মালিকপক্ষের সামান্য অবহেলা বা গাফিলতির কারণে অনেক পরিবার হয় সর্বহারা, মা হারায় তার প্রিয় সন্তানকে, স্ত্রী হারায় তার স্বামীকে, সন্তান হারায় তার প্রিয় বাবাকে।
যেমন সম্প্রতি পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত ট্রাজেডি সাভারে ধসে পড়া গার্মেন্টস কারখানাটি শুরু হয়েছিল আবাসিক এলাকায়, যা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
২০০৬ সালে প্রণীত বাংলাদেশ শ্রম আইনে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য বেশ কিছু বিধান করা হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে
ধুলাবালি ও ধোঁয়াঃ শ্রম আইনের ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলার কারণে যদি ধুলাবালি বা ধোঁয়া বা অন্য কোনো দূষিত বস্তু নির্গত হয়, যাতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা থাকে তাহলে কোনো কর্মকক্ষে যাতে এটা জমতে না পারে এবং শ্রমিকের প্রশ্বাসের সঙ্গে জমতে না পারে তার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যক প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট বর্জ্যপদার্থ অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে শ্রমিকরা যেখানে কাজ করেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ভবন ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তাঃ শ্রম অইনের ৬১ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কোনো ভবন বা ভবনের কোনো অংশ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হলে উহা মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে।
অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে সতর্কতাঃ শ্রম আইনের ৬২ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রত্যেক তলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি সিঁড়ি বহির্গমনের উপায় এবং অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।
বহির্গমনের পথ তালাবদ্ধ বা আটকে রাখা যাবে না। অগ্নিকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত বহির্গমনের পথ স্পষ্টভাবে লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোনো সহজভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের সময় হুশিয়ার করার জন্য স্পষ্টভাবে হুশিয়ারি সংকেতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কক্ষে কর্মরত শ্রমিকদের অগ্নিকাণ্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমনের পথে পৌঁছার সহায়ক একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পঞ্চাশ বা ততোধিক শ্রমিক সংবলিত কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে বছরে একবার অগ্নিনির্বাপক মহড়ার আয়োজন করতে হবে।
মৃত্যুজনিত সুবিধাঃ মৃত্যুজনিত সুবিধা সম্পর্কে শ্রম আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো শ্রমিক যদি মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত তিন বছরের অধিককাল চাকরিরত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে মালিক মৃত শ্রমিকের কোনো মনোনীত ব্যক্তি বা মনোনীত ব্যক্তির অবর্তমানে তার কোন পোষ্যকে তার প্রত্যেক পূর্ণ বছর বা ৬ মাসের অধিক সময় চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের মজুরি অথবা গ্র্যাচুইটি যা অধিক হয় প্রদান করবেন এবং মৃত শ্রমিক চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলে যে সুবিধা প্রাপ্ত হতেন তার অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
ক্ষতিপূরণ প্রদানঃ শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে শ্রম আইনের ১৫০ ধারায় বলা হয়েছে যে, চাকরিকালে দূর্ঘটনাকালে শ্রমিক জখমপ্রাপ্ত হলে মালিক তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।
মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন না যদি :
১. জখমের ফলে ৩ দিনের অধিক সময় শ্রমিক আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারান। জখমের ফলে মারা যাননি এরূপ কোন শ্রমিকের দূর্ঘটনায় জখমপ্রাপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত কারণ থাকে। যেমন
ক. দুর্ঘটনার সময় শ্রমিক মদ্যপান বা মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে প্রভাবাধীন থাকা।
খ. ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিক তার নিরাপত্তার বিধান সংবলিত শ্রম আইন অমান্য করলে।
৩. শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আঘাত নিরোধক নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা অন্যকোন কৌশল অপসারণ করা বা উপেক্ষা করা।
মালগুদাম ও কারখানার লাইসেন্সঃ কোনো লোক কোনো ভবন বা বাসস্থানকে মালগুদাম কিংবা কারখানা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে অগ্নিনির্বাপণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিক বা দখলদার ভবনটির অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নি প্রতিরোধসহ অন্যান্য জননিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংযোজন বা সংশোধন করতে বাধ্য থাকবেন।
নতুন ভবনটির অগ্নি নির্বাপণের ক্ষেত্রে অনুপযোগিতার কারণে ব্যবহার উপযোগী নয় মর্মে মহাপরিচালক ঘোষণা করতে পারবেন।
কোনো ব্যক্তি লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হয়ে যদি কোনো ভবন বা স্থানকে মালগুদাম বা কারখানা হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে তিনি অন্যূন ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।