ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাই ধূমপানের মতো মারাত্মক অভ্যাস থেকে বাঁচার জন্য এ যাবৎকাল চেষ্টারও কমতি হয়নি। কিন্তু ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর এর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে তুলতেও নানা উপায় অবলম্বন করে ধোঁয়া সেবনকারীরা।সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকের ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর স্বাস্থ্য মোটা হয়ে যায়। মেদ বেড়ে যায়। কিন্তু এ অভ্যাস ছাড়ার সাথে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক বা কারণ কি তা নিয়ে এখনও কোনো যথার্থ উত্তর পাওয়া যায়নি।চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এ নিয়ে অনেক চেষ্টা, জল্পনা কল্পনা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এর কারণ মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এটা সবাই জানলেও এই অভ্যাসটা ছেড়ে দেওয়া এত সহজ নয়। অনেকের মনে ভয়, ধূমপান ছেড়ে দিলে যদি ওজন বেড়ে যায়! বাস্তবিকই আতঙ্কটা অযৌক্তিক নয়।এ সমীক্ষায় দেখা যায়, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর ৮০ শতাংশ মানুষের ওজন বেড়ে যায় গড়ে ৭ কিলোগ্রাম। এটা অনেক বেশি এবং হতাশাব্যঞ্জক।ধূমপানের রেশ কাটিয়ে তুলতে সিগারেটের বদলে চকলেট ও আইসক্রিমের দিকে হাত বাড়ায় অনেক প্রাক্তন ধূমপায়ী। আবার অনেকে পান খাওয়া শুরু করেন। সাধারণত এমনটিই করা হয়। আসলে কিন্তু বিষয়টি সব সময় তা নয়।দেখা গেছে, প্রাক্তন ধূমপায়ীদের মধ্যে যাদের খাদ্যাভ্যাসে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বা মিষ্টিপ্রীতি বাড়েনি, তাদের অনেকেও মেদ বৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা পাননি। আসলে ব্যাপারটি অন্য জায়গায়। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ফলে মানবদেহের অন্ত্রের গতিপ্রকৃতি ও প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটার ফলেই এমনটি হতে পারে।
শুধু ক্যালরি দায়ী নয়
ওজন বেড়ে যাওয়ার জন্য শুধু ক্যালরি দায়ী নয়। সুইজারল্যান্ডের একদল গবেষক এমনটিই মনে করেন। তাদের মতে, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ফলে আন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে। এ কারণে মানুষের ওজন বৃদ্ধি পায়। জুরিখ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন।ওই সমীক্ষীয় ধূমপায়ী, অধূমপায়ী এবং যারা সদ্য ধূমপান ছেড়েছেন তারা অংশগ্রহণ করেন। নয় সপ্তাহ ধরে অংশগ্রহণকারীদের মল, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীদের অন্ত্রাশয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু যারা সদ্য ধূমপান ছেড়েছেন তাদের অন্ত্রে হঠাৎ কিছু ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটতে দেখা যায়। যাদের বৈজ্ঞানিক নাম হলো প্রোটেও ব্যাকটেরিয়া ও ব্যাকটেরোইডেটেস। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য স্থূলাকৃতির মানুষের অন্ত্রে লক্ষ করা যায়। তবে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর এসব ব্যাকটেরিয়ার ফলে ৮০ শতাংশ মানুষের ওজন বেড়ে যায় গড়ে ৭ কিলোগ্রাম।
দায়ী ব্যাকটেরিয়া
ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, এসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে আগের চেয়ে বেশি খাওয়া দাওয়া না করলেও ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর অনেক মানুষ মোটা হয়ে যান।সমীক্ষাটির প্রধান গেয়ারহার্ড রগার বলেন, “আমাদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই নবাগত ব্যাকটেরিয়ারা অন্তত ছয় মাস ধরে অন্ত্রে ঘাঁটি গেড়ে বসে। এই অবস্থাটা কতদিন থাকে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলি আবার চলে যায় কিনা, তা অবশ্য আমরা এখনও জানতে পারিনি।”রগার জানান, অন্ত্রের কিছু ব্যাকটেরিয়া খাবার থেকে দক্ষতার সাথে শক্তি ব্যবহার করতে এবং মেদকোষে জমাতে পারে। এর ফলে মানুষের পেট ও নিতম্ব ভারি হয়ে যায়।
লস অ্যাঞ্জেলেস-এর কেডার্স সিনাই মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, কোনো মানুষের মোটা হওয়ার ধাঁচ আছে কিনা, তা অনেকটা নির্ভর করে আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়ার ওপর।
গবেষকরা এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন, এইসব করিতকর্মা ও মেদবর্ধক ব্যাকটেরিয়াকে দূর করা যায় কীভাবে। কারণ আগে থেকেই স্থূলাকায় মানুষের বেলায় নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে যেভাবে কাজ করে থাকে তাতে তাদের শারীরিক অবয়ব আরো বেড়ে যায়।