রোজার প্রধান শিক্ষা 'তাকওয়া'

Author Topic: রোজার প্রধান শিক্ষা 'তাকওয়া'  (Read 3218 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
মানুষ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর খলিফা। জীবন ও জগতের যাবতীয় কাজ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করবে- এটাই মানবজীবনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে শয়তান, তার নিজের প্রবৃত্তি ও পার্থিব মোহ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সব বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে, সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আত্মার যে গুণটি তাকে দুর্বার গতি ও অক্ষত শক্তি জোগায় এর নাম হলো তাকওয়া। আর এই তাকওয়া হলো রোজার প্রধান শিক্ষা। আল্লাহ এ মর্মে ইরশাদ করেছেন, 'হে ইমানদাররা তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।' (সুরা বাকারা : ১৮৩ আয়াত)

তাকওয়া আরবি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ভয় করা, আত্মরক্ষা করা, বিরত থাকা ইত্যাদি। তাকওয়া শব্দটির বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ উলামা খোদাভীতি শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় তাকওয়া বলতে মুমিন ব্যক্তির হৃদয়ের এমন অবস্থাকে বোঝায়, যা তাঁকে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত রাখে। অর্থাৎ তাকওয়া মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজে এ কথা ভাবতে বাধ্য করে, জীবনের ছোট-বড় সব কাজের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হিসাব দিতে হবে। জীবনের কোনো ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বিধান লঙ্ঘিত হলে, এর জন্য মৃত্যুর পরে ভীষণ শাস্তি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ তাকওয়া সব সময় মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহর নির্দেশ পালনে ও নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে। অন্যভাবে বললে, তাকওয়া হলো আত্মার এমন এক শক্তি, যা ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। মুত্তাকি ব্যক্তি হয় আত্মনিয়ন্ত্রিত। সে সব সময় প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের আত্মার শাসনাধীন থাকে। যে কাজটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে সহায়ক হবে বলে তার আত্মা অনুমোদন দেয়, কেবল সে কাজটিই সে করতে পারে। আর যে কাজ দ্বারা মহান মাওলার অসন্তোষ নেমে আসবে, জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে, সে কাজ সে কিছুতেই করতে পারে না। তাই মুত্তাকি ব্যক্তির জন্য জাগতিক অনুশাসন আর বিধিবিধানের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। অতএব বলা যায়, জীবনের পবিত্রতা ও মুক্তি আর সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তির মূল চাবিকাঠি হলো তাকওয়া। কারণ ব্যক্তির আত্মা যদি কলুষিত হয়, তার অভ্যন্তরীণ শক্তি যদি তাকে কুপথে পরিচালিত করে, তাহলে কোনো অনুশাসনই তার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও অশান্তিও কোনো উপায়েই বন্ধ করা যায় না।
মহান আল্লাহ মানুষের জীবন ও সমাজকে শান্তিপূর্ণ করতে, সাফল্য ও পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করতে, মহামূল্যবান গুণ তাকওয়ার শক্তি অর্জন করতে রমজানের মাসব্যাপী রোজা পালন ফরজ করে দিয়েছেন। একজন রোজাদারের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় ও যৌনতা হারাম। তাই সে রমজান মাসের দিনের বেলায় জীবনের সব থেকে হালাল খাদ্য ও পানীয় যদিও তা মদিনার সর্বোৎকৃষ্ট আজওয়া খেজুর বা জমজমের পানিই হোক না কেন এবং বিবাহিত স্ত্রীকেও বর্জন করে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর ফরমান দ্বারা এসব হালাল বিষয়কে সাময়িকভাবে হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। এভাবে ৩০ দিন রোজার অনুশীলনের মাধ্যমে রোজাদার সত্যিকার মুমিন ভাবতে বাধ্য হয়, যে বিষয়গুলোকে মহান আল্লাহ সারাটি জীবনের জন্য হালাল করেছেন, যে বিষয়গুলোকে আল্লাহর রাসুল সাওয়াবের কারণ বলেছেন, সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে যদি জাহান্নামের এত কঠিন শাস্তি অবধারিত হতে পারে, তাহলে যে বিষয়গুলো গোটা জীবনের জন্য হারাম, জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কোনো সময়ে যা হালাল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, সে বিষয়ে যদি আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা হয়, তা হলে তার শাস্তিটা কত ভয়াবহ হতে পারে! অর্থাৎ এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে প্রত্যেক রোজাদার তাঁর গোটা জীবনে হালাল অর্জন ও হারাম বর্জনের নৈতিক শিক্ষা অর্জন করবে তথা তাকওয়া অর্জন করবে- এটাই রোজার আসল শিক্ষা।

তাকওয়া চারটি বর্ণের সমষ্টি ছোট্ট একটি শব্দ হলেও জড়বাদী, দুনিয়া পূজারির কাছে তা অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। যখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রঙিন জীবনের হাতছানি দেখা যায়, যখন চরম দারিদ্র্য, জঠরজ্বালা আর চরম উপেক্ষার মধ্যে বিপুল বিত্ত-বৈভব আর নেতৃত্বের আহ্বান শোনা যায়, যখন প্রচণ্ড যৌন উত্তেজনার মধ্যে সুন্দরী ষোড়শীর যৌনাবেগ দুর্বার আকর্ষণ করে, তখন নীতির বিষয়টি ভাববার সাধ্য আছে কার? হ্যাঁ, একজন জড়বাদীর কাছে যে বিষয়টি সব থেকে কঠিন অসম্ভব, একজন খাঁটি ইমানদারের কাছে সেটাই সব থেকে সহজ এবং তাতেই তার তৃপ্তি। কারণ তাকওয়া তাকে শক্তি জোগায় অন্যায়কে এড়িয়ে চলার ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে সব সংকট উত্তরণের পথ বের করে দেন। আর তাকে এমনভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করেন, যা সে ভাবতেও পারে না। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।' (সুরা আত্-ত্বালাক : ২ ও ৩ আয়াত)। একজন মহিলা সাহাবি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার পর নিজেকে ইসলামী দণ্ড- প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর জন্য এগিয়ে দিয়েছিলেন তাকওয়ার কারণেই। কারণ পৃথিবীর মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে জাহান্নামের শাস্তি অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক, ভয়াবহ ও চিরস্থায়ী। তবুক অভিযানে অংশগ্রহণ না করার কারণে রাসুল (সা.) প্রদত্ত শাস্তি সামাজিক বয়কট চলাকালে হজরত কাব ইবনে সালেকের পক্ষে গায়সান গোত্রের নেতৃত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়েছিল তাকওয়ার কারণে। পূর্ণ যৌবনে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পক্ষে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী-যুবতী জুলেখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কারাবরণ করা সম্ভব হয়েছিল তাকওয়ার কারণে।

রোজার আসল শিক্ষা হলো তাকওয়া। আর তাকওয়ার সার কথা হলো ব্যক্তির ওপর তার আত্মার নিয়ন্ত্রণ। রমজানের একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিটি রোজাদারের অন্তর ভরে উঠুক তাকওয়ার গুণে, দেশে-দেশে গড়ে উঠুক পাপাচারমুক্ত সুশৃঙ্খল-শান্তিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা।

Offline tree

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 154
    • View Profile
Thakhoa is the important for the Ramadan its good for all the people and the life which life give us Allah 

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
রমজান মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয়েছে। এ মাসে কিছু আমল এমন আছে যেগুলো সব মুসলমানই জানে এবং তার ওপর আমল করে। রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। রোজা শব্দটি ফারসি। রোজার আরবি শব্দ সওম। যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। পরিভাষায় সওম বলা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। এই সওম শুধু এই উম্মতের জন্য ফরজ করা হয়নি। পূর্ববর্তী সব ধর্মাবলম্বীর প্রতিই সিয়াম সাধনার নির্দেশ ছিল। এ কারণে কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকি) হতে পার। (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৩)। এ আয়াতের মাধ্যমে আমরা তিনটি বিষয় জানতে পারি—১. রোজা ফরজ হওয়া, ২. পূর্ববর্তী সব আসমানি ধর্মের ও রোজার বিধান ছিল, ৩. রোজার বিধান কেন দেয়া হয়েছে। রমজানের রোজা কেন ফরজ করা হয়েছে, এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা অতি সংক্ষেপে বলেছেন, ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’—যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। অর্থাত্ বান্দাকে মুত্তাকি বানানোই সিয়ামের লক্ষ্য। কাজেই রোজাদারের কর্তব্য প্রথমে তাকওয়া সম্পর্কে জানা। তারপর সিয়াম সাধনার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাঝে যাতে তাকওয়ার গুণ এসে যায় সে ব্যাপারে যত্নবান হওয়া। তাকওয়ার অর্থ হলো আল্লাহভীরু, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা করা।

তীব্র গরমের মাঝে বান্দা শুধু এজন্যই পানি পান করা থেকে বিরত থাকে যে, একদিন মহান আল্লাহর দরবারে তার দাঁড়াতে হবে। যদি এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে তাকওয়া অন্তরে সৃষ্টি হয়ে যাবে। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি রোজা এজন্যই ফরজ করেছি যাতে এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়ার বাস্তব প্রশিক্ষণ লাভ করবে। এভাবে রোজাদার ব্যক্তি দীর্ঘ এক মাস আল্লাহর ভয়ে তার স্বভাব-প্রকৃতিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টার ফলে মানবাত্মা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। তাই হাদিসে আছে, হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাদের প্রতিপালক বলেন—রোজা হলো ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্য, আর আমিই এর পুরস্কার দেব। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৪৬৬৯) অন্য এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ২০১৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭৬০)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের রোজার তাত্পর্য বোঝার এবং এর মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়ার গুণ পয়দা করার তৌফিক দান করুন।