সাধারণ চিনি হচ্ছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের একটি যৌগ। চিনিতে এই দুই ধরনের শর্করা ৫০: ৫০ অনুপাতে থাকে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মিষ্টি, মিষ্টান্ন দ্রব্য বা সোডা ও কোমল পানীয় তৈরিতে সাধারণ চিনির বদলে ব্যবহূত হয় ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ, যাতে ফ্রুক্টোজের পরিমাণ গ্লুকোজের চেয়ে অনেক বেশি। গ্লুকোজ আমাদের শরীরে শক্তির প্রধানতম উৎস। দেহের প্রায় প্রতিটি কোষ গ্লুকোজ ব্যবহার করে ক্যালরি উৎপন্ন করে। কিন্তু ফ্রুক্টোজ ব্যবহূত হয় কেবল যকৃতে। আর আমাদের যকৃৎও অতিরিক্ত বা অনাবশ্যক ফ্রুক্টোজ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়।
বিষয়টি প্রথম বিজ্ঞানীদের নজরে আসে ২০০৮ সালের দিকে। দেখা যায়, গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ—দুটিই শর্করা হলেও শরীরে দুভাবে এরা কাজ করে। খাদ্য থেকে আহরিত প্রায় সব গ্লুকোজ বিভিন্ন কোষে ব্যবহূত হয়ে যায়, বাকিটা ইনসুলিন ভেঙে ফেলে এবং মাত্র ২০ শতাংশ যকৃতে গিয়ে চর্বি হিসেবে জমা হয়।
কিন্তু ফ্রুক্টোজের ১০০ শতাংশই যকৃতে গিয়ে ফ্যাটি অ্যাসিড, ট্রাইগ্লিসারাইড, ভিএলডিএল ইত্যাদি ক্ষতিকর চর্বিরূপে জমা হতে থাকে। আপনি যদি ১২০ ক্যালরি গ্লুকোজ খান, দিনের শেষে তার মোটে এক ক্যালরি চর্বিরূপে জমা হয়। কিন্তু ১২০ ক্যালরি ফ্রুক্টোজের প্রায় ৪০ ক্যালরি শেষ পর্যন্ত চর্বিতে পরিণত হয়। যকৃতে জমা হওয়া অতিরিক্ত চর্বি ধীরে ধীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়, রক্তচাপ ও হূদেরাগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এ ছাড়া গ্লুকোজ যদিও তৃপ্তি হরমোনগুলোকে উদ্দীপ্ত করে, ফ্রুক্টোজ করে ঠিক তার উল্টোটা। তাই ফ্রুক্টোজ বেশি খেলে খিদে বা খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়ে, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
তাই মিষ্টি মানেই কিন্তু মিষ্টি নয়।