আত্মশুদ্ধি ও ঈমান মজবুতের মাস রমজান

Author Topic: আত্মশুদ্ধি ও ঈমান মজবুতের মাস রমজান  (Read 1694 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রমজানের উদ্দেশে নিবেদিত কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে রমজানের গুরুত্ব এভাবে :
“ওগো রমজান, তোমারই তবে মুসলিম যত
রাখিয়া রোজা ছিল জাগিয়া চাহি তব পথ,
আনিয়াছিলে দুনিয়াতে তুমি পবিত্র কুরআন।”
আসলে পবিত্র কোরআন এ মাসের ২৭ কদরের রাতে অবতীর্ণ শুরু হয়। এ জন্যই এত মর্যাদা এ মাসের। এ মাসে আল্লাহ সোবহানুতায়ালা তাঁর অগণিত রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। শাবান মাসের সমাপ্তির পর আকাশে এক ফালি চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে, কীভাবে তারা এই প্রিয় মাস থেকে ফায়দা হাসিল করবে ও কীভাবে ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়া যাবে। বিশ্বে মুসলিম সমাজ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে রমজানকে স্বাগত জানায়।

আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতা পরিশুদ্ধির সুমহান বার্তা নিয়ে রমজান ঘুরে-ফিরে বছর পরিক্রমায় আমাদের ঘরে ঘরে এসে হাজির হয়। সিয়ামের সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আমাদের জন্য খুলে দেয় আশরাফুল মাকলুকাতের বৈশিষ্ট্য অর্জনের পথ। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের জীবনে বহুবার সিয়াম এসেছে, কিন্তু অনেকের পরিবর্তন হয়নি স্বভাব-চরিত্র ও আচার-আচরণের। আমরা সিয়ামের যথার্থতা এখনও উপলব্ধি করতে পারিনি। আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান আমরা মুখে বলে থাকি, কিন্তু কীভাবে এটা আমাদের আমল-আখলাকের পরিবর্তন সাধন করতে পারে, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? নৈতিক চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে রমজানের ভূমিকা কী? আমাদের সমাজে রমজানের পবিত্রতা কি রক্ষা করা হচ্ছে? রমজান মাস আসার আগেই দেখা যায় সব দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, চোরাকারবারী, মজুতদার ও ফটকাবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ঊর্ধ্বগতিতে বেড়ে চলে সব মালামালের মূল্য। কেন এরকম হয়? রোজা তো বলে মানুষের প্রতি ইহসান করার জন্য। এসব বিষয় ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং সমাজের অন্যায়, অসত্য, জুলুমবাজি ইত্যাদির মূলে কঠোর আঘাত হানতে হবে।

আত্ম-পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টিও মহান স্রষ্টার কাঙ্ক্ষিত জীবনধারা অনুসরণ করাই রমজানের সাধারণ মূল লক্ষ্য। পার্থিব জীবনের লাখো চাহিদা, বিভিন্ন লোভ-লালসা, ভয়ভীতি সব কিছুর মধ্য থেকে এ মহান কাজে মনোযোগী হওয়া সহজ কাজ নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষার জন্য। আর পরীক্ষা মাত্রই কিছু কষ্টসাধ্য ও কঠিন কাজ। আল্লাহতায়ালা তাঁর সেরা সৃষ্টিকেও পরীক্ষার মাধ্যমে যার যা প্রাপ্য, সেভাবে রোজ হাশরের দিনে পুরস্কৃত করবেন। এ জীবনে কারা তাঁর মনোনিত পথে চলে, আর কারা স্বেচ্ছাচারী ও শয়তানের অনুগত, এটা দেখার বড় পরীক্ষা ক্ষেত্র হচ্ছে এ দুনিয়া। এ পুরো জীবনের যত দিক ও বিভাগ আছে, সব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত ইহজীবনকে সুন্দর ও আল্লাহর কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডে উন্নীত করতে হলে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা সম্ভবত একটা মাধ্যম। কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র আল-কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘মানুষের প্রতি ফরজকৃত এ রোজার উদ্দেশ্য হলো তোমরা যেন তাকওয়া ও সংযমী জীবনের অধিকারী হতে পারো।’ এখন সব রোজাদারকে দেখতে হবে সংযমের ক্ষেত্রগুলো কী কী? দৈনন্দিন জীবনের যেসব ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি সংযম বজায় রেখে চলার স্থায়ী নির্দেশ রয়েছে, সেগুলোতে গত এগার মাসে কী কী অবহেলা ঘটেছে, কী কী ত্রুটি-বিচ্যুতি আমরা এ দীর্ঘ সময়ে করেছি, সেসব ত্রুটি রোজার প্রথম পর্বেই সংশোধন করে নিতে হবে।

এর সঙ্গে রমজান মাসে সিয়াম ও ইবাদতের অতিরিক্ত কর্মসূচি হিসেবে একজন রোজাদারের যা যা পালনীয় সেগুলো পালনে পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে। কোনো রোজাদার হয়তো আগে অবৈধ রোজগার করত, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণা করত, পণ্যে ভেজাল দিত, মদ খেত, ঘুষ গ্রহণ করত, অন্যায়ভাবে অন্যের হক নষ্ট করত, অন্যের সম্পদ জবর-দখল করে নিত, অন্যের কুত্সা রটনা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস, একের বিরুদ্ধে অপরকে উসকে দিত, নিজের শালীনতা ও পবিত্রতা বজায় রাখত না, বেগানা নারী-পুরুষের সঙ্গে অবাঞ্ছিত কথা-কাজের সম্পর্ক ছিল, অসত্ চিন্তা ও অসত্ কাজ তার মগজে গিজ গিজ করত, বড়কে সম্মান ও ছোটকে স্নেহ না করে তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করত, অভিভাবকদের কথার অবাধ্য চলত, দায়িত্বে অবহেলা করত, ওয়াদা খেলাপকে দোষ মনে করত না, আমানতের খেয়ানত করত, অপরাধপ্রবণতা নিজ চরিত্র থেকে দূর না করে বরং তা লালন করত, রিয়াকারী বা লোক দেখানো কাজ করত। এতে রমজান মাসের আগমন ও রোজা রাখা আর না রাখা তার জন্য সমান কথা হয়ে দাঁড়ায়। তাকওয়া ও সংযমের মাধ্যমে নিজ আত্মাকে সম্পূর্ণ আল্লাহর অনুগত করে অপরাধপ্রবণতা মন থেকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা এবং আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টিকে নিজ জীবনে প্রাধান্য দেয়ার অভ্যাস তার মধ্যে গড়ে তোলার কাজে সে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলো। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখল এবং মিথ্যা, অবাঞ্ছিত কথা-কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হলো, তার রোজা রাখা আর না রাখা সমান কথা।’