ইডেনে শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ী টেস্টে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ব্রায়ান লারাকে। লারা কলকাতা পৌঁছালেন ম্যাচের চতুর্থ দিনে, টেস্ট শেষ তিন দিনেই! খেলা দেখা হয়নি, তবে সিএবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লারা ও সৌরভ গাঙ্গুলী টেন্ডুলকারের অবসরসহ কথা বললেন অনেক প্রসঙ্গে। টেন্ডুলকার প্রসঙ্গে বলা কথাগুলো কলকাতার দ্য টেলিগ্রাফ-এর সৌজন্যে তুলে দেওয়া হলো এখানে
টেন্ডুলকারের অবসর—
ব্রায়ান লারা: কখন অবসর নেবে, এই সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়ার সম্মানটা শচীনের প্রাপ্য। বছরের পর বছর ধরে সে ভারতীয় ক্রিকেট ও বিশ্ব ক্রিকেটের সেবা করে গেছে দুর্দান্তভাবে। জীবনের ২৫টি বছর দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। ভ্রমণ ও অনুশীলন মিলিয়ে একটি টেস্ট ম্যাচ মানে আট দিনের ব্যাপার...এখন এই আট দিনকে ২০০ (টেস্টসংখ্যা) দিয়ে গুণ করে দেখুন! এরপর ওর খেলা ওয়ানডেগুলো যোগ করুন...ও এখনো দারুণ ফিট। যদিও গত দুই বছরের পারফরম্যান্স দারুণ কিছু নয়। আমার মতে, অবসরের জন্য একেবারে ঠিক সময়টিই বেছে নিয়েছে।
তবে এখানে বসে ধারণা করা মুশকিল, তরুণ ভারতীয় দলটির ওপর শচীনের প্রভাব কতটা...ড্রেসিংরুমে গিয়ে ছেলেদের কাছে জিজ্ঞেস করলে কিছুটা বোঝা যাবে! শুধু পরিসংখ্যানের মানদণ্ডে শচীনকে বিচার করা যাবে না।
আমি নিশ্চিত, ওয়াংখেড়ে টেস্টের পর ১৯ ও ২০ নভেম্বর সকালে ঘুম ভাঙার পর ওর মনে হবে...কী করা যায়! তবে মানিয়ে নেবে দ্রুতই। শুধু সফল ক্রিকেটারই নয়, শচীন একজন সফল মানুষ।
সৌরভ গাঙ্গুলী: আমি নিশ্চিত, ভারতীয় ক্রিকেট কোনো না কোনোভাবে ওকে কাজে লাগাতে চাইবে...ও এমনই অসাধারণ একজন ক্রিকেটার। অবসরের সিদ্ধান্তটাও দারুণ নিয়েছে, ওকে ঘিরে বিদায়ী আয়োজনটাও খুব ভালো হচ্ছে। ওর মতো একজন গ্রেটের এই সম্মানটা প্রাপ্য ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় অবসর নিয়ে বিদায়টা এমন রঙিন হতো না। হয়তো রান পেত, কিন্তু এখানে যে স্তুতি, ভক্তি, প্রশংসা পাচ্ছে, এসব সত্যিই বিশেষ কিছু। লারা যেমন বলল, গত বছর দুয়েক ফর্ম খুব একটা ভালো ছিল না, কিন্তু সে অমন সুযোগগুলো পেয়েছে সে শচীন টেন্ডুলকার বলেই। শচীনের জায়গায় আমি হলে হয়তো আরও বছর খানেক আগেই চলে যেতাম...কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ধারণা, সঠিক সময়েই ও যাচ্ছে।
শেষ টেস্টের আগে টেন্ডুলকারের মানসিকতা কেমন থাকবে...
লারা: এটা আসলে বলা কঠিন। হয়তো মনে মনে ওর ভাবা উচিত, ‘আমার নিজেকে প্রমাণের কিছু নেই...শেষ ম্যাচে একটা বড় স্কোর গড়তে পারলে দারুণ হবে। সেটির জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে...।’ অযথা বাড়তি চাপ নেওয়া উচিত হবে না ওর। নিজের অনুপ্রেরণাটা খুঁজে নেওয়া ওর জন্য এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমন যদি হয় যে চাপটাই অনুপ্রেরণা, তাহলে না হয় চাপেই থাকুক!
সৌরভ: আমার মতে, শেষ টেস্টে শচীন সেঞ্চুরি করতে পারল কি পারল না, তাতে কিছুই যায়-আসে না। সর্বকালের সেরাদের একজন হয়েই থাকবে। থাকবে একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন হয়ে।
সৌরভ গাঙ্গুলী ও ব্রায়ান লারা ভবিষ্যতে টেন্ডুলকারের কাছাকাছি থাকার সম্ভাবনা আছে যাঁর—
লারা: আমার মনে হয় না শচীনের কীর্তির কাছাকাছি যেতে বা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন কাউকে আমরা দেখব। পরিসংখ্যানের বিচারে হয়তো শচীনের চেয়ে ভালো কেউ থাকতে পারে...মোহাম্মদ আলীর চেয়েও ভালো রেকর্ড আছে, এমন বক্সারও আছেন। কিন্তু বক্সিং খেলাটা বলতে আমরা আলীকেই বুঝি। তেমনি বাস্কেটবল খেলাটা মানেও বুঝি মাইকেল জর্ডানকে। একইভাবে আমার কাছে ক্রিকেট মানেই শচীন।
লারার দেখা সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান?
লারা: পাঁচজনকে বেছে নেওয়া কঠিন...খুব বেশি না ভেবে বললে...শচীন, ভিভ রিচার্ডস, অ্যালান বোর্ডার, সৌরভ ও রিকি পন্টিং।