গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ই-কমার্স মেলার একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য স্বয়ংμিয় অর্থ লেনদেনের মাধ্যম বা পেমেন্ট গেটওয়ের উন্মেষ। পেমেন্ট গেটওয়ের বাজারে বিশ্বজুড়ে যে কোম্পানির আধিপত্য তার নাম প্যাপাল। আমাদের দেশে এখনও প্যাপাল চালু না হলেও শোনা যাচ্ছে চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা প্যাপালের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। এবার জানা যাক, এই পেমেন্ট গেটওয়ে জায়ান্টের শুরুর কথা। ঘটনার শুরুটা ১৯৯৮ সালের আগস্টে, যখন স্ট্যানফোর্ডে অতিথি বক্তা হিসেবে পিটার থিয়েল বিশ্বব্যাপী উন্মুক্ত বাজার তৈরির ওপর বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠান শেষে ম্যাক্স লেভচিন পিটার থিয়েলের সাথে দেখা করেন। এরই সূত্র ধরে কয়েক সপ্তাহ পর এরা দু’জনে ফিল্ডলিঙ্ক নামে একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেন, যার মূল কাজ ছিল তৎকালীন বহুল প্রচলিত ‘প্যাম পাইলট’-এ অন্যান্য পিডিএ ডিভাইসে সাঙ্কেতিক
ভাষায় তথ্য সংরক্ষণ করা। এর ফলে পিডিএ ডিভাইসগুলো ডিজিটাল ওয়ালেটে রূপান্তরিত হয়। এই পদ্ধতিতে অর্থ চুরির ভয় না থাকায় জনপ্রিয়তা পেতে সময় লাগেনি। পিটার ও ম্যাক্স একই বছরের ডিসেম্বরে পিডিএ ডিভাইসগুলোর মাঝে অর্থ লেনদেনের জন্য কনফিডেন্স ও ইনফিনিটি শব্দ দুটিকে এক করে ‘ ক ন ি ফ ি ন ি ট ’ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কনফিনিটির একজন প্রকৌশলী ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে ‘প্যাপাল’ নামে ই-মেইলের মাধ্যমে অর্থ দেয়া- নেয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। আজও প্যাপালের সেই লেনদেন ব্যবস্থা চালু আছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার জন্য সে সময় প্যাপাল বেশ কিছু সুবিধা চালু করেছিল। যেমন প্যাপালের জন্য নিবন্ধন করলেই ১০ মার্কিন ডলার ফ্রি দেয়া হতো। এছাড়া মানি মার্কেট ফান্ড ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যেখানে প্যাপালের ব্যবহারকারীরা তাদের উদ্বৃত্ত অর্থের জন্য লভ্যাংশ পেতেন। প্যাপাল প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৯৯ সালের মে মাসে ই-বে নামে অনলাইন নিলামকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সব লেনদেনের জন্য ‘বিলপয়েন্ট’ নামে একটি অনলাইন অর্থ লেনদেনের ওয়েবসাইট কিনে নেয়। কিন্তু প্যাপালে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে এবং বেশিরভাগ ই-বে লেনদেনে প্যাপালের μমবর্ধমান ব্যবহার দেখা যায়। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেখানে প্যাপাল প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লাখ নিলামের লেনদেন করত, সেখানে বিলপয়েন্টে সে সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ হাজার। এখানে বলে রাখা ভালো, এতদিন পর্যন্ত প্যাপাল কোনো স্বতন্ত্র কোম্পানি ছিল না, কনফিনিটি ছিল মূল কোম্পানি এবং প্যাপাল ছিল সেই কোম্পানির একটা সেবা। ২০০০ সালের মার্চে এক্স ডটকম নামে একটি অনলাইন আর্থিক সুবিধাদানকারী কোম্পানির সাথে কনফিনিটি এক হয়ে মূল কোম্পানি ‘এক্স ডটকম’ নাম ধারণ করে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। একই সাথে তাল রেখে প্যাপাল ব্যবহারকারীও বাড়তে
থাকে। ২০০০ সালের আগস্টে যেখানে প্যাপালের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ, সেখানে কনফিনিটির মূল সেবা পিডিএ ডিভাইসগুলোর মাঝে আর্থিক লেনদেনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। কনফিনিটির সেই সেবা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ২০০১ সালের জুনে এক্স ডটকম তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে প্যাপাল রাখে। পরে ই-বে ২০০২ সালের অক্টোবরে প্যাপাল কিনে নেয়। তারপর থেকে প্যাপাল ই-বের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।