কপিরাইট আইন কি ও কেন?
কপিরাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইন কোন দেশের সরকার কর্তৃক আইন সভা বা সংসদ হতে পাশ হবার পর আইনে পরিণত হয়। কপিরাইট দ্বারা লেখকর মেীলিক সৃষ্টিকর্মের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করা হয়।কপিরাইট মূলত “লেখকের তার মেীলিক রচনার জন্য স্বত্ব প্রদান এবং বিনা অনুমতিতে যে কোন ধরনের পৃন:মুদ্রণ, অনুবাদ বা অনুলিপি নিবৃত্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা”। কপিরাইট এক কথায় “লেখকের অধিকার” বোঝায়। কপিরাইট আইন দ্বারা লেখক ও অন্যান্য মেীলিক কর্মের সৃষ্টিকর্ম সুরক্ষিত হয়।
কপিরাইট আইনের সাহায্যে গ্রন্থাগার বা প্রকাশককে মুদ্রিত বই ইত্যাদির নিজ খরচে আইনে উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে এক বা একাধিক কপি সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট এক বা একাধিক গ্রন্থাগারে বিনামূল্যে প্রেরণ করতে হয়।
কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমান যুগে কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা অসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না।কপিরাইটের অধিকারী লেখক, শিল্পীদের নানাবিধ সুবিধা ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়।যেমন:
১. লেখক নির্বিঘ্নে নতুন জ্ঞানের সন্ধান করেন। তার লেখা আইন দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি আরো নতুন সৃষ্টির জন্য পরিশ্রম করেন।
২. লেখক, শিল্পীগণ তাঁদের কাজের জন্য সম্মানী পান, যা তাদের কাজে প্রেরণা যোগায়।
৩ লেখক, শিল্পীগোষ্ঠী তাদের সৃষ্টিকর্মের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।
৪. কপিরাইট আইন লেখক, শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা করে এবং দেশের সরকারের এটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাদের স্বাথরক্ষা করা।
৫. তাঁদের সৃষ্টিকর্ম অবৈধভাবে কেউ পরিবর্তন, পুন:মুদ্রণ বা নিজনামে ছাপাতে না পারে সে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় ও আইনের দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।
৬. সমাজের উন্নতি সাধিত হয়, সৃজনশীল কাজের বিকাশ ঘটে।
৭. আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন সকল দেশের জন্য সুফল এনেছে। অন্য দেশের সৃষ্টিকর্ম আরেক দেশে নিরাপত্তা পায়।
৮. সাহিত্য ও শিল্পকর্মের আদান-প্রদান ও বিনিময়ে অন্যদেশে যেমন তাদের রচনা ও শিল্পকর্মের চাহিদা সৃষ্টি হয়, তেমনি নিজ দেশে অন্যদেশের সাহিত্য ও শিল্পকর্মের আমদানি হয়।
বিভিন্ন দেশের কপিরাইট আইন
ইংল্যান্ড:
ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত কোন কপিরাইট আইনের অস্তিত্ব ছিল না। ১৭০৯ সালে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডে কপিরাইট আইন পাশ হয়। উক্ত আইনে সাহিত্য, নাটক, সঙ্গীত, রেকর্ড, চলচ্চিত্র, বেতার বার্তা, টেলিভিশন, সাময়িক পত্রিকা, ম্যাপ, সুরকার, চিত্র্রকর্ম, আলোকচিত্র, অপ্রকাশিত রচনা ইত্যাদি কপিরাইট আইনের আওতাভূক্ত হয়।
আমেরিকা:
১৭৯০ সালে সর্বপ্রথম আমেরিকায় কপিরাইট আইন পাশ হয়। এই আইনে বই, ম্যাপ ও চার্ট অন্তভূক্ত হয়।অন্যদেশের প্রকাশনা অবাধে প্রকাশনা শুরু হলে প্রবল আপত্তির ফলে ১৮৯১ সালে ‘চেজ এ্যাক্ট’ পাশ হয় যাতে বিদেশী লেখকদের কপিরাইট সুবিধা প্রদান করা হয়। ১৭৯০ এর আইন বহুবার সংশোধিত হয় এবং ১৯০৯ সালে নতুন সংশোধিত আইন পাশ হয়্
ভারত:
১৯১১ সালে ইংল্যান্ডের কপিরাইট আইন ভারতসহ ব্রিটিশ শাসিত সকল উপনিবেশে কার্যকর করা হয়। ১৯১৪ সালে এই আইন সংশোধিত হয় এবং স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ১৯৫৭ সালে স্বাধীন ভারতে নতুন কপিরাইট আইন পাশ হয়।
বাংলাদেশ:
“বাংলাদেশ কপিরাইট আইন ২০০০”। এই আইনটি ১৮ জুলাই, ২০০০ সালে পাশ হয় এবং বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের “কপিরাইট আইন(১৯৭৪)” তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারিকৃত কপিরাইট আইন ১৯৬২ সনের সংশোধিত রূপে কার্যকর ছিল। তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের জারিকৃত ১৯৬২ সনের কপিরাইট আইনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এক সংশোধনীর মাধ্যমে “বাংলাদেশ কপিরাইট আইন-১৯৭৪ “ হিসেবে প্রচলন করা হয় এবং ১৯৭৪ হতে ২০০০ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল।