ধোনিদের চেয়েও এগিয়ে নাসির!

Author Topic: ধোনিদের চেয়েও এগিয়ে নাসির!  (Read 951 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
অস্ট্রেলিয়ার ছিল মাইকেল বেভান, মাইকেল হাসি। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস, ল্যান্স ক্লুজনার। শ্রীলঙ্কার রাসেল আরনল্ড। ভারতের আছে মহেন্দ্র সিং ধোনি, ইংল্যান্ডের এউইন মরগান। পাকিস্তানের আবদুল রাজ্জাক, উমর আকমল। প্রথাগত অর্থে না হলেও একই ভূমিকার কারণে এখন এই দলে রাখা যায় মিসবাহ-উল-হককেও। আর বাংলাদেশের আছে নাসির হোসেন!
নামগুলো দেখেই বুঝে ফেলার কথা এই দলটির পরিচয়। দিনের পর দিন অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জিতিয়ে ক্রিকেট আঙিনায় মাইকেল বেভান উপাধি পেয়েছেন, ‘দ্য ফিনিশার।’ তবে নিজ দলে সবারই ভূমিকা ওই একই, খেলাটা ‘ফিনিশ’ বা শেষ করে আসা। পরশু যেমন শেষ করে এলেন নাসির। ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের মহামূল্য ইনিংসে বাংলাদেশের অসাধারণ রান তাড়ার ‘আনসাং হিরো।’
প্রশ্ন উঠতে পারে, ধোনি-বেভান-হাসিদের কাতারে কি আসলেই থাকতে পারেন নাসির? তর্কের অবকাশ অবশ্যই আছে। তবে পরিসংখ্যান যে একটা জায়গায় এগিয়ে রাখছে নাসিরকেই! রান তাড়ার হিসাবি ব্যাটিংয়ে নাসির নায়ক মানেন মাইকেল হাসিকে। নিজের সেই নায়কের চেয়েও এগিয়ে আছেন নাসির। ফিনিশারের ভূমিকায় এগিয়ে আছেন আসলে ওপরের সব কটি নাম থেকেই। রান তাড়া করে জয় এনে দেওয়ার ম্যাচে ধোনি-বেভানদের চেয়েও যোজন-যোজন এগিয়ে নাসিরের ব্যাটিং গড়!
পরশুর ম্যাচের পর দলে জয়ের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে নাসিরের ব্যাটিং গড় ১১৭। ধোনির গড় এখানে ১০১.২৮। অবাক হতে পারেন, ফিনিশার হিসেবে তেমন নামডাক না থাকলেও এখানে অনেকের চেয়েই এগিয়ে আরনল্ড, গড় ৯১.০০। আপাতত সাবেক এই লঙ্কান ব্যাটসম্যানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন ছোট আকমল (৮৯.৮০)। বেভানের (৮৬.২৮) থেকে সামান্য এগিয়ে মরগান (৮৬.৬১)। মিসবাহর ৮৫.৮৯। নাসিরের নায়ক মাইকেল হাসির ৭৪.১০। রাজ্জাক (৬৮.৮৬), রোডস (৬২.০২) অনেক পেছনে। আর ১৯৯৯ বিশ্বকাপের কল্যাণে রান তাড়ার নায়কদের মধ্যে স্থায়ী জায়গা করে নেওয়া ক্লুজনারের গড় এখানে পঞ্চাশেরও নিচে (৪৭.৭৩)।
এই পরিসংখ্যানের মানে অবশ্যই এটা নয় যে বেভানের চেয়ে ভালো ফিনিশার ছিলেন আরনল্ড। কিংবা এই একই কাতারে চলে এসেছেন নাসির। তবে এই পরিসংখ্যান দিচ্ছে ইঙ্গিত, জানাচ্ছে সম্ভাবনা। গত এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ৫৮ বলে ৫৪, পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬১ বলে অপরাজিত ৩৬, গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ম্যাচে মহামূল্য অপরাজিত ৩৯, পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ম্যাচে ২৭ বলে অপরাজিত ৩৩, কিংবা পরশুর ইনিংস। ছোট্ট ক্যারিয়ারেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া দারুণ সব ইনিংস উচ্চ স্বরে ঘোষণা করছে, নাসিরই বাংলাদেশের ধোনি-বেভান।
নাসির নিজেও দারুণ উপভোগ করছেন ফিনিশারের ভূমিকা, ‘আমি সব সময় উপভোগ করি এই ভূমিকা। হয়তো এসব জায়গায় ব্যাটিং করলে আমি এক শ-দেড় শ করতে পারব না, খুব ভালো খেললেও হয়তো ৭০-৮০ হবে। কিন্তু আমি জানি আমার রান দলকে জেতাবে, দলের কাজে লাগবে।’
এমনিতে রাতারাতি কেউ ফিনিশার হয়ে উঠতে পারে না। নাসির সেখানে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই ভূমিকায় সফল! তবে নাসির জানালেন, তাৎক্ষণিক কোনো রেসিপিতে নয়, এই কাজে তিনি আগে থেকেই অভ্যস্ত, ‘অনূর্ধ্ব-১৩ বলুন, অনূর্ধ্ব-১৫, এ রকম পরিস্থিতিতেই আমি অনেকবারই ব্যাটিং করেছি। তামিম ভাই যেমন এখানে ভালো করতে পারবে না, আমিও আবার ওপেনিংয়ে ভালো করতে পারব না। একেকজনের ধরন একেক রকম। আমি এই জায়গায় এত ব্যাটিং করেছি যে আমার কাছে খুব কঠিন মনে হয় না।’
পরশুই যেমন বিশ্বাস ছিল, দলকে জিতিয়েই আসবেন। প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি বলে বাসার অনেকে, বন্ধু-বান্ধবরা বলাবলি করছিল রান নেই ব্যাটে। অথচ দুই ম্যাচ আগেই, জিম্বাবুয়ে সিরিজে করেছিলেন ৬৮, ৩৬ ও ৬৩।
কাজটা মহাগুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ঠিক ‘গ্ল্যামারাস’ নয়। বড় ইনিংস খেলে মূল নায়ক হওয়ার সুযোগ যে কম! এই আক্ষেপ একটু পোড়ায়ও। তবে পরক্ষণেই উবে যায় সেই ভাবনা, ‘যখন দেখি আমার সঙ্গে টেলএন্ডার ব্যাটিং করছে, মাঝে মাঝে মনে হয় যে ওপরে ব্যাটিং করলে হয়তো এক শ হতো বা আরও বড় কিছু। কিন্তু আমার সমস্যা নেই। কপালে থাকলে সেঞ্চুরি হবে। আমি নিজের কাজটা করে যেতে চাই। আমার কাজ প্রথমে ব্যাট করলে দলকে ভালো স্কোর এনে দেওয়া, পরে ব্যাট করলে দলকে জেতানো।’
সেটা ভালোই করছেন বলেই তিনি আমাদের ধোনি-বেভান। কে জানে, একদিন হয়তো সত্যিই থাকবেন বেভানদের কাতারেই!
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy