আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ আমাদের জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষণ করতে পারছি আমরা। কিন্তু এতে কি আমরা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য নিজেদের স্মৃতিতে রাখার প্রবণতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি? বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কে সংরক্ষিত এসব তথ্য আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী নিখুঁতভাবে পেয়ে যাচ্ছি। যেমন: আগে আমরা অনেক টেলিফোন নম্বর মনে রাখতাম। এখন মুঠোফোনেই সব রাখা যায়, মনে না রাখলেও চলে। কিন্তু এতে কি আমাদের সহজাত স্মৃতিশক্তির ব্যবহার আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে?
যুক্তরাজ্যের লেখক ও সাংবাদিক কোরি ডকটর ২০০২ সালে বলেছিলেন, তাঁর ব্লগটি কোনো কারণে হারিয়ে গেলে অর্জিত অনেক জ্ঞান ও স্মৃতিও হারিয়ে যাবে। কারণ, এই ব্লগের সাহায্যে তিনি জীবনের বিভিন্ন ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে মনে করতে পারেন।
একই ধরনের ভয় তো আমাদেরও আছে। ব্যস্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষক জেমস গিওর্দানো বলেন, মানুষ এখন কোনো বিষয়ে অস্পষ্ট জ্ঞান রাখে এবং প্রয়োজনমতো সেই জ্ঞান ব্যবহার করে পুরো বিষয়টি জেনে নেয়।
ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যম (সার্চ ইঞ্জিন) গুগলের কারণে মানুষের তথ্য সংরক্ষণের সামর্থ্য পরিবর্তন নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁদের মতে, এ যুগের মানুষ কোন তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে তা জানে, কিন্তু তথ্যটি জানে না। এ ছাড়া যখন কেউ বুঝতে পারে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে, তখন সে বিষয়টি আর মনে রাখার প্রয়োজন মনে করে না।
অনেকেই মনে করেন, অনেক বেশি তথ্যে মস্তিষ্ক ভারাক্রান্ত না করে প্রয়োজনীয় অংশটুকু জেনে বাকিটার জন্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতাই ভালো। এতে মস্তিষ্ককে গঠনমূলক চিন্তায় ব্যবহারের সুযোগ থাকে বেশি। এ ধরনের চিন্তা যাঁরা করেন, তাঁরা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের স্মৃতির (হার্ডডিস্কের) মতো মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে তো তা নয়। মানুষের স্মৃতি ও কম্পিউটারের স্মৃতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। কম্পিউটারের স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা নির্দিষ্ট হলেও মানুষের সেই ক্ষমতা অসীম।
প্রযুক্তির কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ গবেষক বলেন, প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারই একজন মানুষের স্মৃতিশক্তির বিকাশ ও পরিচর্যার বিষয়টি নির্ধারণ করে। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির জানা উচিত, তাঁকে নিজের স্মৃতিতে কোন বিষয়টি রাখতে হবে আর কোনটি বর্জন করতে হবে। আর প্রযুক্তি মানুষের জানার পরিধিকে যে বিশালতা দিয়েছে, তার পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।