সরকারি-বেসরকারি চাকরি ছাড়াও বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানে নিজেদের যুক্ত করে এ দেশের নারীদের মর্যাদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিবার ও সামাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নারী অধিকার। নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার যে প্রত্যাশা তা যেন দিন দিন এগিয়ে চলছে। যার প্রমাণ নওগাঁর সফল নারী লিপি সাহা।
লিপি সাহা নওগাঁ শহরের চিকিৎসক কৃষ্ণ কোমল সাহার স্ত্রী। একজন গৃহিনী তিনি। দুই সন্তানের জননী। সংসারের আর্থিক কোন সংকট না থাকলেও একান্ত শখের বশেই ২০০৩ সালে কুটির শিল্পের কাজ শুরু করেন। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। প্রথমে বুটিকের কাজ দিয়ে তার কার্যক্রম শুরু হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনি এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পান।
এরপরই বেশ কিছু পিছিয়ে পড়া মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি মহিলা সমিতি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সাথে যুক্ত হয়ে সেখান থেকেও এ বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন।
শুরুতে নিজ বাসায় এই কার্যক্রম শুরু করেন লিপি সাহা। ব্যবসায় প্রসার বৃদ্ধি পেলে শহরের গীতাঞ্জলী শপিং কমপ্লেক্সে একটি শো-রুম নিয়ে ‘সানন্দা বুটিক এন্ড বিউটি পার্লার’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বর্তমানে তার তৈরিকৃত শাড়ী, থ্রিপিচ, বেডকভার, কুশনকভার এবং বিভিন্ন আকর্ষনীয় শোপিচ নওগাঁসহ বগুড়া এবং ঢাকার বিভিন্ন হ্যান্ডিক্র্যাফট শো-রুমে সরবরাহ হয়ে থাকে। এছাড়াও তার এ প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতকৃত মালামাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকে।
‘সানন্দা রান্নাঘর’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন লিপি। সেখানে মেয়েদের সময়োপযোগী এবং আধুনিক রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়।
সংসারের পাশাপাশি এ আত্মকর্মসংস্থানে কেবল লিপি নিজেই লাভবান হচ্ছেন না, বরং অনেক নারীও জীবিকা নির্বাহের পথ খুজে পেয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে বিধাবা, স্বামী পরিত্যাক্তা এমনকি নিম্নবিত্ত ছাত্রীরাও কাজ করছেন। নিজেদের সংসার পরিচালনা করে তারা অবসর সময়ে এ কাজ করেন। এতে সংসারেও আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছেন তারা।
এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন নারী সেখানে কাজ করে মাসে কমপক্ষে জন প্রতি ১ হাজার টাকা করে আয় করছেন।
এ উদ্যোগকে সম্প্রসারিত করতে লিপি সাহা প্রশিক্ষন গ্রহনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ঋন গ্রহন করেছেন। যা দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে গেছেন তিনি।
সব খরচ বাদ দিয়ে লিপি সাহা প্রতিমাসে ৭০/৮০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। তার স্বামীর আয়ের সাথে যুক্ত হয়ে সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার পথ সুগোম হয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এক অনুকরনীয় নারী হিসেবে।
লিপি জানান, ছোট থেকেই এসব কাজের প্রতি ছিল আগ্রহ ছিল তার। শখের বশে এ কাজে যুক্ত হলেও পরবর্তীতে আরো উৎসাহিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সৈয়দা দিলরুবা আকতার বলেন, “লিপি খুবই উদ্যোমী একজন নারী। তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর এ কাজে একান্ত একাগ্রতা তাকে এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে।”
‘সানন্দা বুটিক হাউস’ এখন নওগাঁর এক সুপরিচিত নাম। এখানকার তৈরি শাড়ি, থ্রিপিচ ও অন্যান্য সামগ্রী রুচিশীল এবং মানসম্পন্ন।
বাআরা/এআইএম/এএ