মোটাতাজাকরণ পশুর গোশত কতটুকু নিরাপদ.

Author Topic: মোটাতাজাকরণ পশুর গোশত কতটুকু নিরাপদ.  (Read 2038 times)

Offline Mohammed Abu Faysal

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 230
    • View Profile
গরু মোটাতাজাকরণ বা বিফ ফ্যাটেনিং (Beef Fattening) বলতে যা  বোঝায় তা হলোÑ বাড়ন্ত এঁড়ে গরুকে অল্প দামে ক্রয় করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের (চার-ছয় মাস) মধ্যে উন্নত ব্যবস্থাপনায় এবং বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে ওই গরুর শরীরে অধিক পরিমাণ গোশত/চর্বি বৃদ্ধি করে অধিক লাভে বাজারে বিক্রি করা।

গরু মোটাতাজাকরণ জনপ্রিয় হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে : অল্প জায়গা ও সামান্য পুঁজি; অল্প সময়ের (চার-ছয় মাসের) মধ্যে লাভসহ মুনাফা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা; স্বকর্মসংস্থানের সুযোগ; বাজারে গোশতের চাহিদা সব সময় বেশি থাকায় বাজারদর নিম্নগতি না হওয়ার সম্ভাবনা; বাড়ন্ত গরুর রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কম থাকায় লোকসানের ঝুঁকি কম থাকা; স্থানীয় হাটবাজার থেকে সহজেই পশু ক্রয় করে প্রকল্প শুরু করার সুযোগ; বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাদ্যদ্রব্যের সদ্ব্যবহার করে পশুকে লালন-পালনের সুবিধা।

সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কতগুলো আবশ্যকীয় বিষয়ের ওপর নজর দিতে হয় যেমন : ১. প্রকল্প চালুর উপযুক্ত সময় নির্বাচন, ২. পশু নির্বাচন (পশুর বয়স ও জাত নির্ণয়) ও ক্রয়, ৩. গরুর স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্ধারণ, ৪. নির্বাচিত পশুর স্বাস্থ্য পরীা-নিরীা ও চিকিৎসা প্রদান, ৫. সুষম ও পরিমাণমতো খাদ্য সরবরাহ, ৬. সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক প্রদান, ৭. প্রতি ১৫ দিন অন্তর গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয়, ৮. গরুর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, ৯. এঁড়ে গরুকে খোঁজাকরণ, ১০. মোটাতাজাকরণের মেয়াদকাল নির্ধারণ, ১১. গরু বাজারজাতকরণ এবং ১২. গরু মোটাতাজাকরণের বিনিয়োগ ও মুনাফার তথ্য রেকর্ডকরণ।

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পশুকে কৃমিমুক্ত না করতে পারলে পশুকে যতই খাবার সরবরাহ করা হোক না কেন, তার স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হয় না। তবে সমস্যা হচ্ছে, পশু মালিকেরা সাধারণত ক্রয়কৃত পশুর আগে কৃমিনাশক প্রদান করা হয়েছে কি না তা জানার প্রয়োজন মনে করেন না বা পশুতে আদৌ কৃমি আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য কাছের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে যান না। হাসপাতালে গেলে তারা জানতে পারতেন কোন ধরনের কৃমির জন্য কী চিকিৎসা দিতে হবে। তবে বেশির ভাগ েেত্র পশুমালিকেরা সাধারণত যে ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন তা হলোÑ Endex bolus, Navadex-vet, Levanid bolus, LT-vet, Renadex bolus, Trox bolus, Fasinex, Ralnex, Endokill bolus, Levavet bolus, Trilev vet, Inj. Nitronex, Inj. Oxynil, Inj. Dovenix ইত্যাদি।

গরু মোটাতাজা হওয়ার জন্য পশুখাদ্যে ছয়টি উপাদানসমৃদ্ধ সুষম খাবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। যদিও বেশির ভাগ পশুমালিক এ বিষয়ের জানেন না। তবে প্রত্যেকেই কম-বেশি ভালো খাবার সরবরাহ করার চেষ্টা করেন। খাদ্য উপাদানের দিকে তাদের নজর না থাকলেও পশুকে বেশি বেশি খাওয়াতে হবে, এটা তারা জানেন। অতি দরিদ্র ও গরিব পশুমালিকেরা ক্রয়কৃত গরুকে শুধু ঘাস ও খড় খাওয়ান, তাদের পে দানাদার খাদ্য ক্রয় করা সম্ভব হয় না বলে। আবার কিছু কিছু পশুমালিক নিম্নমানের খড় ও চিটাগুড়ের সাথে ইউরিয়া ব্যবহার করে থাকেন।

তবে সমস্যা সৃষ্টি করছেন একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, যারা গরু দ্রুত মোটাতাজাকরণের জন্য স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। স্টেরোয়েড লাইভ সেভিং ড্রাগ হিসেবে পরিচিত। দ্রুত গরুকে মোটাতাজাকরণের জন্য যেসব স্টেরোয়েড ড্রাগস ব্যবহার করা হয় তা হলো : ইনজে. ডেক্সাভেট, ইনজে. হিস্টানল, ইনজে. সিয়ামভেট, ইনজে. নিরাভেট, ইনজে.ডেক্সাকট, ইনজে. ডেকাসন, ইনজে. ওরাডেক্স, ইনজে. প্রিডেক্সানল এস, ইনজে. প্রিডনিভেট, ইনজে. প্রেডনিসলন ইত্যাদি। এসব ইনজেকশন একটি বাড়ন্ত ষাঁড় গরুকে ১০-২০ মিলিলিটার প্রতি সাত দিন পর পর দেয়া হয়। আবার চোরাচালান পথে ডেক্সামেথাজন বা ডেকাসন বা ওরাডেক্সন স্টেরোয়েড জাতীয় সস্তা কতকগুলো ট্যাবলেট আসছে, পশু মালিকেরা প্রতিটি পশুকে এর যেকোনো একটির পাঁচটি বড়ি/ট্যাবলেট প্রতিদিন খাইয়ে থাকেন। এই স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ মানুষের রোগ প্রতিরোধ মতা কমিয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধের প্রয়োগ গোশতের গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়।

গরু মোটাতাজাকরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলোÑ দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ; জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও বেকার সমস্যার সমাধান; বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য চামড়া শিল্পের সমৃদ্ধি; জৈব সার সহজলভ্য করা; পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা; বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গ্যাস আহরণ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটানো; দেশের ৮৮ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কোরবানির পশু সহজলভ্য করা।

পরিশেষে বলা যায়, কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করতে মোটাতাজাকরণ গরু অবশ্যই নির্বাচন করা যাবে তবে, স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে সবাইকে। অবশ্য পশু জবায়ের কমপে ১৫ দিন আগে স্টেরোয়েড ওষুধের ব্যবহার যদি বন্ধ করা যায় তবে সেই সব মোটাতাজাকরণের গোশত মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ততটা তিকর হবে না। তার পরও জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গরু মোটাতাজাকরণে স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করতে পদপে নিতে হবে এখনই। নতুবা গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প শিল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না। সেই সাথে জনস্বাস্থ্য পড়বে বিপর্যয়ের মুখে।



Ref: Nayadangta.