সম্প্রতি বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকান্ড প্রতিটি বিবেকবান মানুষের অন্তরে দাগ কেটে গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানী শহরে অসংখ্য চোখ ও ক্যামেরার সামনে একজন বনী আদমকে কুপিয়ে কুপিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত করার এ ঘটনাকে হত্যাকান্ড না বলে মানব হত্যার প্রদর্শনী বললেই বেশি মানানসই হবে। এ নৃশংস পৈশাচিক কান্ড ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াত তথা অন্ধকার যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বর্বর কান্ডটি ঘটার পর ইচ্ছে জেগেছিল এ বিষয়ে মাসিক আলকআউসারে বা কোনো দৈনিক পত্রিকায় কিছু লেখার। যাতে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি বিধান ও নির্দেশনাও উল্লেখ থাকবে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সে ইচ্ছায় ভাটা পড়ল যখন দেখলাম এ হত্যাকান্ডটিও আরও ১০টি হত্যাকান্ডের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা হত্যাকারীদেরকে একটি বিশেষ দলের লোক চিহ্নিত করলেও তাদের মুরববী তথা সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা তা সরাসরি অস্বীকার করে যাচ্ছেন। যদিও গণমাধ্যম এবার অনেক বেশি সরগরম রয়েছে (হয়তবা নিহত যুবকের নাম বিশ্বজিৎ হওয়ার কারণেও) তথাপিও বিশ্বজিতের পরিবার ও শান্তিকামী দেশবাসী একটি সুবিচার পাবে এমন কোনো আলামত এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে লেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে ইসলামের ফৌজদারী দন্ডবিধি লিখতে হলে বর্তমানে তা হয়ত কিছুটা বড় করে লেখা দরকার। কিছু সংখ্যক অবোধ ব্যক্তি ও ইসলামের শত্রুদের বিরূপ প্রচারণায় এ বিষয়টি অনেক মুসলমানের কাছেই অস্পষ্ট। নতুন করে এর নমুনা দেখা গেল কিছুদিন আগে সরকার প্রধানের মুখ থেকে (ইচ্ছায় অনিচ্ছায়) প্রয়োজনে শরীয়তের হদ ও কিসাস এর বিধান বাস্তবায়নের ঘোষণা আসার পর।
তখন চেনা মুখগুলো যেন এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠল। তাদের চিন্তা-চেতনা এ দেশের স্বার্থ ও মানুষের হাজার বছর থেকে লালিত সভ্যতার সাথে মানানসই কিনা, দেশের অন্তত ১% লোকও তাদেরকে সমর্থন করে কি না সেটা তো বিবেচনা করা দরকার। তাছাড়া মাত্র ৭০ বছরে (১৯২০-১৯৯০) তাদের পূর্বসুরীদের জুলুম-নির্যাতনের বিপ্লব ধুলিস্যাত হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো ঐ পন্ডিত ও নেতা ব্যক্তিরা তাদের কথা বলার সময় স্মরণে রাখেন বলে একেবারেই মনে হয় না। তা না হলে কোনো আইন বা বিচার হওয়ার আগেই শুধু হদ-কিসারের নাম শুনেই এ নিয়ে এত হৈ চৈ তারা কেন শুরু করে দিয়েছিল। ভাগ্যিস তিনি তাদের দলের নেত্রী। যদি তিনি হতেন অপর দলের নেত্রী তবে এলোকগুলো তাদের স্ব জাতি এক শ্রেণীর মিডিয়াকে সাথে নিয়ে কোথাকার পানি কোথায় নিয়ে ফেলত তা তো বলাই বাহুল্য।
যা হোক ভেবে চিন্তে আমি আলকাউসারের এ সংখ্যার জন্য অন্য একটি বিষয়ে লেখা শুরু করে দিয়েছিলাম। এরই মধ্যে ২০ ডিসেম্বর একটি দৈনিকের সম্পাদকীয় পাতায় চোখ বুলাতেই নজর পড়ল একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক এবং সুপরিচিত লেখক একজন ব্যক্তিত্বের কলাম। লেখার শিরোনাম ‘বিশ্বজিতের লালশার্ট’। অভ্যাসগতভাবে লেখার প্রথম দু’এক লাইন পড়ার পর উপসংহার দেখার জন্য শেষাংশে চোখ রাখলাম। তখনি অবাক না হয়ে পারলাম না। তিনি লেখাটির সমাপ্তি টেনেছেন পবিত্র কুরআন শরীফের বিখ্যাত একটি আয়াতের দু’টো অংশ লিখে। সূরা মায়িদার ৩২নং আয়াতের যে অংশ দু’ টো তিনি উদ্ধৃত করেছেন তা হচ্ছে (তরজমা) ‘‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল এবং যে কারো জীবন রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল।’’ এরপর পুরো লেখাটি পড়লাম। আমার মনে হয়, যে কোনো নিরপেক্ষ লোক তার কথাগুলোর সাথে একমত হবেন। সংসদসদস্যের অধিবেশনে না যাওয়া, দর্বৃত্তদের প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডে উৎসাহিত হওয়ার কারণ এবং দর্শক, সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানগণ কর্তৃক তাদেরকে বাধা না দেওয়ার বিষয়গুলো তিনি যথাযথভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। যাহোক তাঁর লেখায় কুরআন মাজীদের আয়াতের উদ্ধৃতি দেখে আমি শুধু অবাকই হইনি, কিছুটা উৎসাহিতও হয়েছি। এর কয়েক দিন আগে বিজয় দিবসে লিখিত একটি প্রবন্ধে আমাদের দেশের আরেকজন মহৎ ব্যক্তিত্ব ও সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর লেখায় কুরআনুল কারীমের জিহাদ সংক্রান্ত একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। এসব বড় ব্যক্তিদেরকে যখন আমরা কুরআনে মগ্ন হতে দেখি তখন মনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়। কারণ যে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে মতামত, সুপারিশ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে থাকেন সেগুলোর প্রকৃত সমাধান কুরআনুল কারীম ও তার ভাষ্য হাদীসসমূহে ভালভাবেই বিদ্যমান রয়েছে। এখনো যদি কোনো জাতি সেগুলোকে আকড়ে ধরে তবে তার সফলতা ও কল্যাণ অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, বিচারক, সাংবাদিক ও কলামিস্টগণ যতবেশি কুরআনমুখি হবেন তত দ্রুতই জাতীয় কল্যাণ তরান্বিত হবে।
এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ হতে চললো (০৯/১২/১২)। কিন্তু এখনো হত্যাকারীদের কোনো শাস্তির লক্ষণ নেই। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বর্তমানে ‘ধর্মনিরেপেক্ষ’ও বটে। এখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান। ইদানীং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াতের সাথে গীতাও পাঠ করা হয়। এবার কল্পনা করুন যদি এটি হতো একটি ইসলামী রাষ্ট্র, এতে যদি শরীয়া আইন থাকতো তবে বিশ্বজিৎ অন্তর্ভুক্ত হতেন সংখ্যালঘুদের তালিকায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে হত্যাকারীদের ফাসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়ত এত বিলম্ব হত না। ইসলামের সংখ্যালঘু সংক্রান্ত আইনগুলো যাদের জানা আছে তারা বিষয়টি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। এখানে একজন সংখ্যালঘুর জান, মাল ও ইজ্জতের মূল্য একজন মুসলমান নাগরিকের সমান। শরীয়তের ভাষায়-
دمائهم كدمائنا وأموالهم كأموالنا
(অর্থ) তাদের (ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমগণ) রক্ত আমাদের রক্তের মত এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মত মর্যাদাদাশীল।
সুতরাং দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা থাকলে বিশ্বজিতের পরিবারকে তাদের প্রিয়জনের হত্যাকারীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলন্ত দেখতে এতদিন অপেক্ষা করতে হত না। কারণ প্রকাশ্য দিবালোকে অসংখ্য মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে কোনোই অসুবিধা হত না। আর তারা স্বীকারোক্তি না দিলে সাক্ষীরও অভাব হত না। এভাবেই কার্যকর হত অপরাধীদের চরম পরিণতির রায়।
এবার নজর দেওয়া যাক এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি বিধানের দিকে। এ বিষয়টি মূলত: ‘আততাশরীউল জিনাইল ইসলামী’ তথা ইসলামের ফৌজদারী দন্ডবিধির আওতাভুক্ত বিষয়। আগেই বলেছি যে, কিছু অবোধ এবং কতক দুষ্ট লোকেরা এ বিষয়ে বিস্তর প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। তাই দরকার ছিল এ অধ্যায়টি বিস্তারিত আলোচনা করার। কিন্তু পত্রিকার সামান্য পরিসরে তা তো সম্ভব হয়ে ওঠার নয়। তাই আমরা শুধু আলোচিত ঘটনার ক্ষেত্রে ইসলামী আইনে শাস্তির বিধানটি উল্লেখ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব।
বিশ্বজিৎকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এটি ইসলামী আইনে الحرابة (আলহিরাবাহ) বা قطع الطريق (কতউত তরীক) এর অন্তর্ভুক্ত। ‘আলহিরাবাহ’ বা ‘কতউত তরীক’ অর্থ হলো প্রকাশ্যে কাউকে হত্যা করা ও তার সম্পদ লুণ্ঠন করা অথবা এর যেকোনোটি সংঘটিত করা। কিংবা সশস্ত্র সন্ত্রাসের মাধ্যমে এসব কর্মের চেষ্টা করা যদিও জান-মালের ক্ষতি করতে সফল
না হোক।
সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রকাশ্যে সংঘটিত যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ‘আলহিরাবাহ’ এর অন্তর্ভূক্ত। কুরআনুল কারীমের যে অংশটির বরাত উপরোল্লেখিত অধ্যাপক সাহেব দিয়েছেন ঠিক তার পরেই ‘আলহিরাবাহ’ অপরাধ ও এর শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন : (অর্থ) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শুলিতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা এলাকাছাড়া করা হবে। এটি হল তাদের জন্য ইহকালের লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা আলমায়িদাহ, আয়াত : ৩৩)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের জন্য ৪টি শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এবং অপরাধের মাত্রা ও ধরন অনুযায়ী উক্ত ৪টি শাস্তি থেকে যার জন্য যেটা প্রযোজ্য তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব বিচারকের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। যেমন কোনো সন্ত্রাসী কাউকে প্রকাশ্যে হত্যা করে যদি তার সম্পদও ছিনিয়ে নেয়, তবে তাকে হত্যাও করা হবে আবার শুলেও চড়ানো হবে। আবার কেউ যদি হত্যা না করে শুধু সম্পদ ছিনিয়ে নেয় সেক্ষেত্রে তার একদিকের হাত এবং অন্যদদেকের পা কেটে দেওয়া হবে। এভাবে অপরাধ ভেদে নির্ধারিত হবে ৪ শাস্তির কোনো ১টি।
কতল ও আলহিরাবাহ এক নয়
ইসলামের ফৌজদারী দন্ডবিধিতে হত্যা ও সন্ত্রাস তথা কতল ও আলহিরাবাহকে দু’টি পৃথক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং প্রকাশ্যে কাউকে হত্যা করা বা প্রকাশ্যে কারো সম্পদ লুণ্ঠন সাধারণ হত্যা ও চুরি থেকে অনেক বেশি জঘন্য অপরাধ হিসেবে ধর্তব্য হয়েছে। এ কারণেই ‘আলহিরাবাহ’-এর শাস্তি অন্য যেকোনো শাস্তির চেয়ে কঠোর।
আলহিরাবাহ ক্ষমাযোগ্য নয়
শুধু তাই নয় বরং ইসলামী দন্ডবিধিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের (আলহিরাবাহ) কারণে প্রাপ্য শাস্তি ক্ষমাযোগ্য বলে বিবেচিত নয়। সাধারণ হত্যার ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ যদি হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয় (অর্থের বিনিময়ে বা অর্থ ছাড়াই) তবে হত্যকারীরর মৃত্যুদন্ড হবে না, কিন্তু এই হত্যা যদি ‘আলহিরাবাহ’-এর আওতাভুক্ত হয়, তখন ঐ ব্যক্তির শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা ক্ষমা করে দিলেও সে নিস্তার পাবে না; বরং ঐ দন্ড তাকে ভোগ করতেই হবে।
জান-মালের ক্ষতি না করলেও শাস্তি
কুরআনুল কারীমে ‘আলহিরাবাহ’-এর সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা হয়েছে এভাবে-
ينفوا من الارض
অর্থাৎ তাদেরকে এলাকাছাড়া করা হবে। এটি ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন কোনো দৃষ্কৃতিকারী কারো জান-মালের ক্ষতি করেনি কিন্তু সে জনগণের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে অপরাধীকে নিজ এলাকা থেকে অনেক দূরের কোনো কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হবে। অতপর তার আচার-আচরণ ও চারিত্রিক অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের সমাজে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও অন্যান্যদেরকে যেভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, চাঁদা দাবি করা হচ্ছে যদি তাদের ক্ষেত্রে এ শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ হত তাহলে মানুষ হয়ত শান্তিতে ঘুমাতে পারত। কিন্তু আমরা দেখছি কী? একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে জেল থেকে বের করে দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনের দোহাই দিচ্ছেন। এখন যদি তাঁর কথা সঠিক মনে করি তাহলে সে আইনের জন্য কান্না করা ছাড়া আর কি-ইবা উপায় আছে!
তিনটি উদ্দেশ্যে শাস্তি
কুরআন শরীফ ও সুন্নতে নববী অধ্যয়ন করলে বুঝে আসে যে, শরীয়ত ফৌজদারী দন্ডবিধিগুলোকে কঠোর করেছে মূলতঃ তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা (১) জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার
জন্য (২) শাসন ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা
(৩) নাগরিকদেরকে সচ্চরিত্রবান ও বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করা।
একবার ভেবে দেখুন, কোনো রাষ্ট্র বা অঞ্চলে যদি মানুষের বসবাস ও চলাচল নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়, যদি সে এলাকার শাসন ব্যবস্থা নিরপেক্ষ ও সুদৃঢ় হয় এবং যদি নাগরিকগণ বেড়ে উঠে সচ্চরিত্রবান হয়ে তবে এ রাষ্ট্র এবং সে জাতির উন্নতি কেউ কি ঠেকিয়ে রাখতে পারবে?
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহ সে জন্যেই কুরআন মাজীদে ‘আলহিরাবাহ’ তথা সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলার কঠোর শাস্তি বিধান ঘোষণার পূর্বে মানব জাতিকে এর তাৎপর্য বুঝাতে গিয়ে বলেছেন : (তরজমা) ‘‘যে ব্যক্তি কোনো একটি মানব প্রাণকে কোনো হত্যার বিনিময় বা সন্ত্রাসের অপরাধ ছাড়া হত্যা করল সে যেন পুরো মানব জাতিকেই হত্যা করে দিল। পক্ষান্তরে যে কোনো একজন মানবের প্রাণ রক্ষা করল সে যেন পুরো মানব সম্প্রদায়কেই বাঁাচিয়ে রাখল।’’ (সূরা আলমায়িাদা : ৩২)
কুরআনে এক্ষেত্রে نفسا (নাফসান) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ, যে কোনো প্রাণ। এখানে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-নিরক্ষর, ক্ষমতাবান-সাধারণ লোক এমনকি মুসলিম ও অমুসলিমেরও পার্থক্য করা হয়নি। সকল মানুষ আল্লাহর বান্দা। তাদের সকলের শান্তিপূর্ণভাবে আল্লাহর দুনিয়ায় বসবাসের অধিকার রয়েছে। এই দৃষ্টিতে সকল মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের মূল্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে সমান। দুনিয়ার মানুষের দৃষ্টিতে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের হত্যার শাস্তিও দেশের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন নাগরিকের হত্যার শাস্তির সমপর্যায়ের, তাতে এতটুকুও অবহেলা করা যাবে না বা কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ এমনটি করার অর্থই হবে সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ভীতি ও অসহায়ত্ব সৃষ্টি করা। যা একসময় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করে। সমাজ ও জনপদে বিস্তার করে অনিরাপত্তার পরিস্থিতি এবং শাসকদের উপর সৃষ্টি হয় চরম অবিশ্বাস।
সূরা আল বাকারায় (আয়াত ১৭৯) আল্লাহ তাআলা হত্যকারীদের মৃত্যুদন্ডকে ‘জীবন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন-
ولكم فى القصاص حياة يا اولى الالباب، لعلكم تتقون
(তরজমা) হে জ্ঞানী! ব্যক্তিরা তোমাদের জন্য কিসাস (হত্যার মোকাবিলায় হত্যা) এ রয়েছে জীবন। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার (সকল প্রকারের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পার)।’’
যেহেতু সাধারণ স্তরের বোধ-বুদ্ধির মানুষের জন্য হত্যাকে ‘জীবন’ হিসেবে অনুধাবন করতে কষ্ট হবে তাই আল্লাহ এখানে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদেরকে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু অশ্চর্যের ব্যাপার হল এখনকার এক শ্রেণীর &