মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সংক্রমণ

Author Topic: মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সংক্রমণ  (Read 1548 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2667
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
অনেক মহিলা ঘন ঘন প্রস্রাবের সংক্রমণে ভোগেন। দেখা গেছে, ওষুধ খাওয়ার কিছু দিন ভালো থাকেন। আবার তার মূত্রপথে সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলাই বার বার মূত্রপথে সংক্রমণের অভিযোগ করেন। কেন তারা ঘন ঘন মূত্রপথের সংক্রমণের শিকার হন তা নির্ণয় করা জরুরি এবং সেই মতো চিকিৎসা করাও জরুরি। হুটহাট করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান না করে আগে রোগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার মূত্রপথের সংক্রমণ ঘটার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রপথের কোষের দেয়ালে এঁটে রাখার ক্ষমতা। এনআইএইচ’র গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যেসব মহিলার বারবার মূত্রপথের সংক্রমণ হয়, তাদের এই সংক্রমণের জন্য রক্তের বিশেষ ধরণও দায়ী। এসব মহিলা যোনি ও মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সহজে লেগে থাকে।

গর্ভাবস্থায় মূত্রপথের সংক্রমণ: অন্য মহিলাদের তুলনায় গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রপথে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায় না। তবে গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রপথে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বেশ কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের সংক্রমণ রোধে আক্রান- হন প্রায় দু-চার শতাংশ গর্ভবতী মহিলা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন হয় বলে এবং মূত্রপথের অবস্থান সরে যায় বলে ব্যাকটেরিয়া সহজে বৃক্কনালী পথে কিডনিতে পৌঁছে। এ কারণে গর্ভাবস্থায় প্রতি মাসে অন-ত: একবার প্রস্রাবের পরীক্ষা করে কোনো সংক্রমণ আছে কি না তা দেখা উচিত।

কিডনি রোগ ও মূত্রপথের সংক্রমণ : কিডনি রোগের প্রধান দু’টি কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। পরিবারের কারো কিডনি রোগ হলে এ রোগে আক্রান- হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া নেফ্রাইটিস, ডায়রিয়া, পুড়ে যাওয়া, একাধিকবার মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রনালীতে কোনো প্রতিবন্ধকতা, পলিসিস্টিক কিডনি, টিউবারক্যুলোসিস বা যক্ষ্মা, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, দীর্ঘ দিন ব্যথার ওষুধ খাওয়া প্রভৃতি কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। কিডনি রোগের উপসর্গ হলো-ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্তস্বল্পতা, ক্লানি-বোধ করা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, হাত-পা ও চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, রক্তে ইউরিয়া ও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, ইউরিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, অল্প পরিশ্রমে বুক ধড়ফড় ও শ্বাসকষ্ট হওয়া, কোমরের পেছন দিকে ব্যথা করা ইত্যাদি।

রোগের লক্ষণগুলো কী?: মূত্রপথের সংক্রমণের প্রত্যেকেরই রোগের উপসর্গ থাকে না। তবে বেশির ভাগ লোকের কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে। এসব উপসর্গের রয়েছে ঘনঘন প্রস্রাব করার তাড়া এবং প্রস্রাব করার সময় মূত্রথলি বা মূত্রনালী এলাকায় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া অনুভব করা। মূত্রপথের সংক্রমণের অনেক রোগী অভিযোগ করেন, তাদের ঘনঘন প্রস্রাবের পরিবর্তে খুব সামান্য পরিমাণ প্রস্রাব হচ্ছে। প্রস্রাব দুধের মতো অথবা ঘোলা হতে পারে। এমনকি লালচে হতে পারে যদি প্রস্রাবে রক্ত থাকে। যদি জ্বর থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়েছে। কিডনির অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পিঠ ব্যথা অথবা পাঁজরের নিচে দু’পাশে ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি। শিশুদের ক্ষেত্রে মূত্রপথের সংক্রমণকে অধিকাংশ মা-বাবাই উপেক্ষা করেন। অথবা এটাকে অন্য সমস্যা বলে মনে করেন। যদি শিশু খিটখিটে হয়ে যায়, স্বাভাবিক ভাবে খেতে না চায়, দীর্ঘ দিন জ্বর থাকে, পাতলা পায়খানা হয় কিংবা স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। তাহলে বুঝতে হবে তার মূত্রপথের সংক্রমণ হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাতে হবে। যদি শিশুর প্রস্রাবের ধরনে কোন পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখাবেন।

ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল
আবাসিক সার্জন, সার্জারি বিভাগ
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২২, ২০১০