যাঁরা ওজন নিয়ে ভাবেন বা চিন্তিত, তাঁদের কাছে ‘ক্রাশ ডায়েট’ শব্দটি অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয়। অথচ অনেকেই বুঝতে পারেন না বা জানেন না, এটা কী ধরনের ডায়েট এবং এটা কীভাবে শুরু করতে হয়। ফলাফল না জেনেই অনেকে শুরু করেন এই ডায়েট।

ক্রাশ ডায়েট জনপ্রিয় হলেও এটা বিপজ্জনক ডায়েট হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে মানুষকে জানানো হয়, সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ কেজি অথবা মাসে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন কমানো যায়। এটি আসলে ভিত্তিহীন।
অতিরিক্ত বা কঠোর খাদ্যনিয়ন্ত্রণের (প্রায় না খেয়ে থাকা) ফলে ওজন দ্রুত কমবে ঠিকই, কিন্তু এ কারণে শরীরের পুষ্টিঘাটতি প্রকট আকারে দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রাশ ডায়েটের ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ হয় ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী সময়ে খুব কম সময়ের মধ্যে আবার আগের ওজন ফিরে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওজন আগের ওজনের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ে।
ক্রাশ ডায়েট অনেক রকমের হয়ে থাকে—
১. লিক্যুইড প্রোটিন ডায়েট: এই ডায়েটে শুধু মুরগির স্যুপ থাকে। এই ডায়েটে সারা দিনে মোট ৩০০ ক্যালোরির বেশি থাকে না।
২. এটকিন ডায়েট: একে ফ্যাশনেবল ডায়েট বা নো কার্ব ডায়েটও বলা হয়। এতে থাকে ডিম, মাছ, মাংস, দুধ। কোনো রকম শর্করা যেমন: ভাত, রুটি, আলু ও চিড়া এতে নেই। দীর্ঘদিন এই ডায়েট চলতে থাকলে দেহে কিটোঅ্যাসিডোসিস হয়ে থাকে। মাথাব্যথা, দুর্বলতা, বমিভাব, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এই ডায়েটের ফলে হয়ে থাকে।
৩. লো ফ্যাট ডায়েট: এই ডায়েটে তেল-চর্বি একেবারেই থাকে না। রান্নায় তেল বাদ দেওয়া হয়। এমনকি মাছ-মাংসও কম থাকে। সারা দিনে ১০-১২ গ্রামের বেশি প্রোটিন থাকে না। এতে শরীরে আমিষের অভাব হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৪. ফ্রুটস ডায়েট বা কলা ডায়েট: শুধু ফল ও সবজি খেয়ে এই ডায়েট করা হয়। প্রতি বেলায় ছয় থেকে আটটি কলা খাওয়া হয়। এই ডায়েটের ফলে শরীরে শর্করা ও আমিষের অভাব হয়।
সামনে কোনো অনুষ্ঠান বা বিশেষ কারণে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে ক্রাশ ডায়েট করতে পারেন। তবে এই ডায়েট অবশ্যই ১০ দিনের বেশি করা উচিত নয়। খুব বেশি দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলতে গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছাড়াও বাহ্যিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন: ক্রমাগত মাথা ঘোরা, ঘুম না হওয়া, পেটে ব্যথা, পেট খারাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি। কাজকর্মে উৎসাহ না পাওয়া, সবকিছুতে আগ্রহ হারানো। এ ছাড়া চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়া অথবা ত্বকের সজীবতা হারানো ইত্যাদি সমস্যা হয়।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, প্রতিটি ক্রাশ ডায়েটেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। একান্ত জরুরি না হলে ক্রাশ ডায়েট মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। মনে রাখতে হবে, এটা সব সময়ের ডায়েট হতে পারে না।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল