নামাজের বিশেষত্ব ও গুরুত্ব

Author Topic: নামাজের বিশেষত্ব ও গুরুত্ব  (Read 2582 times)

Offline shilpi1

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 135
    • View Profile
 নামায ফার্সী শব্দ। এর আরবি হলো ‘সালাত’। নামায বা সালাত কায়েম করা প্রত্যেক বয়স্ক ও বুদ্ধিমান মুসলমানের জন্য ফরজ বা অবশ্য-কর্তব্য। নামায এক প্রকারের নেয়ামত। এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম দোয়া বা প্রার্থনা। মানুষের জন্যে এই প্রার্থনার বিধান দান করে আল্লাহ্ তাআলা মানুষের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করেছেন। নামাযের মাধ্যমে আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারি; পাপ হতে মুক্তি লাভ করতে পারি। নামায মানুষকে খারাপ কাজ, খারাপ কথা-বার্তা, লজ্জাহীনতা, অশ্লীলতা, বিদ্রোহ প্রভৃতি হতে রক্ষা করে। নামায বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পাথেয়- মু’মিনদের মে’রাজ। নামায বেহেশ্তের চাবি। একে ধর্মের স্তম্ভ বলা হয়।

আল্লাহ্ তাআলা কুরআন করীমে বলেছেন- (উচ্চারণ : ইন্নাস্ সালাতা তান্হা ‘আনিল্ ফাহ্শায়ে ওয়াল মুনকার)

অর্থঃ “নিশ্চয় নামায (নামাযিকে) অশ্লীলতা এবং মন্দকাজ হতে মুক্ত করে” (সুরা আনকাবূত : ৪৬)।

সুতরাং নামায পড়া সত্ত্বেও যদি কেউ সেই দোষ হতে মুক্ত না হয়, যেভাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, তার নামায প্রকৃত নামায নয়। নামাযের সাহায্যে আমাদের আত্মা সবল ও সুস্থ থাকে। আমরা অন্যায়, অশ্লীলতা এবং অমূলক সন্দেহ হতে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। যে সকল কু-অভ্যাস কিছুতেই দূর করা সম্ভব হয় না তা নামাযের মাধ্যমে বিশেষতঃ তাহাজ্জুদ নামাযের মাধ্যমে দোয়ার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। যে কেউ যে কোনো কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করার জন্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অতি অল্পকালের মাঝেই সে আশ্চর্য ফল পাবে।

নামায পড়া এবং নামায কায়েম করার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। নামায পড়ার মাঝে পূর্ণ মনোনিবেশ থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে, কিন্তু নামায কায়েম করার মাঝে কতগুলো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন- ক. বিনা ব্যতিক্রমে যথাসময়ে নামায আদায় করা; খ. ফরয নামায বা-জামাতে আদায় করা; গ. একাগ্রচিত্ততার সাথে ধীরস্থিরভাবে নামায আদায় করা; ঘ. নামাযে ব্যবহৃত দোয়া-কালামের অর্থ বুঝে নামায পড়া; ঙ. নামাযের মাঝে অন্তরের আবেগ-অনুভূতি নিজ ভাষাতেও ব্যক্ত করা এবং আল্লাহ্ তা’আলার কৃপা ভিক্ষা করা; চ. নিজের উপর মৃত্যুসম অবস্থা আনয়ন করা এবং মনে করা যে, আল্লাহ্ সবকিছু দেখতে পাচ্ছেন এবং তিনি সামনেই উপস্থিত আছেন এবং ছ. আল্লাহর সাহায্য এবং করুণার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। কুরআন শরিফে প্রায় ৮২ বার নামাযের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ হতেও নামাযের গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়।

আল্লাহ্তা’আলা বলেছেন : (উচ্চারণ : ওয়া’মুর আহ্লাকা বিসসালাতে ওয়াসতাবির ‘আলায়হা; লা নাস্আলুকা রিয্কান্; নাহনু নারযুক্বুকা; ওয়াল ‘আকিবাতু লিত্তাক্ওয়া)

অর্থ : এবং তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের তাগিদ করতে থাকো। আমরা তোমার নিকট কোন রিয্ক চাই না, বরং আমরাই তোমাকে রিয্ক দিচ্ছি। বস্তুত তাক্ওয়া অবলম্বনকারীদের জন্যই উত্তম পরিণাম (সুরা ত্বাহা : ১৩৩)।

অনেকে মূর্খতাবশতঃ নামাযকে একটা ট্যাক্স বলে মনে করে। আল্লাহ্তা’আলা উপরোক্ত আয়াতে এরূপ ধারণার খণ্ডন করেছেন। বস্তুত আমরা নশ্বর দেহের জন্য যেমন নানাবিধ যত্ন নেই, সেরূপ আত্মার জন্যেও যত্নের আবশ্যক। বরং আত্মা যেহেতু চিরস্থায়ী, সেজন্য দৈহিক যত্নের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে আত্মার খাদ্য তথা নামযের মাধ্যমে আমরা আত্মাকে সতেজ এবং অটুট রাখতে পারি। মোটকথা, নামায মানুষের উপর কোনো প্রকার ট্যাক্স নয়, বরং এ আত্মার জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নামাযের মর্মার্থ না বুঝে অনেকে লোক দেখানোর জন্য নামায পড়ে থাকে। এরূপ নামাযি সম্বন্ধে আল্লাহ্তা’আলা বলেছেন- (উচ্চারণঃ ফাওয়ায়্লুল্লিল্ মুসাল্লিনাল্লাযীনা হুম আন্ সালাতিহিম্ সা-হূন)

অর্থ : সুতরাং দুর্ভোগ সে সব নামাযিদের জন্যে যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন (সুরা মাউন : ৫-৬)

হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ “নামায মুমিনের মিরাজস্বরূপ”। দৈনিক পাঁচবার নামাযের মাধ্যমে মু’মিন আল্লাহর সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে পারে। এছাড়া সে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাযের মাধ্যমে রাত্রির নিস্তব্ধতার মাঝে আল্লাহর অতি নিকটে আসতে পারে এবং বিশেষ সাক্ষাৎ লাভ করতে পারে। তখন মু’মিন তার মর্মজ্বালা আল্লাহ্র দরবারে নিঃশেষ করে দেয় এবং আল্লাহ্র য্কিরের (স্মরণের) মাধ্যমে এক অনাবিল শান্তি লাভ করে। ফলে তার বিপদ-বিক্ষুদ্ধ অশান্ত হৃদয়ে শান্তি ফিরে আসে।

সেজন্যে আল্লাহ্তা’আলা বলেছেন- (উচ্চারণ : আলা বি যিক্রিল্লাহি তাত্মায়িন্নুল্ কুলূব)

অর্থ : স্মরণ রেখো! আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে (সুরা রা’দ : ২৯)।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) অধিক পরিমাণে রাত্রি জাগরণ করে নামায পড়তেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : (ইন্না রব্বাকা ইয়া'লামু আন্নাকা তাকূমু আদ্না মিন সুলুসায়িল্লাইলে ওয়া নিস্ফাহূ সুলুসাহূ ওয়া তায়িফাতুম্ মিনাল্লাযীনা মা'আকা)

অর্থঃ নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক জানেন, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো রাত্রের দুই-তৃতীয়াংশের কিছু কম এবং কখনো অর্ধেকাংশ এবং কখনো বা এক তৃতীয়াংশ এবং (দাঁড়িয়ে থাকে) তাদের এক দলও যারা তোমার সাথে রয়েছে। (আল্ মুয্যাম্মিল : ২১)

ফরজ নামায জামাতে পড়তে হবে। কারণ তাতে শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণই নয়, সামগ্রিক কল্যাণ লাভ করা যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘জামাতে নামায আদায় করলে সাতাশ গুণ সওয়াব হয়।' এতদ্দ্বারা আমরা জামাতে নামাযের গুরুত্ব বুঝতে পারি। মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের মাঝেই শান্তি নিহিত। ফরজ ছাড়া অন্যান্য নামায ব্যক্তিগতভাবে একা পড়তে হয়। ঈদের নামাযও জামাতে পড়তে হয়। এরূপে নামায আমাদেরকে আল্লাহ্র সমীপে ব্যক্তিগতভাবে এবং সম্মিলিতভাবে উপস্থিত করে। বছরে দু’বার ঈদের নামায, প্রতি সপ্তাহে একবার জুমু’আর নামায, প্রত্যহ পাঁচবার ফরজ নামায, গভীর রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায- এ সকল উপাসনার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সংশোধিত হতে পারে এবং সত্যিকার অর্থে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

সর্বোপরি বলা যায়, নামাযের মাধ্যমে ইতায়াত বা আজ্ঞানুবর্তিতার শিক্ষা লাভ করা যায়। তাছাড়া নেতার অধীনে চলা, সময়ানুবর্তিতা, সামাজিক সাম্য, একতা ও ভ্রাতৃত্ব, দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা, একাগ্রচিত্ততা, পাপবর্জন এবং পুণ্যার্জন, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং নিদর্শন লাভ করা, সামাজিক কদাচার পরিহার, শান্তি ও সুস্থির মনোভাব, কষ্ট-সহিষ্ণুতা এবং সময়ের সদ্ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে নামাযে বহু শিক্ষা রয়েছে।