রোজা : দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির নিয়ামক

Author Topic: রোজা : দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির নিয়ামক  (Read 1362 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
ইসলামের মূল পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে রোজা হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এ রোজা বা উপবাস হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বকালে ও সর্বধর্মে প্রচলিত ছিল। তবে ইসলাম ধর্মেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য একমাস সাওম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে। তাই রোজার মূল উদ্দেশ্যের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন : ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী ও আল্লাহ্ভীরু হতে পার।’

রোজার আরবি হলো ‘সাওম’। এর অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও ইন্দ্রিয়ের কামনা-বাসনা থেকে বিরত থাকা। অর্থাত্ নির্দিষ্ট এই সময়ে প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য অনেক হালাল বস্তু নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, হালাল হওয়া সত্ত্বেও রোজার দিন কেন তা নিষিদ্ধ করা হলো এবং এতে আল্লাহ তায়ালার কী উদ্দেশ্য রয়েছে? এর উত্তরে স্পষ্টভাবে এটা বলা যায় যে, আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে যেসব ইবাদত বান্দার ওপর ফরজ ও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এতে রয়েছে মূলত বান্দার ইহকাল ও পরকালের অশেষ উপকার ও মুক্তির উপায়। কারণ আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহ্র তাসবিহ পাঠ করে থাকে। যেমন—পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন : ‘(আসমান ও জমিনে) এমন কিছু নেই যা আল্লাহ্র তাসবিহ পাঠ না করে, যদিও তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।’ সুতরাং মানুষ আল্লাহ্র ইবাদত না করলেও অন্যান্য সৃষ্টি সর্বদা আল্লাহ্র ইবাদতে মগ্ন রয়েছে। ইবাদতের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মানুষই কল্যাণ লাভ করে থাকে।

সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত হলো মানুষ। কাজেই আল্লাহ্পাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এমন সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যা পালনের মাধ্যমে মানুষ জাগতিক ও আত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে। এমন ধরনের একটি ইবাদত হলো রোজা। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অতি ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হওয়া সত্ত্বেও পানাহার থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত কঠোর কাজ। সঙ্গে সঙ্গে বৈধ হওয়া সত্ত্বেও ইন্দ্রিয় কামনা-বাসনা থেকে বিরত থাকাও একটি কঠোর পরীক্ষা। এ কঠোর নিষেধাজ্ঞার পেছনে রয়েছে বান্দার দৈহিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির এক বাস্তব প্রশিক্ষণ, যা অন্য কোনো পন্থায় অর্জন করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। রোজার দ্বারা দৈহিক যে পরিশুদ্ধি ও উন্নতি লাভ করা যায় তা হলো এই যে, মানুষ যেসব খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে তা পাকস্থলীতে পৌঁছার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হজম হয়ে যায়। সারা বছর পাকস্থলী একইভাবে ক্রিয়াশীল থাকায় এর ভেতর এক প্রকার বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য অনিষ্টকর। বছরে একমাস রোজা রাখার কারণে বিষাক্ত গ্যাস দূরীভূত হয়ে যায় এবং পাকস্থলী শক্তিশালী হয়। যার ফলে রোজার পরে রোজা পালনকারীদের ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়, স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

এছাড়া সারাদিন অভুক্ত থাকার পর ইফতারের সময় যা কিছু পানাহার করা হয় তা অতি সহজেই হজম হয়ে যায়, আবার রাতে এশার নামাজের সঙ্গে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করার পর দেহ ও মন উভয়ই খুব হালকা অনুভব হয় এবং দেহে নতুনভাবে শক্তি ও সজীবতা সৃষ্টি হয়। এমনিভাবে এক মাস রোজা রাখার পর দেহে বিশেষ শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে থাকে।

বেশকিছু রোগ মানুষের জীবন ধারণ প্রণালী ও কুঅভ্যাসের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন—ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকাসক্তির কারণে ক্যানসার, টিউমার, যকৃতের প্রদাহ, গনোরিয়া, সিফিলিস ও মরণব্যাধি এইড্স্ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোজার কারণে আহারে পরিমিতিবোধ এবং ধূমপান ও মদ্যপান থেকে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বিরত থাকে। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালন করার ফলে এসব ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগ করা অতি সহজ হয়ে যায় এবং মারাত্মক ব্যাধির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়ে দেহ পরিশুদ্ধি লাভ করে।

কেউ বলতে পারে যে, রোজার কারণে সারাদিন উপবাস থাকলে গ্যাস্ট্রিক বা উদরাময় রোগ হতে পারে। এটা মূলত আত্মপ্রবঞ্চনামূলক কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রোজা রাখা বা উপবাসের কারণে কখনও গ্যাস্ট্রিক হয় না। বরং সামান্য পরিমাণ এ রোগ থাকলেও রোজার কারণে তা অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ আরোগ্য হয়ে যায়। তবে পূর্ব থেকেই যদি মারাত্মক ধরনের গ্যাস্ট্রিক আলসার থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা পরিত্যাগ করার বিধানও ইসলামে রয়েছে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় অথবা ভ্রমণে বের হয় (এবং রোজা রাখা কষ্ট হয়) তবে সে পরবর্তী সময়ে ওই রোজা পূরণ করবে। এছাড়া দৈহিকভাবে মানুষের ওপর কষ্ট হবে এমন কোনো ইবাদত আল্লাহ তায়ালা কখনও কারও উপর চাপিয়ে দেননি।