাবি করত, যেন তিনি তাদেরকে মু‘জিযা দেখান। তারা নবী কিংবা রাসূলের আখলাক ও আচরণের প্রতি আগ্রহী ছিল না; সেই বাণীর প্রতিও নয় যা তিনি তাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। বিপরীতে তারা অধিক উদগ্রীব ছিল, যাতে তিনি পারলে তাদেরকে কোনো অতি প্রাকৃতিক ব্যাপার দেখিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রাসূলই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।

উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসূলের জবাব ছিল একটিই, “বল, আমি আমার নিজের কোনো উপকার বা ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোনো ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে।” [সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৮]

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, “সে বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [সূরা মারইয়াম: ৩০] আরেক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “বল, ‘আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন।” [সূরা ইউনুস: ৪৯]

যা হোক, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অপরিসীম দয়ায় প্রত্যেক নবী-রাসূলকে বহু মু‘জিযা দান করেন। এভাবে তিনি সব ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধ্বে তাঁর নবী-রাসূলগণের বিশ্বাসযোগ্যতা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। একদল লোক এসব মু‘জিযাকে জাদু ও ভেলকিবাজি বলে একেবারে উড়িয়ে দিত, আরেকদল লোক যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি ও সাধারণ বোধের যোগ্যতা কাজে লাগাতেন, তারা নবী-রাসূলের এই অতিপ্রাকৃতিক কর্মসমূহকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মু‘জিযা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা অনুসরণ করতেন নিজেদের সম্মানিত নবী-রাসূলের বাণীর।

ইতিহাসও আমাদের এ কথা বলে, প্রত্যেক নবী-রাসূল যে সম্প্রদায় বা যে স্থানে প্রেরিত হয়েছিলেন সে সম্প্রদায় ও স্থানের জন্যে তাদেরকে বহু মু‘জিযা প্রদান করা হয়েছিল। একইভাবে এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রেও সত্য। তিনি অগণিত মু‘জিযা দেখান, যা তার সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছিল এবং ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থে তা যথাযথভাবে লিখিত রয়েছে। তাছাড়া তিনি বহু ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যার সবকটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নবী-রাসূলদের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যান্য নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন কোনো বিশেষ স্থান ও সময়ের জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা এসব নবী-রাসূলকে কিছু বিশেষ মু‘জিযা দান করেছিলেন একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্বজাতিকে তা দেখানোর জন্য। এসব মু‘জিযা সময় ও স্থানের সঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল। মানব ইতিহাসের অংশ হিসেবে আজ কেবল এসব মু‘জিযার গল্প বিদ্যমান। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন সর্বশেষ রাসূল হিসেবে। পুরো মানব জাতির জন্যে এবং আগত পুরো সময়ের জন্যে। যার দাবি, তাঁর থাকবে এমন একটি সার্বজনীন মু‘জিযা যা স্থান-কাল নির্বিশেষে সকল মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারে। মানব ইতিহাসের প্রতিটি যুগের প্রত্যেক ব্যক্তি চাই সে পৃথিবীর যে অংশেই বসবাস করুক না কেন যথার্থই বলতে পারে, যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমানে আমার নবী হন, তাহলে আমি একথা পছন্দ করি যে, আমার জন্য বর্তমানে একটি মু‘জিযা থাকবে।

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির সর্বশেষ রাসূল হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে তাকে যে সার্বজনীন মু‘জিযা দান করেছেন তা-ই আল-কুরআন। পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা আল-কুরআনের বিস্ময়কর প্রকৃতির বিবরণ দিয়ে অসংখ্য পৃষ্ঠা রচনা করেছেন। বস্তুত বিগত চৌদ্দশ বছর ধরে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক প্রজন্মই আল-কুরআনের নতুন নতুন বিস্ময় ও মু‘জিযা আবিষ্কার করেছে। এই অশেষ মু‘জিযা এ কথার শাশ্বত ও স্থায়ী প্রমাণ যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার রাসূল এবং আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরো মানবজাতির জন্যে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ।

আল-কুরআনের বিস্ময়কর প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে হলে আমাদেরকে সে স্থান ও কালের দিকে ফিরে দেখতে হবে যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৭১ ঈসায়ী সনে। তৎকালে মানবিক জ্ঞানের স্তর এতই অধপতিত ছিল যে, ঐতিহাসিকরা একে মানবেতিহাসের ‘আইয়ামে জাহিলিয়া বা বর্বরতার যুগ‘বলে আখ্যায়িত করেন। সেসময় মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ন্যূনতম জ্ঞানও ছিল না। সাধারণ মানুষ জানত না লেখা-পড়া। না আবিষ্কৃত হয়েছিল মুদ্রণের কলা-কৌশল। ফলে যদি কোনো ব্যক্তি একটি নিশ্চিত মানের জ্ঞান অর্জন করত তবে সে একটি মনোনীত দলের লোক বলে গণ্য হত। সেই জ্ঞান প্রচারের কোনো উপায় বা মাধ্যম ছিল না তৎকালে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের মক্কা নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় আরব উপদ্বীপের জীবন ব্যবস্থা ছিল খুব সেকেলে। দেশটি ছিল কান্তার মরু আর অথৈ বালিয়াড়িময়। ছিল না কোনো রাস্তা-ঘাট। না ছিল কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ কিংবা কৃষিব্যবস্থা। আরব উপদ্বীপের আবহাওয়া এমনকি বর্তমানেও এত উষ্ণ যে, ছায়ার মধ্যেও তাপমাত্রা প্রায়ই ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। এমন রূঢ় আবহাওয়া এবং দারিদ্রের কারণে আরব উপদ্বীপ বিদেশি বণিক কিংবা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে নি। দেশটি ছিল গোটা বিশ্ব থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও রোমে যে সামান্য জ্ঞানের চর্চা ছিল তাও আরব উপদ্বীপ অবধি পৌঁছাতে পারে নি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাতে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, লোকেরা সেখানে যাযাবরের মত বসবাস করত। তারা তাদের গবাদিপশু ও পরিবারের জন্য বৃষ্টি ও চারণভূমির তালাশে নিয়মিত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হত। সেখানে ছিল না কোনো সরকার কাঠামো। না ছিল কোনো নাগরিক সুবিধা। কোনো সুসংহত নগর-আইনও ছিল না। লোকেরা গোত্রে গোত্রে বসবাস করত। গোত্রের শক্তি ও প্রতিপত্তিই একজন ব্যক্তির ক্ষমতা ও অধিকার হিসেবে বিবেচিত হত। ‘জোর যার মুল্লুক তার‘কেবল এ নীতিই সে ভূখণ্ডে কার্যকর ছিল। অপেক্ষাকৃত শক্তিধর গোত্রগুলি দুর্বল গোত্রদের ওপর প্রায় লুটতরাজ ও লুণ্ঠন চালাত। এটিই ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। পরন্তু গোত্রের শক্তি-সামর্থ্য নির্ভর করত পুরুষদের সংখ্যার ওপর। আপদ ও বোঝা জ্ঞান করা হত নারীদের। প্রায় অভিভাবই চাইত না এ বোঝা বহন করতে। সেহেতু তারা আত্মজ কন্যাকে হত্যা করত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মকালীন পরিবেশ-প্রতিবেশ ও তৎকালীন অবস্থার উল্লেখ করার পর তাঁর শৈশবকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও উল্লেখ করা সমীচীন ভাবছি। জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যান। মাকেও হারান ছয় বছর বয়সে। তারপর তাঁর দেখাশুনার ভার নেন দাদা। কিন্তু তিনিও পরপারে পাড়ি জমান যখন তাঁর বয়স আট হয়। তিনি তখন আপন চাচার ঘরে স্থানান্তরিত হন। এই চাচা কেবল তাঁকে আশ্রয় দান করেছিলেন। তিনি তাঁর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য কিংবা জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণে সক্ষম ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাই গবাদি পশু চরিয়ে চাচাকে সহযোগিতা করতেন। যে কেউ দেখতে পাবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাল্য-জীবন আর দশ জনের মতো ছিল না। পিতা, মাতা কিংবা পিতৃব্যের ভালোবাসা ও আদর-যত্ন বলতে যা বুঝায়, তিনি তা পান নি। ছিল না তাঁর কোনো স্থায়ী কোনো নিবাস। এক অভিভাবক থেকে আরেক অভিভাবকের কাছে হাত বদল হন। এই বিরূপ ও রূঢ় পরিস্থিতির কারণে ন্যূনতম জ্ঞান কিংবা শিক্ষা যা তখন মক্কায় প্রচলিত ছিল- তাও অর্জন করার সুযোগ তাঁর ছিল না।

ঐতিহাসিকরা লিখেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না লিখতে জানতেন, না পড়তে। এমন কি তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে জানতেন না। পরন্তু তাঁর জীবনের এমনতরো রূঢ় ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে সেসব হাতে গোনা গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকদের সাহচর্যে বসারও সুযোগ দেয় নি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে মাত্র দু‘বার দীর্ঘ সফর করেছেন। প্রথম সফর ছিল তাঁর আট বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার সফর করেন যখন তাঁর বয়স পঁচিশ বছর। উভয়টি ছিল সিরিয়ায় এবং খুব সংক্ষিপ্ত। তাও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। কখনো কোনো ঐতিহাসিক একথা লিখেন নি যে, এই সফরগুলি তাঁকে এমন কিছু জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেছিল যা তিনি পরবর্তীতে আল-কুরআনে সন্নিবেশিত করেছেন। তিনি একজন সাধারণ আরব বেদুঈনের মত খুব সহজ সরল ও সাধাসিধে জীবন যাপন করতেন। একজন জনসমাবেশের বক্তা হিসেবে তিনি না পরিচিত ছিলেন, না একজন কাব্য রচয়িতা হিসেবে। আর না অন্য এমন কোনো কাজ করেছিলেন যা তাঁর প্রতি অন্যান্যদের দৃষ্টি কাড়ে।

তিনি কোনো ধরনের বিতর্ক, ঝগড়া-বিবাদ কিংবা যুদ্ধে জড়াতেন না। বলাবাহুল্য, মক্কার লোকেরা মূর্তিপূজা করত এবং যখন তারা কা‘বায় প্রবেশ করত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই বস্ত্র ত্যাগ করত। এ ছিল তাদের প্রার্থনা-রীতির অংশ। এ রকম পরিস্থিতিতে তিনি বেড়ে উঠেন। একটি মাত্র বিষয় যা ঐতিহাসিকরা তার বাল্য জীবন সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তা হল, তিনি তাঁর সততা এবং সদাচারের জন্য সুপরিচিত এবং সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। এ জন্যই মক্কার লোকেরা তাঁকে ‘আল-আমীন‘ বা বিশ্বাসী এবং ‘আস-সাদিক‘ বা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাঁকে পুরো মানব জাতির জন্য সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব তখন সহসাই পাল্টে যায়। অচিরেই তাঁকে দেখা যায় নানা সফল ভূমিকায়। ধর্মপ্রচারক, রাষ্ট্রনায়ক, বক্তা, সৈনিক, সেনানায়ক, নেতা, আইন প্রণেতা, বিচারক, চুক্তিসম্পাদনকারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, স্বামী, পিতা- হেন কোনো ভূমিকা নেই যাতে তিনি ব্যর্থ। সফলতার এমন বহুমুখিতা দেখেই একজন ইয়াহূদী ঐতিহাসিক মাইকেল এইচ হার্ট তার বিখ্যাত ‘দি হান্ড্রেড’ নামক মানবজাতির একশ মহান ব্যক্তিত্বের জীবনীতে তাঁকে সবার শীর্ষে উল্লেখ করেন।

এই আল-কুরআনই মানবতার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। মানব জাতির ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই। অন্যান্য নবী-রাসূলের মু‘জিযা তাদের জীবনকাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কুরআন মাজিদ কিয়ামত পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন্ত মু‘জিযা হিসেবে অক্ষত থাকবে। আল-কুরআন এমন অসংখ্য তথ্যধারণ করে যা তা অবতীর্ণ হওয়ার সময় মানুষের জানা ছিল না। এসব তথ্যসূত্রের অনেকগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে নিশ্চিত সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

বস্তুত প্রত্যেক যুগে মানুষ আল-কুরআনে নতুন নতুন ‘মিরাকল‘বা মু‘জিযা আবিষ্কার করেছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যতই প্রসারিত হচ্ছে, ততই তা আল-কুরআনের মু‘জিযার তালিকাকে দীর্ঘ করছে। “আর তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৪৮]

“এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা ইউনুস: ৩৭-৩৮]


Source:https://quraneralo.net/alquran-thelivingmiracle/
89
দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টি বিপরীতধর্মী শব্দ কিন্তু মানব জীবনে দু’টিই জড়িয়ে আছে অন্ধকার এবং আলোর মত। এইতো প্রাচুর্যের ছন্দময় উপস্থিতি আবার কিছু সময় পরই দারিদ্রের সেই অনাকাংখিত ভয়াল থাবা। কারো কারো জন্য প্রাসাদোপম আলীশান বাড়ী। বিলাম বহুল গাড়ীসহ সুখের সব রকম সরঞ্জামাদির বিপুল সমাহার। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে  হাড় ভাঙ্গা খাটুনি পরিশ্রমের পরও দু’মুঠু ভাতের নিশ্চয়তা নেই, নেই মাথা গোজার একটু ঠাঁই। দু’টিু অবস্থাই প্রজ্ঞাময় মহামহীমের রহতমতায় সৃষ্টি। সম্ভবত ইবাদতের দু’টি অনুপত ধারা সৃষ্টিই এর মুল রহস্য। একটি সবর অন্যটি শুকর। দু’টিই আল্লাহ তাআালার বিশেষ ইবাদাত। দু’টির মাধ্যমেই রয়েছে মহামহীম রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের সুনিপুন ব্যবস্থা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মুমিনের বিষয়টি অতিশয় বিস্ময়কর। তার প্রত্যেকটি বিষয়ই তার জন্যে কল্যাণকর আর এটি একমাত্র মু’মিনের জন্যেই। যদি তার সুদিন আসে, সমৃদ্ধি অর্জিত হয়, তা হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটি তার জন্যে কল্যাণকর। আবার যদি দুর্দিন আসে দারিদ্রে আক্রান্ত হয়, ধৈর্য ধারণ করে এটিও তার জন্যে কল্যাণকর।” [মুসলিম: ৭৪২৫]

হাদীস থেকে সু-স্পষ্ট রূপে বুঝা যায় যে, দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টিই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দু’টি সহজ পন্থা। দরিদ্র ধৈর্য ধারণ করবে আর ধনবান শুকরিয়া আদায় করবে। মানব জীবনে দু’টি সুযোগই কারো কারো ক্ষেত্রে  আসতে পারে, আবার কেউ এর যে কোন একটি সুযোগ প্রাপ্ত হতে পারে। তবে  বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হল যখন যার যে সুযোগ আসে তখন তাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগের সৎ ব্যবহার করা। আমরা আলোচনা করব, যিনি শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ পেলেন, তিনি কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন।
প্রথমত:

যে বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, এই যে ধন-সম্পদ এটি তার নিজের কৃতিত্বের ফসল নয় বরং তা মহামহীমের দয়া ও ইচ্ছার ফসল। তাই প্রথমতঃ সর্বান্তকরণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তাঁর বিধি নিষেধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন চলবে না। নিজের ইচ্ছার উপর তাঁর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাঁর দাবীর কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করে দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে: “মুমিনগণ তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো তিগ্রস্ত।” [মুনাফিকুন- ৯]

আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সম্পদ মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে দেবে এমন আশংকা আছে তাই মু’মিনদেরকে সদা সর্তক থাকতে হবে। এ সম্পদ যেন কোনক্রমেই তাকে তার সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। সম্পদের মোহ যেন আল্লাহর দাবীকে গৌণ করতে না পারে। আর সেটি তখনই সম্ভব যখন সম্পদপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ সম্পদকে আল্লাহর অনুগ্রহ বলে জ্ঞান করবে।
দ্বিতীয়:

সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা অরে অরে পালন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখে খেয়াল রাখতে হবে প্রাচুর্যের কারণে গতি যেন পাল্টে না যায়। সম্পদ যেন হারাম ও অনৈতিক কাজে ব্যয় না হয়। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা যেন ঠিক ঠিক পালন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের।” [যারিয়াত- ১৯]

উক্ত আয়াত সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করছে যে অসহায়, বঞ্চিত ও প্রার্থীদের জন্যে সম্পদ ব্যয় করা আল্লাহর দাবী ও নির্দেশ।
তৃতীয়ত:

এ পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে  যে সব বিষয় সহায়ক হবে তা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করা। আর তা হচ্ছে সম্পদ ব্যয়ের যে ফযীলত কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে তা স্মরণে আনা এবং ব্যয় না করে কুগিত করার মন্দ পরিণতির কথা বিবেচনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়- নম্র, যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে।” [মু’মিনুন: ১-৪]

আল্লাহ বলেছেন: “এরাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকার লাভ করবে। শীতল ছায়াময় উদ্যানের। তাতে তারা চিরকাল থাকবে।” [মু’মিনুন: ১০-১১]

তা হলে আল্লাহর নির্দেশ মত সম্পদ ব্যয় করলে পরকালে চিরন্তন জীবনের জন্যে চিরসুখময় জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত। অল্প সম্পদ ব্যয় করলে পরপারে তা অনেক বড় করে পাওয়া যাবে। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসালাম ইরাশদ করেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সদাকা (দান) কবুল করেন এবং তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করে থাকেন। এরপর তাকে লালন পালন করতে থাকেন যেমনি ভাবে তোমাদের কেউ স্বীয় জন্তু শাবক লালন পালন করে থাকে। এমনকি এক লোকমা খাবার (তার লালন পালনের কারণে) পাহাড়ের মত বিশাল হয়ে দেখা দিবে। অতএব তোমরা সাদকা কর।” [আহমদ: ৭৩১৪]

পান্তরে ব্যয় না করে জমা করে রাখরে সে সম্পদ পরকালের জন্যে বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে।  (এবং বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।” [তাওবা: ৩৫]

সম্পদ ব্যয় না করে জমা করে রাখার  ভয়াবহতা কত মারাত্মক? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ যাকে সম্পদ দিলেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করল না তার সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষধর  সাপে রূপান্তরিত করা হবে যে, সাপের দু’পার্শ্বে তিলক থাকবে। ঐ সাপ তার দু’চোয়ালে ধরে দংশন করবে আর বলবে আমিই তোমার সম্পদ আমিই তোমার সঞ্চিত ধন-ভান্ডার।” [বুখারী, মুসলিম: ২৪৬]
চতুর্থত:

ধনবান ব্যক্তি তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের সুযোগ সন্ধান করবে এতে নিজেরই লাভ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যারা দয়াশীল, দয়াময় প্রভু তাদের প্রতি দয়া করেন। যারা যমীনে বিচরণ করে তাদের প্রতি দয়া কর। যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” [তিরমিজি: ১৯৪৭]

সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমেঃ-

একজন সাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি বর্তমান বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে যে দৃশ্য দেখতে পাবে।

    দারিদ্রের কারণে প্রায়ই দেখা যায় জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

    বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করছে একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ।

    যে শিশু শিানিকেতনের আলোকময় পরিবেশে থেকে নিজকে আলোকিত মানুষ রূপে গড়ে তোলার কথা ছিল দারিদ্রের কারণে আজ তাকে দেখা যাচ্ছে হাটে, রাস্তায়, ষ্টেশনে,, শ্রমবিক্রি করতে ব্যস্ত এদের কেউ কেউ ভিা করছে আবার অনেককে নর্দমা, ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেয়া খাবার ও তুলে খেতে দেখা যাচ্ছে।

    দারিদ্রের কারণে অশিতি রয়ে যাচ্ছে সমাজের একটি বিশাল অংশ যার কারণে বেকারত্ব বাড়ছে আলোর গতিতে। দারিদ্র ও বেকারত্বের অমানিশায় পতিত হয়ে হতাশা কাটানোর জন্যে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি খুনসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে ল ল সম্ভামনাময় নবপ্রজন্ম। এসব অপরাধ বাড়ার কারণে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে আতংক, কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে নাগরিক জীবন যাপন, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ যাবতীয় উন্নয়ন। অগ্রগতি হচ্ছে বাধা গ্রস্থ, পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক ভাবে নিন্দিত  হচ্ছে দেশ ও জনগন।

    এ দারিদ্রের কারণে পরম মর্যাদাবান মাতৃ সমাজকে সতীত্ব বিক্রি করে বেচে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে। পতিতা বৃত্তির মত চরম ঘৃনিত কাজ পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ফলে মনুষ্যত্ব বোধের চরম অধপতনের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে সিফিলিস, গনরিয়া এইডসসহ মারাত্মক মারাত্মক মরণ ব্যধি।

    সুদ ভিত্তিক দেশীও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে সর্বস্বাস্থ হতে দেখা যাচ্ছে ল ল জনগণকে। সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ভিটে মাটি বিক্রি করে বাস্তুহারার কাতারে শামিল হতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে।

    আবার কেউ কেউ ঈমানের বিনিময়ে দায়মুক্তি নিচ্ছে বলেও পত্রিকাতে খবর প্রকাশ পেয়েছে।

    এ সুযোগে দারিদ্রে বিমোচনের নাম করে অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম দেশে বিভিন্ন নামে সংস্থা খুলে সাহায্যের নামে  অপসংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে মহা সমারোহে। ফলে সাংস্কৃতির নামে চর্চা হচ্ছে নগ্নতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার। মুক্ত সাংস্কৃতির নামে যৌনতা নির্ভর চলচিত্র নির্মাণ, ফ্যাশন শো, কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কেড়ে নিচ্ছে শত বছর থেকে চর্চিত সভ্য সাংস্কৃতির ধারা, শালীনতা, ভদ্রতা, ভব্যতা, ও লজ্জাসহ পর্দা প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

দারিদ্র বিমোচ শ্লোগানকে পুঁজি করে ঋণ দেয়ার নাম করে সুদী ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট। কিস্তি পরিশোধ করতে করতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতার পর্যায়ক্রমে সর্ব শান্ত হচ্ছে গরীব জনগন আর এ সুযোগে প্রাচুর্যের পাহাড় গড়ছে সুবিধা লোভী ফোরাম। দারিদ্রকে পুঁজি করে শিা সম্প্রসারণের নাম করে তাদের ধর্মীয় মতে দীতি করছে হাজার হাজার মুসলিম শিশুকে। তাই যে শিশু হওয়ার কথা ছিল মানবতা বোধে উদ্বুদ্ধ আল্লাহ প্রেমী ঈমান দ্বীপ্ত খাঁটি মুসলিম, সে শিশু হচ্ছে আধুনিকতার নামে উগ্র ও মুক্তমনার নামে দিকভ্রান্ত নাস্তিক। ফলে ধর্মীয় দিক থেকে আমাদের দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার একটি বিশাল সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আধিপত্যবাদী একটি বিরাট শক্তি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমরা মুসলমানরা নিজ দেশে পরবাসী। এক কথায় দারিদ্রের কারণে আজ আমাদের ঈমান ও স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক।  দারিদ্রের কারণে দাতা গোষ্ঠীর বিভিন্ন  অন্যায় ও অন্যায্য দাবী মেনে সরকারকে সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ করতে হয় ফলে সরকার জনগনের চাহিদা মোতাবেক স্বাধীন ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না। একদিকে দাতাদের চাপ অন্য দিকে জনগনের দাবী, দো-টানায় পড়ে সরকারকে বিব্রত হতে দেখা যায় প্রায়ই। দাতাদের দাবী মেটাতে গিয়ে জনগনের বিপে পদপে নেয় ফলে জন অসন্তোষ বাড়ে, সরকার জনরায়ের বিপে সিদ্ধান্ত নেয়, জনগন প্রতিরোধের সংকল্প করে ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে পড়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। ফলাফল দাড়ায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি আন্তর্জঅতিক সমীায় ব্যর্থ রাষ্ট্র।

সম্প্রতিঃ বাংলাদেশ সরকারকে জনমত উপো করে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার প্রেেিত ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের  বিরুদ্ধে কঠোর পদপে গ্রহণ করতে হয়। ফলে মিত্রদের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। সম্পর্কে ফাটল ধরে ফলে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস  পায়।

স সুযোগে বিভিন্ন নাশকতা মূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হয়। আবারা মতা যেতে হলে বিদেশী সম্প্রদায়ের সমর্থনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ফলে ইসলাম বিরোধী ভূমিকা আরো জোরদার ভাবে নিতে হবে মর্মে দাসখত দেয়ার যুক্তি ও দাবী মজবুত হয়। বাধ্য হয়েই সরকারকে এমন দাসখত দিতে হবে। ফলে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশের রাস্তা আরো সংকুচিত হবে। বরং নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা প্রদীপ সম্পূর্ণ রূপে নিভিয়ে দেয়ার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। এমন উদাহরণ বিশ্বের সবগুলো মুসলিম দরিদ্র রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য। আর এসবেরই মূলে রয়েছে দারিদ্রের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মোট কথা দারিদ্রের কারণে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে আমাদের স্বাধীন মূল্যবোধ। দারিদ্রের কারণেই  আজ আমাদের দেশীয় ও ধর্মীয় পরিচয় হুমকির সম্মুখীন। তাই মানবিক ও ঈমানী মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যকরী পদপে নিতে বিলম্ব করলে অচিরেই এর চরম মূল্য দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে এ অবয় রোধে একটি বিরাট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ। তাদের সাহায্য সহানুভূতি পেয়ে অন্নহীন অন্ন পাবে।

    শিার সু-ব্যবস্থা  প্রতিষ্ঠা হলে দরিদ্র জনগন শিার সুযোগ পাবে, ফলে খুন, রাহাজানী, ধর্যন, চুরি, ডাকাতিসহ সকল নেতিবাচক কর্মকান্ড পরিহার করে সুস্থ্য স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার রাস্তা খুজে পাবে যুব সমাজ। দেশ পাবে শক্তিশালী নীতিবান আলোকিত জনশক্তি। সে নিজে পাবে ঈমানদীপ্ত সম্ভাবনাময় সুন্দর জীবন।

    ভিা বৃত্তি, পতিতাবৃত্তি এবং ঘৃণ্য পেশা থেকে ফিরে এসে সুস্থ ধারার জীবন গড়ার দিশা পাবে আক্রান্ত নারী ও দরিদ্র জনশক্তি।

    সুদ ভিত্তিক সাহায্য প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে। ফলে তাদের থেকে নিস্কৃতি পাবে অসহায় জনগন এবং সুদের মত মারাত্মক পাপ থেকে বের হওয়ার  রাস্তা পাবে নিরুপায় মুসলিম সমাজ।

    অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হবে ফলে চারিত্রিক অবয় থেকে মুুক্তি পাবে যুব সমাজ ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী জন সাধারণ।

    আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের আধিপত্য বিস্তারের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাবে। ফলে স্বাধীনতা হুমকি মুক্ত থাকবে।

    সরকার স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনার নিশ্চয়তা পাবে জনগনের মতের প্রতিফলন ঘটবে। স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে। অন্যায় অসন্তোষ বিলুপ্ত হবে। সুখ সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। নন্দিত হবে বিশ্বময়। স্বাধীন সমৃদ্ধশালী জাতী হিসাবে আমরা পরিচিতি পাবো বিশ্ব ব্যাপী।

    ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমানী চেতনা নিয়ে মুসলমান মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপ করতে পারবে। এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্বিঘেœ কাজ চালিয়ে যেতে সম হবে। ফলে জাতি দিন দিন উপহার পেতে থাকবে ন্যায় নীতি, সৎ, চরিত্রবান, সৃজনশীল উন্নত, আলোকিত প্রেমময় হৃদয়বান কাংখিত প্রজন্ম। ধরাতে চর্চা  হবে মহামহীমের চাহিদা মোতাবেক শান্তিময় বিধান। সর্বোপরি সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ বনী আদম কুফুরী থেকে মুক্ত থাকার পরিবেশ খুজে পাবে। কারণ দারিদ্র মানুষকে কুফুরীর নিকটবর্তী করে দেয়। এমনি ভাবে চেষ্টা করলে সহানুভূতি প্রকাশের হাজারটি দ্বার খুলে যাবে।

    এক্ষেত্রে  যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম

নিয়মিত যাকাত আদায় করে সুষ্ঠভাবে বন্টন করলে উপরোক্ত সবগুলো ক্ষেত্রে  অবদান রাখা যায়। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ প্রকৃতিতগত। সম্পদ উপার্জনে মানুষ আগ্রহ বোধ করে কিন্তু ব্যয়ের ব্যাপারে অনুরূপ সাচ্ছন্দ অনুভব করে না। আর সাহায্য সহানুভূতি ও দান খয়রাত রীতিমত মনের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রাম। এক্ষেত্রে  যাকাত আদায়চ্ছু ব্যক্তি যদি যাকাত আদায়ে শরীয়তের বিধান স্মরণে আনে তাহলে তার জন্য উক্ত কাজে সফল হওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ

    যাকাত আদায় ইসলামের  মুলভিত্তি  এটি ব্যতীত ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না।

    যাকাত মূলত তার সম্পদ নয় বরং দারিদ্রকিষ্ট বঞ্চিত ও প্রার্থীদের সম্পদ যা তার সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে  আছে। আল্লাহ বলেন: “তাদের সম্পদের রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।” [সূরা: যারিয়াত-১৯]

তাহলে যাকাত আদায় না করা প্রকারন্তরে আল্লাহর বিধান লংঘন করার পাশাপাশি অন্যের  অধিকার নষ্ট করা।

*  যাকাত আদায়ে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কলুষমুক্ত হয়।

*  যাকাত আদায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত নিশ্চিত হয়।

    যাকাত আদায়ে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। সম্পদ বিষধর সাপে রূপান্তরিত করে গালদেশে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। উক্ত সর্পরূপী সম্পদ তিরস্কার সহ দংশন করে চলবে।

    যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে অংশ গ্রহণ করে একটি অধঃপতিত জাতিকে সনির্ভর ও স্বাধীন জাতিতে উন্নত করা যায়।

    দারিদ্রকিষ্ট হয়ে ঈমান হারাতে বসা চরম বিপর্যস্ত একটি গোষ্ঠীকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে এমন বিপদ থেকে রা করা যায়।

বরং উপরোল্লেখিত সকল বিপদ মোকাবেলায় যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। যাকাতের মাধ্যমেই উক্ত সকল ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেয়া যায়। আজ যদি যাকাত আদায়ের সুষ্ঠু নীতিমালা থাকত। বন্টনের ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবস্থা থাকত তাহলে অবস্থা হয়ত এত করুন হত না। যদি দেশের ধনবান ব্যক্তিবর্গ হৃদয় দিয়ে সহানভূতির সাথে একটু চিন্তা করেন তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় দেশী বিদেশী সুবিধালোভী সুদ ব্যবসায়ী আধিপত্যবাদীরা লেজ গুটাতে বাধ্য হবে। আমাদের এ আশা কল্পনা নির্ভর নয় বরং যুক্তির নিরিখে একটু হিসাব করি।

ধরে নেই বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি মূল্যবান যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিকের সংখ্যা এক হাজার, তাহলে তাদের সম্পদের যাকাতের পরিমাণ হবে প্রতি বছর ১২৫০০ কোটি টাকা। (১২৫০০০০০০০০) উক্ত টাকা যদি জনপ্রতি ৫০ হাজার করে বন্টন করা হয় তাহলে ২৫ ল লোকের মধ্যে বন্টন করা যাবে। প্রতি বছর যদি ২৫ ল লোক দারিদ্র মুক্তির সুযোগ পায় তাহলে গোটা বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করে সনির্ভর করতে কয়দিন  লাগবে? এতো শুধুমাত্র ৫০০ জনের হিসাব। প্রকৃত হিসাব আরো অনেক বেশী।

সম্মানিত পাঠক! যাকাত আদায় ও বন্টনের সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে মুক্তি পেত দেশ। সরকার জনগন, শংকামুক্ত থাকত ঈমান, আক্বীদা, আমল। বৈষম্যদূর হয়ে সম্প্রীতি ও ভালবাসা থাকত সকলের মাঝে বিরাজমান। গোটা সমাজই হতে যেত জান্নাতের একটি বাগিচা। তাহলে আমরা বলতে পারি যাকাত আদায় যেমনি করে দয়াময় পালনকর্তার শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম, বিনিময়ে সুখময় জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অনুরূপ ভাবে দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে ভাইয়ের পতি ভাইয়ের মতত্ববোধ প্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্থা। পরিশেষে যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি কি? এ মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করে আলোচনার ইতি টানব।

ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর “আওসাত ও সাগীর” গ্রন্থে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন। আল্লাহ তাআলা ধনী মুসলমানদের সম্পদে এ পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট। দরিদ্র মুসলিম বৃন্দ অভুক্ত ও বিবস্ত্র থাকার যে কষ্ট করে যাচ্ছে। এটি তাদের ধনীদের সৃষ্ট। শুনে রাখ আল্লাহ  তাআলা তাদের হিসাব কঠিন করে নিবেন এবং যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি দিবেন।

হাদীস দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে সুষ্ঠভাবে যাকাত আদায় হলে মুসলমানদের মাঝে দারিদ্র থাকবে না।  দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের  ভূমিকা কত অপরিসীম এ হাদীস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করার তাওফীক দিন। আমীন!!

Source:https://quraneralo.net/daridro-bimochon-a-jakat/
90
Diabetics / রমজান ও ডায়াবেটিস
« Last post by Mrs.Anjuara Khanom on March 20, 2024, 12:48:14 PM »
সুপরিকল্পিত ও সঠিক নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করলে রমজান মাসে একজন ডায়াবেটিসের রোগীর কোনো রকমের সমস্যা বা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়, কিন্তু এর বিপরীতটি ঘটলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। চলছে রমজান মাস। যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের স্বাস্থ রক্ষা ও রোজা রাখা না-রাখা নিয়ে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার জবাব নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন।

বিশ্বের প্রায় ১৫৭ কোটি মুসলিমের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি ডায়াবেটিসের রোগী রমজান মাসে রোজা পালন করেন। ১৩টি মুসলিমপ্রধান দেশে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগী নিয়মিত রোজা পালন করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে একজন সুস্থ ও সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর রোজা পালন করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু রমজান মাসে পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের ধরন ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের পরিবর্তিত মাত্রা ও সময় সঠিকভাবে জেনে নিয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজা পালনের জন্য সঠিকভাবে তৈরি হয়ে নেবেন। সুপরিকল্পিত ও সঠিক নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করলে রমজান মাসে একজন ডায়াবেটিসের রোগীর কোনো রকমের সমস্যা বা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়, কিন্তু এর বিপরীতটি ঘটলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
রোজা পালনে ঝুঁকি আছে কাদের?

রমজান মাস শুরু হওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দিন। প্রথমেই জেনে নিন আপনার রোজা পালনে কোনো বাধা আছে কি না। গত তিন মাসের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া) এবং ডায়াবেটিস কোমায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের ঝুঁকি থেকেই যায়। যাঁদের বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ইতিহাস আছে, যাঁরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া-অসচেতন রোগী, যাঁদের রক্তে সুগার একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত, যাঁরা যকৃত, কিডনি, হূদ্যন্ত্র ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, ডায়ালাইসিস করছেন, এমন রোগী, অত্যধিক বয়স্ক রোগী এবং গর্ভবতী ডায়াবেটিসের রোগীরা রোজা থেকে বিরত থাকলেই ভালো। নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে রমজানের দুই থেকে তিন মাস আগে একটি সম্পূর্ণ চেকআপ করিয়ে নিন। এ সময় রক্তের সুগার, সুগারের গড় মাত্রা বা এইচবিএওয়ানসি, কিডনি ও লিভার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এসব পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আসন্ন রোজা পালনের পরিকল্পনা নিন।
কী কী বিপদ হতে পারে?

রমজানের আগে ও সময় সঠিকভাবে প্রস্তুতি ও শিক্ষা না নিলে অন্ততপক্ষে চার রকমের বিপদ ঘটতে পারে এ সময়।

[এক] হঠাৎ করে রক্তে সুগার অনেক কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিকে আক্রান্ত হতে পারেন।

[দুই] রক্তে সুগার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে।

[তিন] ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস বা কোমা হয়ে যেতে পারেন।

[চার] পানিশূন্যতা ও থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
রমজানের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম

একজন ডায়াবেটিসের রোগী রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতেন, রমজান মাসেও তার হেরফের হবে না, কেবল এর সময়সূচি ও উপাদান পরিবর্তিত হতে পারে। ইফতারির সময় ও পরে হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করা, চিনি, মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসের মাধ্যমে এ সময় অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়। রক্তে দ্রুত সুগার বাড়ায় না, এমন খাবারকে লো গ্লাইসেমিক ফুড বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে পড়ে লাল আটা, লাল চালের ভাত, গোটা শস্য, শস্যবীজ ইত্যাদি। রোজার মাসে এসব খাবারের পরিমিত গ্রহণ রক্তে সুগারের মাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে সুষম রাখতে সাহায্য করবে। হাই ক্যালরি ও হাই গ্লাইসেমিক ফুড যত সুস্বাদু ও মুখরোচকই হোক না কেন, যেমন জিলাপি, লাড্ডু, শরবত, হালুয়া, কেক, আলুনি, সফট ড্রিংক ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। বেশি পরিমাণে তেল আছে এমন খাবার, যেমন—কাবাব, বেগুনি, পেঁয়াজু বা ভাজাপোড়ায় কেবল ওজনই বাড়াবে না, রক্তে চর্বি বাড়িয়ে দেবে, পেটে বদহজম ও গ্যাস সৃষ্টি করবে। রোজা রাখলে সূর্যাস্তের পর অন্তত তিনবার খাদ্য গ্রহণ করুন। ইফতারির সময় সুষম ও পুষ্টিকর পরিমিত আহার, রাত ১০টার দিকে রুটি বা হালকা ডিনার এবং অবশ্যই শেষ রাতে ভাত বা রুটিসহযোগে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ ও তরল খাদ্য গ্রহণ করুন। সেহির না খেয়ে কোনো অবস্থাতেই রোজা রাখা উচিত নয়। রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে রক্তে সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম বা আধা ঘণ্টা হাঁটা যেতে পারে। যাঁরা নিয়মিত দীর্ঘ ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটিই ব্যায়ামের বিকল্প, আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।
নিয়মিত সুগার মাপুন

বিশ্বের বড় বড় ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমগণ আগেই রায় দিয়েছেন যে রোজা রেখে রক্তে সুগার পরীক্ষা করালে তাতে রোজা ভেঙে যায় না। রমজান মাসে বাড়িতে গ্লুকোমিটারে মাঝেমধ্যে নিজের রক্তের সুগার নিজে মেপে দেখুন। অন্তত সপ্তাহে এক বা দুই দিন সেহিরর দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারির অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সুগার মাপুন। সেহিরর পর সুগার আট মিলিমোল বা এর কম এবং ইফতারির আগে ছয় মিলিমোল বা এর কম থাকা বাঞ্ছনীয়। এর মধ্যে দিনের যেকোনো সময় খারাপ লাগলে বা শরীর কাঁঁপলে, ঘেমে উঠলে, মাথা ফাঁকা লাগলে অবশ্যই সুগার মাপুন। দিনের যেকোনো সময়ে সুগার ৩ দশমিক ৩ মিলিমোল বা তার কম এবং দিনের পূর্বাহ্নেই ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার কম হয়ে গেলে সেদিন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। দিনের যেকোনো সময় রক্তে সুগার ১৬ মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলেও রোজা ভাঙতে হবে।
ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময় জেনে নিন

রমজান মাসে ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। সোজা নিয়মে সকালের ডোজটি দেওয়া হয় ইফতারির সময় এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক করে শেষ রাতে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের পরিবর্তন করা উচিত নয়। কোন ওষুধ এবং কোন ধরনের ইনসুলিনের জন্য কোন ধরনের পরিবর্তন ঠিক কোন রোগীর জন্য প্রযোজ্য হবে, তা চিকিৎসকই বলতে পারবেন। কাজেই রমজানে নিজের ওষুধের মাত্রা ও সময় জেনে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ইফতারি হওয়া চাই সুষম ও পুষ্টিকর। [সূত্র: তানজিনা হোসেন, দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৮, ২০১২]

উল্লেখ্য যে, অসুস্থতা জনিত কারণে রামাযানের রোযা ভাঙ্গার প্রয়োজন দেখা দিলে সে রোযাগুলো রামাযানের পর বাকি ১১ মাসের মধ্যে যে কোন সময় সাধারণ নিয়মে কাজা করে নিতে হবে। [সূরা বাকারা: ১৮৩ নং আয়াত]

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থতা সহকারে সঠিক পদ্ধতিতে রামাযানের সম্পূর্ণ রোযা পালনের তাওফীক দান করুন।

আমীন!!

Source:https://quraneralo.net/ramadan-and-diabetes/
Pages: 1 ... 7 8 [9] 10