Bangladeshi Space Historian

Author Topic: Bangladeshi Space Historian  (Read 1049 times)

Offline Md. Khairul Bashar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 203
  • Test
    • View Profile
Bangladeshi Space Historian
« on: December 23, 2012, 10:53:39 AM »
‘সৌরজগতেরও বাইরে, মানুষের তৈরি একটি মহাকাশযান আছে! সে মহাকাশযানে আছে একটা রেকর্ড, তাতে ধারণ করা আছে পৃথিবীর বিভিন্ন আওয়াজ। পাখির ডাক, বৃষ্টির শব্দ, একটি ছোট বাচ্চার হাসির শব্দ, বিভিন্ন বিখ্যাত জনের বক্তৃতা, অনেক বিখ্যাত গান, বিভিন্ন ভাষার সম্ভাষণ...আরও অনেক কিছু। কোনো মহাজাগতিক প্রাণীর মুখোমুখি হলেই রেকর্ডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজতে শুরু করবে।’ মজার এই তথ্যটি যিনি দিলেন, তাঁর নাম আসিফ আজম সিদ্দিকী। নামটা যাঁদের কাছে অপরিচিত ঠেকছে, চাইলে অনলাইন বিশ্বকোষ—উইকিপিডিয়ায় খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। সেখানে আসিফ আজম সিদ্দিকীকে নিয়ে একটা ভুক্তি আছে। পুরো নিবন্ধটা পড়া হয়ে গেলে, নির্ঘাত আপনার আবারও নিবন্ধের প্রথম লাইনে ফিরে যেতে ইচ্ছা হবে। যেখানে লেখা আছে, ‘আসিফ আজম সিদ্দিকী একজন বাংলাদেশি আমেরিকান মহাকাশ ইতিহাসবিদ।’ আসিফ সিদ্দিকী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি মূলত মহাকাশ নিয়ে মানুষের আদ্যোপান্ত গবেষণার ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসের ওপর তাঁর বিশেষ দখল। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার সঙ্গে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে।

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকের কথা। নাসার প্রধান ইতিহাসবিদ ড. রজার ডি লনিয়াস একবার একটা কনফারেন্স শেষে বেরিয়ে আসছিলেন। এমন সময় এক তরুণ তাঁর কাছে এলেন। বললেন, ‘আমার নাম আসিফ আজম সিদ্দিকী। আমি আপনাকে বেশ কিছু চিঠি পাঠিয়েছিলাম। জানি না, আমি কতটুকু পারব, কিন্তু আমি নাসার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ রজার ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। চিঠিগুলোর কথা তিনি মনে করতে পারলেন না। তবে ছেলেটিকে তিনি নিরাশও করলেন না। হাসিমুখেই তাঁর আগ্রহকে সাধুবাদ জানালেন।সেই ঘটনার দু-তিন সপ্তাহ পর, ছেলেটির ঠিকানায় একটি চিঠি এল। চিঠির প্রেরক রজার। রজার যা লিখেছেন, তার ভাবার্থ অনেকটা এ রকম, ‘নিশ্চয় বুঝতে পারছ, তুমি একেবারেই তরুণ। আমি জানি না, তুমি আমাদের কোনো কাজে আসবে কি না। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই যোগাযোগ রাখতে পারি। আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী।’

আসিফ সিদ্দিকী প্রায় দু-তিন বছর রজার ডি লনিয়াসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেন। একসময় এল নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল নাসার। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে একটি বই লেখার দায়িত্ব বর্তাল আসিফ সিদ্দিকীর ওপর। এ কাজের জন্য তাঁকে সময় দেওয়া হলো পাঁচ বছর। তরুণ স্বল্পভাষী ছেলেটির ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছিলেন না রজার। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, তুমি পারবে কি না।’ জবাবে আসিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি পারব!’

আসিফ পেরেছিলেন। এরই ফলে ২০০০ সালে নাসার ইতিহাস অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত হলো, চ্যালেঞ্জ টু অ্যাপোলো: দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন অ্যান্ড দ্য স্পেস রেইস (১৯৪৫-১৯৭৪), মহাকাশ গবেষণা নিয়ে আসিফ সিদ্দিকীর লেখা প্রথম বই। যেটি রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা নিয়ে ইংরেজি ছাপার হরফে লেখা সেরা ইতিহাস সংকলনের মর্যাদা পেয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর মতে, মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সেরা পাঁচটি বইয়ের মধ্যে এটি অন্যতম!এরপর আর আসিফ আজম সিদ্দিকীকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন, বিখ্যাত কিছু বই সম্পাদনার কাজও করেছেন। আসিফ সিদ্দিকীর লেখা সর্বশেষ যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে, তার নাম দ্য রকেটস রেড গ্লেয়ার: স্পেস ফ্লাইট অ্যান্ড দ্য সোভিয়েত ইমাজিনেশন (১৮৫৭-১৯৫৭)। বইটি সম্পর্কে আসিফ আজম সিদ্দিকী বলেন, ‘এই বইটিতে আমি মূলত “মানুষ কেন মহাকাশে যেতে চায়”, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছি।’

আসিফ সিদ্দিকী রাশিয়া, আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় গবেষক দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন বিখ্যাত পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। হিস্ট্রি চ্যানেল, বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে তাঁকে হতে হয়েছে ক্যামেরার মুখোমুখি। ছোট-বড় বহু অর্জন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে যাঁর প্রতিটিই দুর্লভ। কোনটি তিনি সবচেয়ে বড় বলে মানেন? আসিফ সিদ্দিকী বললেন, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর একটি অর্জনের কথা, ‘আমেরিকায় ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল (এনআরসি) নামের একটি কাউন্সিল আছে। যারা মূলত প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করে। এ কাউন্সিলের যে মহাকাশ বিভাগ রয়েছে, তার সদস্যসংখ্যা ১৫-১৬। আমি তাঁদের মধ্যে একজন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

আসিফ আজম সিদ্দিকী শিক্ষক পরিবারে বড় হয়েছেন। তাই পড়ালেখাটা হয়েছে নিজ আগ্রহেই। সে ক্ষেত্রে মাস্টার মশাইয়ের ছড়িটির অবদান রাখতে হয়নি। বাবা ড. হাফিজ জি এ সিদ্দিকী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে অবসর নিয়েছেন। মা নাজমা সিদ্দিকী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আসিফ ছিলেন সেন্ট জোসেফ স্কুলের ছাত্র। জানালেন, মহাকাশের অপার রহস্য তাঁকে টানত ছেলেবেলা থেকেই। আসিফের কথায় সায় দিলেন বাবা ড. হাফিজ জি এ সিদ্দিকীও। বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ওর মহাকাশের প্রতি আগ্রহ। ও মহাকাশবিষয়ক বিভিন্ন বই পড়তে চাইত, আমরাও ওকে কিনে দিতাম।’

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে নটর ডেম কলেজ, এরপর তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল নিয়ে পড়তে পাড়ি জমালেন আমেরিকার টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতকের পাট চুকল ১৯৮৯ সালে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেলেন ১৯৯২ সালে। পরের ঘটনা জানা হোক মা নাজমা সিদ্দিকীর কাছে, ‘ওর মহাকাশের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ ছিল। আমি কিন্তু চাইনি ও ইতিহাস নিয়ে কাজ করুক। ওকে বলেছিলাম এমবিএ করতে। একরকম আমার জোরাজুরিতেই, ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ও এমবিএ পড়ল। পড়া শেষে বলল, “মা, তোমাদের আশা পূরণ করেছি, এবার আমাকে আমার আশা পূরণ করতে দাও!’”

মহাকাশ গবেষণার মতো জটিল একটা বিষয়ের ইতিহাস যাঁর নখদর্পণে, এমন একজনকে পেয়ে আমরা ততক্ষণে কৌতূহলের ঝাপি খুলে বসেছি। কত কি জানার আছে তাঁর কাছে! বিনয়ের সঙ্গে কৌতূহলের জবাব দেন কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই শিক্ষক। কথায় কথায় আসিফ সিদ্দিকী বললেন, ‘একটা মজার বিষয় কি জানেন, প্রতিটি মুহূর্তে মহাকাশে মনুষ্য প্রজাতির কেউ না কেউ আছে। এটা শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সাল থেকে। এমন একটা সেকেন্ডও যায়নি, যখন মহাকাশে কোনো মানুষ নেই। এরা বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন পেশার মানুষ। কেউ প্রকৌশলী, কেউ বিজ্ঞানী—সবাই গবেষণায় লিপ্ত। এটা আমার কাছে খুব মজার মনে হয়। যখনই আমি আকাশের দিকে তাকাব, নিশ্চিত জানব, সেখানে কোনো না-কোনো মানুষ আছে!’মহাকাশের এতসব অদ্ভুত মজাদার তথ্য যিনি জানেন, লেখালেখির হাত তো আছেই। বাংলায়, সহজ ভাষায় এ দেশের স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য কি কিছু লেখা যায়? প্রশ্নের সঙ্গে একমত হন আসিফ। বলেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে। সমস্যা হলো, এখন বই লেখার সময় পাই না। তবে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটখাটো প্রবন্ধ লিখতে চাই। আমার মনে হয়, এতে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে।’
এবারে মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা জানতে চাই। আসিফ সিদ্দিকী নড়েচড়ে বসেন। বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তোলে, আমাদের মতো একটা গরিব দেশের মহাকাশ গবেষণার পেছনে অর্থ ব্যয় করা উচিত হবে কি না। যেখানে আমাদের এমন হাজারো সমস্যা, যেসব খাতে খরচ করার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। এই বিতর্ক আমেরিকায়ও আছে। তবে ওরা লং টার্ম দেখতে পায়। ওরা ভাবে না আমরা আগামীকাল কীভাবে চলব—১০-২০ বছর পরের পরিকল্পনাও ওদের থাকে। এটা আমি ওদের কাছে শিখেছি। আমার মনে হয়, খুব স্বল্প পরিমাণে হলেও বাংলাদেশের এর পেছনে খরচ করা উচিত। তা ছাড়া মহাকাশ গবেষণা তো শুধু মঙ্গলে যাওয়া, চাঁদে যাওয়া নয়। এর মাধ্যমে কৃষি, শিল্প, মৎস্যশিল্পের উপকার হতে পারে। এমনকি দুর্যোগ পূর্বাভাসেরও কাজে লাগবে। বাংলাদেশ সরকার যদি কখনো এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়, আমি কাজ করতে আগ্রহী।’

এ দেশের তরুণদের নিয়ে ভীষণ আশাবাদী আসিফ। বললেন, ‘মহাকাশ গবেষণায় প্রথমেই আমাদের যেটা প্রয়োজন, তা হলো বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ; যা আমাদের আছে। এ জিনিস টাকা দিয়েও কিনতে পাওয়া যায় না। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, সেখানেও অনেক বাংলাদেশি আছে। তারা খুবই প্রতিভাবান।’ আমরা জানি, বাংলাদেশের স্কুল-কলেজপড়ুয়া বহু ছেলেমেয়ে তন্ময় হয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়ছে, কিংবা স্টিভেন স্পিলবার্গের চলচ্চিত্রে বুঁদ হয়ে আছে। হয়তো ভেতরে ভেতরে কেউ মহাকাশ গবেষক হতে চায়, কেউ নাসায় কাজ করতে চায়, কারও বা মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন! তাদের জন্য আসিফ আজম সিদ্দিকীর বার্তা: ‘ইটস নট ইম্পসিবল!’



সূত্রঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-15/news/313312