প্যাকেটজাত খাবার শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
12 May, 2013
পাবনার প্রাইমারি স্কুলশিক্ষিকা শিরীন সুলতানার একমাত্র ছেলে আসিফ। ছেলের নাওয়া-খাওয়ার প্রতি যতটা না যত্নবান তার চেয়েও বেশি খেয়াল রাখেন স্বাস্থ্যের দিকে। সামান্য কিছুতেই তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু গত তিন দিন ধরে আসিফের পেট ব্যথা ও থেকে থেকে বমি।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারলেন তার ফুড পয়জনিং হয়েছে। কি এবং কেমন খাবার থেকে তা হলো ডাক্তার যদিও তা সঠিক করে বলেননি। তবে আসিফের কথা অনুযায়ী বোঝা গেল, যে গত বেশ কয়েকদিন ধরে স্কুলের সামনের দোকান থেকে প্যাকেটকৃত ডালভাজা, বাদাম ভাজা এবং আচার কিনে খেয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আসিফ বয়স ৮। প্যাকেটকৃত খাদ্য দ্রব্যের প্রতি তার বেশ আগ্রহ কিন্তু এর কুফল সম্পর্কে ধারণা নেই। সন্তানের এ অবস্থাতে পিতামাতা বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন- কি করে এসব খাদ্য দ্রব্য বাচ্চাদের নাগাল থেকে দূরে রাখা যায়।
আসিফের মতে অসুস্থতার ঘটনা শুধু পাবনাতেই নয়, সারাদেশের প্রতিটি শহর এবং গ্রামের শিশুরা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে বাজারে তৈরি খাবারে প্রতি এবং তা থেকে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন জটিল রোগ।
কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এসব খাবারে তাদেরই অসুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি। প্রত্যেক স্কুলের সামনে বসা ফেরিওয়ালা কিংবা দোকান থেকে প্রতিদিন একাধিকবার চকলেট, আইসক্রিম, চাটনি ও বোতলজাত জুস কিনে খায় ওরা। বিশ্বের অনেক দেশে বাচ্চাদের স্কুলের সামনে চটকদার খাবার বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে এ নিয়ে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তাই এসব খাদ্য-পণ্য দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এসব খাবারের নামে মেশানো হয় রাসায়নিক রঙ এবং সুগন্ধি, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে শিশুদের এসবের প্রতি আকর্ষণ বেশি। টেলিভিশন ও বিভিন্ন চ্যানেলের চটকদার বিজ্ঞাপনে শিশুরাই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। মহাখালীস্থ আইসিডিডিআরবি’র ল্যাবরেটারিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জুসে ৯৮.৩০ ভাগ ফলের রস থাকে না। এতে রয়েছে বিষাক্ত রঙ, যা পানে কিডনি, পেটের পীড়া এমনকি ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতি রোগ আক্রান্ত হতে পারে।
চকোলেট, চুয়িংগাম, চাটনি, জিলাপি ও কনফেকশনারির তৈরি খাবারের তালিকায় নুডলনস পাউরুটি ও বিস্কুট অন্যতম। এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি হয় অস্বাস্থ্য পরিবেশে কিন্তু এসব খাদ্য সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বস্ত্রকলের ডাই ও একধরনের রঙ। এছাড়াও এসব খাদ্যে মিশ্রণ করা হয় হাইড্রোজ-এসিড সোডিয়াম, স্যাকারিন পারফিউমারি জাতীয় রাসায়নিক। তাছাড়া মিশ্রনটি দীঘদিন রেখে দিলে আরো মারাত্মক বিষ সৃষ্টি হতে পারে।
এ ব্যাপারে ঢাকা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ডাক্তার জাহিদুজ্জামান বলেন- শিশুদের প্রিয় মিষ্টি, ঘিয়ে ভাজা সেমাই ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত ডাই ও কেমিকেল যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রঙ ও সুগন্ধির জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনটিই দেহের জন্য উপযোগী নয়। জিংক অক্সাইড ও হাইড্রোজের মতো রাসায়নিকের মাত্রা কম হলেও এতে শিশুদের কিডনি, ক্যান্সার লিভার, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ জটিল রোগ হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমি ও ক্ষুধামন্দাসহ নানান রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
শিশুর মানসিক ও শারিরীক বিকাশ পুষ্টির সাথে জড়িত। এজন্য তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সর্তক থাকা বাঞ্চনীয়। কেননা, শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার। তাই একটি বলিষ্ঠ জাতি গঠনের লক্ষ্যে শিশুর যত্নে আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে ।
চাল্স ডিকেন্স- বলেছেন, ‘পৃথিবীতে প্রতিটি নবজাতকের অবয়ব পূর্ববর্তী শিশুর জন্মের চেয়ে আলাদা এবং সুন্দর।’
তাই পরবর্তী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় বর্জন করতে হবে বাজারের খাবার, শিশুদের বোঝাতে হবে এসব খাবার আসলে অখাদ্য। সূত্র: বাসস