উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নিরাময়

Author Topic: উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার নিরাময়  (Read 1258 times)

Offline Mohammed Abu Faysal

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 230
    • View Profile
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমস্যায় আমাদের অনেকেরই দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। উদ্বেগ  (Anxiety) আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের অজানা ভয়, অস্থিরতা কাজ করে। ভয়ের কারণে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়ে পড়ে। রোগীর বুক ধড়ফড় (Palpition) বা হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত হতে থাকে। দম আটকে আসার অনুভূতি হয়। মাথা ঘোরে। শরীর শিউরে ওঠে, কাঁপুনি বা পুরো শরীরে ঝাঁকুনি দেয়। শরীরের কোনো অংশে অথবা মুখমণ্ডলে সুঁচ ফুটানোর অনুভূতি কিংবা মনে হয় শরীরে পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে।

এক ধরনের ভয় তাকে তাড়া করে। মনে হয় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে যাচ্ছে। অথবা সে মরে যাচ্ছে এই ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসে। তার শরীরে কোনো রোগ না থাকলেও মনে করে তার অনেক রোগ রয়েছে। সে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ভেবে সব সময় মৃত্যুভয়ে কাতর থাকে। বারবার একই চিন্তা তাকে বিপন্ন করে তোলে। সে নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা করে রাখতে চায়। সে ভয়ে বাজারে যেতে চায় না। পাবলিক বাসে উঠতে পারে না। বন্ধ স্থান, যেমন লিফটে উঠতে পারে না। ছোট রুম কিংবা দরজা-জানালা আটকানো ঘরে সে থাকতে পারে না। কারো সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে চায় না। মোট কথা, সমাজে সে কারো সাথে ওঠা-বসা করতেও ভয় পায়। ভীতির মারাত্মক অবস্থায় সে ঘরের বাইরে যাওয়াও বন্ধ করে দেয়। তার মনে একই ভাবনা বারবার ঘুরপাক খায়। সে একই কাজ বারবার করতে চায়। মানে তার মধ্যে অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (Obsessive-Compulsive Disorder) দেখা দেয়।

মূলত ডিপ্রেশন বা বিষণÅ“তার মারাত্মক পরিণতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ রোগী যাদের মারাত্মক ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার থাকে তারাই উদ্বিগ্নতার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।

এখানে মনে রাখতে হবে, দুশ্চিন্তা হলো ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা। আর আমরা যখন দুশ্চিন্তা করি তখন আমরা এই ভেবে ভয় পাই যে, ভবিষ্যতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে পারে। এটাই হলো ভীতি। এই ভীতি থেকেই সৃষ্টি হয় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের নানা অভিঘাত।

জীবনের যেসব অসুবিধার কারণে ভয় ও উদ্বেগের জন্ম হয়, তার মধ্যে রয়েছে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা, যেমনÑ বাবা-মায়ের সাথে কিংবা স্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় না থাকা। নিকটজনকে হারানোর বেদনা, চাকরি হারানো, নিজের শারীরিক অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে নানা অসুবিধা, অর্থ সমস্যা, যেমনÑ ব্যবসায়ে লোকসান বা ঋণগ্রস্ততা ইত্যাদি। এ ছাড়া মদপান বা ড্রাগ আসক্তি এবং সহিংসতা থেকেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম হতে পারে।

মূলত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের মনের বিপদের ভয়ই বেশি সংক্রমিত হয়। অজানা কোনো বিপদের আশঙ্কায় সে অস্থির হয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে যদি মনে রাখে, ‘আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোনো বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎ পথ প্রদর্শন করেন (সূরা তাগাবুন-১১)’। অথবা যদি স্মরণ করে, ‘যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন (সূরা আশ শুয়ারা-৮০)।

তা ছাড়া আল্লাহ বলেই দিয়েছেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদেরই কর্মের ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন (আশ-শুরা-৩০)।

আসলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অস্থির। আল কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির স্বভাবের করে। যখন কোনো মন্দ স্পর্শ করে সে হা-হুতাশ করে (আল মা’আরিজ-১৯-২০)। এ জন্যই আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন, যখন মানুষ বিপদে পতিত হয় তখন যেন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো (বাকারা-১৫৬)। একই সাথে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার কথা বলা হয়েছে (বাকারা-১৫৩)।

মূলত আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে তার অভিভাবকত্বের ওপর নির্ভরশীল থাকার মাধ্যমেই মানুষ তার মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে পারে।