ত্বক-কিডনি ও সন্তান বাঁচাতে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলিদের থেকে দূরে থাকুন
১৮ এপ্রিল,২০১৩
ঢাকা (আরটিএনএন): ভারত-বাংলাদেশের বাইরে ‘ত্বক আরো ফর্সা ও উজ্জ্বল’ করার নানা ক্রিম-লোশন ইত্যাদির প্রতি এতো বেশি মোহ আর দেখা যায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। ২০১২’র জুনের Mercury in skin lightening products (English) নামের ওই প্রতিবেদনে এমন ‘প্রসাধনী’ র ভয়াবহ ক্ষতির দিকের কথা তুলে ধরা হয়।
বলা হয়, ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল করার (স্কিন লাইটেনিং) এসব ক্রিমে ক্ষতিকর সব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এই কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ নানা দেশে এগুলো নিষিদ্ধ। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের এতে রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে।
ত্বক কিভাবে ‘উজ্জ্বল’ করা হয়? মানুষের শরীরে থাকা প্রাকৃতিক রঞ্জক ‘মেলানিন’র কমবেশির ফলে ত্বকের রংয়ের তফাত হয়। আর এসব ক্রিমের পারদ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ ত্বকে প্রয়োগ করলে, এই মেলানিনের ওপর তা প্রভাব বিস্তার করে, অনেক ক্ষেত্রে মেলানিনকে অপেক্ষাকৃত বেশি জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে ত্বকে রঙহীন সাদাটে ভাব নিয়ে আসে।
অন্যদিকে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায় এই কথিত ‘ফরসাকরণ’ প্রক্রিয়ার মধ্যেই। এতে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয় বলে বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এসব ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার ছাড়া ত্বকের কথিত ফরসাকরণ সম্ভব নয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো পারদ। স্কিন লাইটেনিং নানা পণ্যে এই পারদ ব্যবহার করা হয়। যেমন গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের বিসিএসআইআর গবেষণাগারের পরীক্ষার একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, এখানে চালু ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’র পঞ্চাশ গ্রাম ক্রিমে রয়েছে ০.০০৯৭ পিপিএম পারদ। পহেলা থেকে চৌদ্দ জানুয়ারির মধ্যে এ বিশ্লেষণটি করা হয়েছে।
যদিও ক্রিমের প্যাকেটের গায়ে লেখা রয়েছে ‘এই ক্রিমে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপাদান বা ব্লিচ নেই।’ কিন্তু পরীক্ষা বলছে ভিন্ন কথা।
১৯৭৫ সাল থেকে ফেয়ার এন্ড লাভলি নামের ত্বক ফরসা করার ক্রিমের ব্যবসা করে আসছে ইউনিলিভার কোম্পানি। তাদের এই ত্বক ফরসার ‘প্রযুক্তি’কে বিশ্বের এক নম্বর বলেও দাবি করে আসছে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পারদ মানুষের শরীরে বিষের মতো কাজ করে। নারীর জরায়ুতে শিশুর বেড়ে ওঠার এবং জন্ম নেয়ার পর বিশেষ কিছু সমস্যা তৈরি করে এই পারদ। এছাড়া হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কিডনি, ত্বক, স্নায়ু এবং চোখে পারদের বিষক্রিয়া ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ত্বক ফর্সা করার সাবান ও ক্রিমে যে অজৈব পারদ ব্যবহার করা হয়, তাতে এসব সমস্যা তৈরি হয়।
ত্বক ফর্সা করার ক্রিম বা সাবানে যেই পারদ ব্যবহার করা হয়, তা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ত্বকে ছোট ছোট লাল ফোস্কা পড়ে, ত্বককে রঙহীন করে দেয়। ত্বকে ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়। অথচ ইউনিলিভার তার ওয়েবসাইটে জানায়, ফেয়ার এন্ড লাভলি ব্যবহার করে ত্বকের ফোস্কা দূর করা সম্ভব ।
স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়, ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সংক্রমন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এই পরদ মিশ্রিত ক্রিম। এসব ক্রিম ব্যবহারকারীরা দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা, মনোবৈকল্য এবং স্নায়ুবিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
বাস্তব ক্ষতির উদাহরণ দিতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, ত্বক ফর্সা করার ক্রিম ব্যবহারে চৌত্রিশ বছর বয়সী এক চীনা নারীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে এই ক্রিম ব্যবহার বন্ধের পর তার রক্তে পারদের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। তবে আফ্রিকায় এমন ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা ব্যাপক।
সাবান, ক্রিম এবং অন্যান্য প্রসাধনী পণ্যে ব্যবহৃত পারদ কার্যত পানির সাথে মিশে যায়। এতে করে এই ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করে। খাদ্যচক্রের ভেতরে ঢুকে পড়ে। সর্বোচ্চ বিষাক্ত এই মিথাইল পারদ মাছের শরীরেও ঢুকে মাছকে বিষাক্ত করে। গর্ভবতী মহিলার যখন মিথাইল পারদে বিষাক্ত হয়ে যাওয়া মাছ খায়, তখন পারদ তাদের ভ্রুণে চলে যায়। পরবর্তীতে তার গর্ভে যে সন্তানটি জন্ম নেয় সেটি স্নায়ুবিক দুর্বলতাজনিত সমস্যায় ভোগে।