Dear Mr. Masud,
At first paste the copies content in forum test body and then select the full text and then click to Font Size and select 14. Then see your text will be readable.
If you post Bangla text in forum, please make it at least 14 font, so your text will be readable to everyone.
Source: Please give the source link.
সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানী মহলে তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইদানীং ঈশ্বর কণা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। এই কণাটির আদ্যোপান্ত নিয়ে আজ আমাদের বিশেষ আয়োজন। যদিও এটা হিগস-বোসন কণা নামে বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত। এই লেখায় কণাটিকে ঈশ্বর কণা নামেই ডাকা হবে। লিখেছেন সৌমিত্র চক্রবর্তী
১. ঈশ্বর কণা কী?
পদার্থ আর শক্তির (যারা হামেশাই একে অপরটিতে পরিবর্তিত হচ্ছে) ক্ষুদ্রতম এককগুলোকে বলে মৌলিক কণা। ঠিক যেমন দুনিয়ার তাবৎ যৌগ মোটে একশটির মতো মৌল দিয়ে তৈরি, তেমনি ওই মৌলগুলোর একক হলো পরমাণু এবং পরমাণুকে আরও ভাঙলে যা পাওয়া যায়, সেগুলোই মৌলিক কণা। মৌলিক কণাগুলো যে শুধু পদার্থের ক্ষুদ্রতম উপাদান, তা নয়, যাবতীয় শক্তি-ক্ষেত্র, যেমন—চুম্বকের আকর্ষণী-বিকর্ষণী ক্ষমতা বা বিদ্যুৎপ্রবাহের জন্য দায়ী তড়িৎ-চুম্বকক্ষেত্র; এগুলোরও ক্ষুদ্রতম উপাদান মৌলিক কণা। মৌলিক পদার্থের মতো মৌলিক কণার সংখ্যাও একশর মতো, মিলটা নেহাতই কাকতালীয়! তো মৌলিক কণার তালিকায় একজন সম্মানিত, কিন্তু এখনো অধরা কণা হলো ঈশ্বর কণা। এটা ডাক নাম, ঈশ্বরের সঙ্গে এর নামের মিল স্রেফ কাকতালীয়। আসল নাম হিগস-বোসন। এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন মৌলিক কণা সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা গেছে, সেগুলো থেকে দাঁড় করানো গাণিতিক মডেলে এক মস্ত ফাঁক থেকে যাচ্ছিল। মডেলটি বিভিন্ন কণার সব বৈশিষ্ট্য সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেও একটি বৈশিষ্ট্য, যা সন্দেহাতীতভাবে অনেক কণায় রয়েছে, সে ব্যাপারে কিছুই বলছিল না। সেই বৈশিষ্ট্য হলো ভর। আবার ভরকে যদি কণাবাদী গাণিতিক মডেলে জোর করে ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই মডেল ভেঙে পড়ে। শেষমেশ কোনো উপায় না দেখে এমন এক প্রস্তাব করা হলো, যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে মহাবিশ্বজুড়ে এক অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম বা ক্ষেত্র আছে, যা বিভিন্ন কণার ভরের জন্য দায়ী, তাহলে গাণিতিক মডেলের কোনো ক্ষতি না করেই ভরের ধারণাটি জুড়ে দেওয়া সম্ভব হয়। এ যেন সেই ইথারের মতো, যাকে আলো চলাচলের মাধ্যম হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে যার অস্তিত্ব অপ্রমাণিত হয়। ইথারের সঙ্গে তুলনীয়, কিন্তু ইথার থেকে একেবারেই আলাদা সেই সর্বত্র বিস্তৃত ক্ষেত্রটির নাম হিগস-ফিল্ড। ইথারের অস্তিত্ব অপ্রমাণিত হলেও হিগস-ফিল্ড যে অস্তিত্বশীল, সে ব্যাপারে আমাদের হাতে বেশ কিছু পরোক্ষ প্রমাণ আছে। হিগস-ফিল্ডের ক্ষুদ্রতম একক হলো হিগস-বোসন কণা, যার অন্য নাম ঈশ্বর কণা।
২. কণাটির নাম এমন হলো কেন?
মৌলিক কণার একটি শ্রেণীর নাম বোসন। বাঙালি পদার্থবিদ সত্যেন বসুর নামানুসারে এই নাম। মৌলিক কণাগুলোর গাণিতিক মডেলে প্রথমে চারটি বোসনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদের একত্রে গজ-বোসন বলে। পরে কণার ভর দানকারী আরও একটি বোসন কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গাণিতিক ভবিষ্যদ্বাণী করেন ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগসসহ মোট ছয়জন বিজ্ঞানী। নতুন সেই বোসন, যার অস্তিত্ব তখন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল, তাকেও তখন মৌলিক কণাগুলোর গাণিতিক মডেলে একটি বিশেষ স্থান দেওয়া হলো, গজ-বোসনের পাশে হিগস-বোসন হিসেবে। অবশ্য মৌলের পর্যায় সারণিতে যেমন হাইড্রোজেনকে দলছুট রাখা হয়, তেমনি মৌলিক কণার সারণিতে হিগস-বোসনকেও অনেকটা একঘরে রাখার রেওয়াজ আছে। যা হোক, এই কণার তাত্ত্বিক সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনে বিজ্ঞানীরা চাইলেন, বাস্তবে একে ধরতে। কিন্তু এ যেন সোনার হরিণ, ধরা দেয় না কিছুতেই। ত্যক্ত-বিরক্ত বিজ্ঞানীরা তখন একে ‘গডড্যাম’ পার্টিকল নামে ডাকতে শুরু করলেন। এই গডড্যাম কণা হিগস-বোসনকে নিয়ে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক লিওন লেডারম্যান একটি বই লেখেন, যার শিরোনাম তিনি দিতে চেয়েছিলেন, দ্য গডড্যাম পার্টিকল: ইফ ইউনিভার্স ইজ দি আনসার, হোয়াট ইজ দ্য কোয়েশ্চেন? তবে তাঁর সম্পাদক-প্রকাশক বইটির কাটতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গডড্যামের বদলে গড বসিয়ে দেন। এতে কণাটির নাম হয়ে যায় গড পার্টিকল বা ঈশ্বর কণা। এই নামকরণের ফলে বইয়ের বিক্রি বাড়লেও বিজ্ঞানীরা বেশ চটে যান। কারণ, যেখানে ঈশ্বরের কোনো প্রসঙ্গই নেই, সেখানে ঈশ্বরকে নিয়ে খামোখা টানাটানি কেন! বিশেষ করে পিটার হিগস, যিনি নিজেই একজন নাস্তিক, খেপে গিয়ে বলেন, এমন নাম দিলে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বইটি বেরোনোর পর থেকে বিজ্ঞানী মহলে না হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই নামই দিব্যি চালু হয়ে গেছে।
৩. ঈশ্বর কণার বৈশিষ্ট্য কী কী?
যদিও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এই কণার ভর কত হওয়া উচিত, তা সূক্ষ্মভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না, তবু মোটামুটিভাবে ধরে নেওয়া হয় যে এর ভর 114 থেকে 185 GeV (গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট)-এর মধ্যে হওয়া উচিত। বলে রাখা ভালো, এক গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট হলো সেই পরিমাণ শক্তি, যা 18 কেজির এক কোটি কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ (1.8× 10-27 Kg) ভরবিশিষ্ট পদার্থের সমতুল্য। ঈশ্বর কণার বিপরীত কণা সে নিজেই। আপনি যদি একটি মৌলিক কণা হন এবং আপনি নিজেকে আয়নায় যেমন দেখেন, সেই রকম উল্টো চেহারার একটা কণার চার্জ যদি আপনার চার্জের বিপরীত হয় কিন্তু ভর হয় আপনার সমান, তাহলে আপনারা একে অন্যের বিপরীত কণা বা প্রতিকণিকা। তার মানে, ঈশ্বর কণার চেহারা আয়নার সামনে ওল্টাবে না, আর তার চার্জ শূন্য। কারণ, কোনো কণার চার্জ ধনাত্মক হলে তার প্রতিকণিকার চার্জ ঋণাত্মক হতে হবে এবং ঋণাত্মক হলে হবে ধনাত্মক। ঈশ্বর কণার ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা বা স্পিন শূন্য। কোনো মৌলিক কণার স্পিন যদি n হয় তবে সেটা কমপক্ষে 1/n চক্কর দিলে আগের মতো দেখায়। একজন ব্যালে নাচিয়ে যখন পুরো এক চক্কর (3600) ঘুরে আসেন, তখন তাঁর শরীর ঠিক সেই দিকে মুখ করে থাকে, চক্কর শুরুর আগে তিনি যেদিকে মুখ করে ছিলেন। তাঁর স্পিন ১। পুরো এক চক্কর না ঘুরে অর্ধেক চক্কর ঘুরলে যদি আগের অবস্থায় ফিরে আসা যায়, তবে স্পিন ২ হবে। স্পিন শূন্য মানে, ঈশ্বর কণাকে নিজ অক্ষের ওপর ঘুরতে দিলে কখনোই আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। ঈশ্বর কণার বৈদ্যুতিক চার্জ যেমন শূন্য, তেমনি কালার চার্জও শূন্য। কালার চার্জ হলো মৌলিক কণাগুলোর একটি বিশেষ ধর্ম, যার সঙ্গে কালারের বা রঙের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এটি ওই কণাগুলোর নিজেদের মধ্যে ক্রিয়াশীল সবল বলের (strong interaction) গতিপ্রকৃতি নির্দেশ করে। এই সবল বলের জন্যই বিভিন্ন কণা পরস্পরের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকতে পারে, যেমন নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রন। ঈশ্বর কণার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। তৈরি হওয়ার পর এর অর্ধায়ু বড়জোর সেকেন্ডের দশ হাজার কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগের (in the order of 10-25 seconds) শামিল। অর্থাৎ যতগুলো ঈশ্বর কণা একসঙ্গে তৈরি হয়, ওই সময় পেরোলে তার অর্ধেকই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। বাকি অর্ধের নিশ্চিহ্ন হতে আরও কিছু সময় লাগে, তবে তা-ও সেকেন্ডের অনেক ছোট ভগ্নাংশমাত্র। মোটামুটিভাবে এগুলোই হলো ঈশ্বর কণার বৈশিষ্ট্য। আমাদের জানা অন্যান্য মৌলিক কণা, যেগুলোর অস্তিত্ব কেবল গণিতে নয়, পরীক্ষায়ও প্রমাণিত, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য থেকে ঈশ্বর কণার এই বৈশিষ্ট্যগুলো অঙ্ক কষে বের করা হয়েছে।
৪. ঈশ্বর কণা কেমন আচরণ করে?
ঈশ্বর কণার আচরণ আলাদাভাবে বলার চেয়ে অসংখ্য ঈশ্বর কণা দিয়ে গঠিত হিগস-ফিল্ডের আচরণ ব্যাখ্যা করলে সুবিধা হবে। সর্বত্র বিরাজমান হিগস-ফিল্ডের মধ্য দিয়ে যখন কোনো কণা চলতে থাকে, তখন সেটা বাধা পায়। ঠিক যেমন মরুভূমি বা সমুদ্রসৈকতের বালু মাড়িয়ে যেতে হলে ধীরে চলা ছাড়া উপায় থাকে না। সেই বালুকাবেলা যদি হিগস-ফিল্ড হয়, তাহলে প্রতিটি বালুকণা এক একটি হিগস-বোসন বা ঈশ্বর কণা। এখন হিগস-ফিল্ডের মধ্য দিয়ে চলার সময় যে কণা যত বেশি বাধা পায়, সেটা তত আস্তে চলে। অন্যভাবে বললে, যে যত কম বাধা পায়, তার ভর তত কম এবং সে তত বেশি জোরে ছুটতে পারে। হিগস-ফিল্ডে ফোটন মোটেই বাধা পায় না, তাই ফোটন ছোটে আলোর বেগে। আমরা মেপে দেখি, ফোটনের ভর শূন্য। আবার ইলেকট্রন যদিও খুব হালকা, তবু একেবারে ভরহীন নয়। অর্থাৎ হিগস-ফিল্ড তাকে কিছুটা বাধা দেয়। এ জন্য সে আলোর বেগের চেয়ে একটু কম বেগে ছোটে। এমনিভাবে ব্যাখা করলে, প্রোটন আরও ভারী, কারণ সে হিগস-ফিল্ডে বাধা পায় আরও বেশি। অবশ্য মহাবিশ্বের একদম শুরুতে তাপমাত্রা যখন ছিল অনেক বেশি, তখন হিগস-ফিল্ডের গড় মান ছিল শূণ্য। ফলে তখন কোনো মৌলিক কণারই ভর ছিল না। সবাই ফোটনের মতো আলোর বেগে ছুটতে পারত। মহাবিশ্ব একটু ঠান্ডা হলে পরে এই সাম্যাবস্থা ভেঙে পড়ে। তখন হিগস-ফিল্ডের গড় মান আর শূণ্য থাকে না। এর ফলে মহাবিশ্বে একটি নতুন গুণের সূচনা হয়—ভর। ফোটনের অবশ্য এতে কিছু আসে-যায়নি, সে হিগস-ফিল্ডের গড় মান শূণ্য থাকার সময়ও ভরহীন ছিল, এখনো তা-ই আছে। এটা কিন্তু কোনো ব্যতিক্রম নয়। হিগস-ফিল্ডের সঙ্গে বিভিন্ন মৌলিক কণার ক্রিয়া বিভিন্ন রকম, এই তাত্ত্বিক সত্যের বাস্তব প্রতিফলনমাত্র।
৫. ঈশ্বর কণা কী দিয়ে তৈরি?
এভাবে বলার চেয়ে প্রশ্নটা এভাবে হতে পারে, ঈশ্বর কণা ভেঙে কী পাওয়া যায়? ঈশ্বর কণা তৈরি হওয়ামাত্রই আপনা থেকে ভেঙে যায়। ভেঙে গিয়ে অন্যান্য মৌলিক কণা তৈরি হয়।
৬. ঈশ্বর কণা সম্পর্কে জেনে কী লাভ?
বিজ্ঞানের যেকোনো মৌলিক অগ্রগতিই মানবসভ্যতার জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। মানুষের জ্ঞানভান্ডারে সঞ্চিত নতুন জ্ঞান এমনিতেই অমূল্য, তার পরও যদি কেউ মনে করেন, এটা আমার কী কাজে লাগবে কিংবা আমার জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন আনবে, তবে তাঁকে বলব, এই মুহূর্তে হাতেনাতে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞানের কোনো মৌলিক আবিষ্কারের ফলই রাতারাতি পাওয়া যায় না। তবে আইনস্টাইন যখন বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দেন, তখন কি কেউ ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল, এই আবিষ্কার একসময় আমাদের গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) মতো প্রযুক্তি উপহার দেবে? কিংবা অস্ট্রেলিয়ার এক তড়িৎ প্রকৌশলী জন ও’নিল কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যে তারহীন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ওয়াই-ফাই উদ্ভাবন করে ফেলবেন, এটাই বা কয়জন আগেভাগে বুঝতে পেরেছিলেন? কিংবা আর্কিমিডিসের সোনায় খাদ নির্ণয়ের মূলনীতি থেকে সাবমেরিন তৈরি হবে, এটা কি আর্কিমিডিস নিজেও ভেবেছিলেন?
৭. কণাটি কি সবকিছু ভেদ করে?
ভেদ করে চলে যাওয়া বলতে আমরা প্রচলিত অর্থে যা বুঝি, মৌলিক কণাগুলো আসলে সে রকম কিছু করে না। বরং বলা যায়, চলার পথে একটি মৌলিক কণার সঙ্গে যদি আরেকটি মৌলিক কণার মোলাকাত হয়, তখন তারা হয় পরস্পরকে বাধা দেবে বা প্রভাবিত করবে অথবা বাধা দেবে না। যদি বাধা দেয়, তবে আমরা বলি, তারা একে অপরকে সহজে অতিক্রম করতে পারছে না। আর যদি বাধা না দেয়, তাহলে আমরা বলি, তারা একে অপরের সঙ্গে কোনো ক্রিয়া করে না বা সহজেই ভেদ করে চলে যায়। কারও কারও সঙ্গে ঈশ্বর কণার কোনো লেনদেন নেই, যেমন—ফোটন। আবার কারও কারও পথ সে হামেশাই আটকায়, যেমন—প্রোটন বা টপ কোয়ার্ক।
৮. ঈশ্বর কণা আমাদের কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে কি?
বিজ্ঞানের কোনো মৌলিক আবিষ্কারই আপনা থেকে মানুষের ভালো বা মন্দ—কোনোটা করার ক্ষমতাই রাখে না। পুরোটাই নির্ভর করে মানুষ একে কীভাবে কাজে লাগায় তার ওপর। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কল্যাণে আমরা জিপিএস পেয়েছি, ভবিষ্যতে হয়তো আন্তনাক্ষত্রিক ভ্রমণের প্রযুক্তি পাব, কিন্তু ইতিমধ্যে এই তত্ত্ব ব্যবহার করে নিউক্লীয় বোমা তৈরি করা ও তা নিক্ষেপ করার মতো জঘন্য কাজ হয়েছে, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আইনস্টাইন বা তাঁর তত্ত্বের সেখানে কী-ই বা করার ছিল, যখন পৃথিবীর একটি অত্যন্ত ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নিজেই এই অপকর্মের হোতা। একইভাবে ঈশ্বর কণা মানবজাতির জন্য কোনো অমঙ্গল ডেকে আনবে কি না, তা মানুষই নির্ধারণ করবে। আমরা যদি এটি সম্পর্কে সচেতন থাকি এবং বিজ্ঞানকে ভালো করে বুঝি, তাহলে ও রকম অমঙ্গল প্রতিহত করতে পারব এবং ঈশ্বর কণার জ্ঞান শুধু মঙ্গলের জন্যই যাতে ব্যবহূত হয়, তা নিশ্চিত করতে পারব। আমরা যদি বিজ্ঞান না শিখি এবং আমাদের যদি বিজ্ঞানচেতনা না থাকে, তাহলে হিরোশিমা-নাগাসাকির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পারব না।
৯. ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব কী করে প্রমাণ করা হলো?
কণাসম্পর্কিত গাণিতিক মডেলের একটি ভবিষ্যদ্বাণী হলো, উচ্চগতিতে প্রোটনের সঙ্গে প্রোটনের সংঘর্ষ হলে বেশ কিছু মৌলিক কণা উৎপন্ন হয়। ঈশ্বর কণা সেগুলোর একটি। CERN-এর লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্রে ঠিক এই কাজই করা হয়েছে। তারপর উৎপন্ন কণাগুলোর উপস্থিতি বিশেষ ডিটেক্টরে নির্ণয় করে বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যদিও ঈশ্বর কণাকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন, যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, সেটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। তবু দেখা গেছে, উৎপন্ন একটি কণার ভর প্রায় 125 GeV, যা ঈশ্বর কণার একটি সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাত্ত্বিক হিসাবের সঙ্গে মিলে যায়। এ ছাড়া অন্যান্য অনেক দিক দিয়ে আবিষ্কৃত কণাটির সঙ্গে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঈশ্বর কণার তত্ত্বগত মিল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত যে এটাই আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত ঈশ্বর কণা। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হলে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
১০. যদি দেখা যায় যে আবিষ্কৃত নতুন কণাটি ঈশ্বর কণা নয়, তখন কী হবে?
যদি শেষে দেখা যায়, আমরা যা ভাবছিলাম, নতুন কণাটি তা নয়, তখনো চিন্তা নেই। তাহলে এই নতুন কণাকে স্থান দেওয়ার জন্য আমাদের পরিচিত সালাম-ভাইনবার্গ-গ্লাশাওর তৈরি মৌলিক কণাসমূহের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সম্প্রসারণ করতে হবে। তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদেরা সে কাজটি ৩০ বছর ধরেই করছেন, এমন অনেক সম্ভাব্য বিকল্প এবং সম্প্রসারিত মডেল রয়েছে। সেগুলো তখন নিত্যনতুন গবেষণার পথ দেখাবে।
(Source: Prothom Alo)