« on: May 07, 2013, 07:50:41 PM »

একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের পোশাক কেমন হওয়া উচিত- আমরা কী পরব? গোল জুব্বা নাকি কোট-টাই-প্যান্ট? এ বিতর্ক অনেক দিনের। আমাদের দেশে আজকাল প্রত্যেক তরিকাপন্থিদের পোশাক ও লেবাস আলাদা।
সাধারণ মুসলমানদের মধ্যেও এ নিয়ে রয়েছে নানা দ্বিধা দ্বন্দ্ব। কিন্তু মূলত ইসলামে পোশাক সম্পর্কে কি নির্দেশনা রয়েছে?
একটি কথা প্রথমেই বুঝে নেওয়া দরকার, তা হলো ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট পোশাককে কারো ওপর চাপিয়ে দেয়নি। বরং পুরুষ ও নারীদের জন্য শালীনতা ও সৌন্দর্যের সমন্বয়ে কিছু নির্দেশনা ও বিধিমালা দেওয়া হয়েছে-যার আলোকে যে কেউ তার পোশাক বেছে নিতে পারে। তবে অবশ্যই তাতে যেন পর্দা ও পোশাকের পূর্ণ অর্থের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।
এ হচ্ছে সাধারণ মুসলমানদের জন্য। কিন্তু প্রকৃত অর্থেই যারা রাসুলকে (সা.) ভালোবেসে চলতে চান, তাদের জন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আপনি বলুন (হে মুহাম্মদ!) তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো। এতে আল্লাহ তোমাদেরও ভালবাসবেন এবং তোমাদের মাফ করে দিবেন।’ আর তাই কোনটি ফরয কোনটি সুন্নাত এসব তর্ক-বিতর্কে না জড়িয়ে আসুন আমরা রাসুল (সা.) এর পোশাক সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনা এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিধিমালাগুলো দেখে নিই।
রাসুল (সা.) কখনো চাদর গায়ে দিতেন এবং লুঙ্গি পরতেন। তাঁর চাদর প্রায় ছয় হাত লম্বা থাকতো। তাঁর ব্যবহৃত পোশাকের মধ্যে আরও ছিল, জামা, জুব্বা, পাগড়ি। তিনি যে কামিজ পড়তেন এর বর্ণনা হচ্ছে- হাতের দিকে কব্জি পর্যন্ত আর লম্বায় টাখনুর উপর পর্যন্ত। তিনি হাঁটুর নিচে আধাআধি পর্যন্ত পোশাক পরার অনুমতিও দিয়েছেন। তবে সর্বোচ্চ সীমায় টাখনু পর্যন্ত লম্বা হলেও তা যেন টাখনুর নিচে না ঝুলে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেছেন।
তিনি কখনো পাগড়ি মাথায় দিতেন এবং পাগড়ির নিচে টুপি পরতেন। তিনি টুপি ছাড়া পাগড়ি এবং পাগড়ি ছাড়া শুধু টুপিও পরতেন। রাসুল (সা.) এর পোশাক ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে শামায়েলে তিরমিযী দেখতে পারেন।
পুরুষদের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব নির্দেশনা দিয়েছে এগুলোর অন্যতম হল- স্বর্ণ কিংবা রেশম সম্বলিত কোনো পোশাক পরা যাবে না। সতর (শরীর) আবৃত হয় না, এমন যে কোনো পোশাক বর্জনীয়। এমন কোনো পোশাক পরা নিষেধ যা শুধুমাত্র কাফের ও বিধর্মীদের জন্য নির্ধারিত কিংবা তাদের কোনো বিশেষ পোশাক হিসেবে পরিচিত। নারীদের পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে এমন পোশাকও ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাসুল (সা.) ওইসব পুরুষদের অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। (বুখারী-৫৫৪৬)
কাপড় পরার সময় বিসমিল্লাহ বলে ডান দিকের অংশ আগে গায়ে পরিধান করতে হবে। আর খোলার সময় বাম দিকের অংশ আগে খুলতে হবে। যখনই কোনো নতুন পোশাক পরবে তখন আল্লাহ পাকের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে।
নিজের পরিধেয় কাপড়গুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। আর ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। পুরুষদের সর্বাবস্থায় নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে।
সাদা রঙের পোশাক পরা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের পোশাক পরিধান করো। কারণ তোমাদের অন্যান্য রঙের কাপড় ও বস্ত্র থেকে এটি উত্তম। এ সাদা কাপড়েই তোমরা মৃতদের কাফন দিও। (তিরমিযী)
কেউ কেউ সবুজ রঙের পোশাক পরাকেও মুস্তাহাব বলেছেন। কারণ পবিত্র কুরআনে জান্নাতী লোকদের পোশাকের বর্ণনায় আল্লাহ এ রঙের কথা উল্লেখ করেছেন। (সুরা: ইনসান, আয়াত-২১)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সা.) এর প্রিয় রং হিসেবে সবুজ রঙের কথা এসেছে।
আর গাঢ় হলুদ রঙের পোশাক পরতে তিনি নিষেধ করেছেন। মুসলিম শরীফের এক হাদীসে তিনি এক সাহাবীর গায়ে এ রঙের কাপড় দেখে বলেছিলেন, এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা এ রং পরবে না।
রাসুল (সা.) লিনেন, সুতি এবং পশম থেকে উৎপন্ন সব ধরনের পোশাক পরেছেন।
গায়ের যে কোনো পোশাক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা হারাম। রাসুল (সা.) ওই অংশকে জাহান্নামের বলে অভিহিত করেছেন। (বুখারী-৫৪৫০)
মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তাদের (যারা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরে) সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে ফিরেও তাকাবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণা।
মানুষকে দেখানোর জন্য এবং নিজের বড়ত্ব ও ভাব দেখিয়ে ‘বাহবা’ পাওয়ার জন্য যে কোনো পোশাক পরিধান করা হারাম। আবু দাঊদ শরীফে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যে দুনিয়াতে বাহাদুরির পোশাক পরবে আল্লাহ পাক তাকে কেয়ামতের দিন অপমানের পোশাক পরাবেন।

Logged
“Allahumma inni as'aluka 'Ilman naafi'an, wa rizqan tayyiban, wa 'amalan mutaqabbalan”
O Allah! I ask You for knowledge that is of benefit, a good provision and deeds that will be accepted. [Ibne Majah & Others]
.............................
Taslim Arefin
Assistant Professor
Dept. of ETE, FE
DIU